বৃষ্টি থামলেও আন্ডারপাস ডুবেই

এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কোথাও রেল লাইন কোথাও আবার স্টেশনের নীচেই রয়েছে সুড়ঙ্গপথ। আকাশে মেঘ দেখলেই আন্ডারপাস বলে পরিচিত সেই পথেই তৈরি হয় ‘আতঙ্ক’। সামান্য ভারী বৃষ্টিতেই জলবন্দি হয়ে পড়ে সেগুলি। জল সরানো নিয়েই ফি বছর পুরসভা ও রেলের মধ্যে চলে চাপানউতোর। ভোগান্তির সেই ছবি মঙ্গলবার ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।জল সরানো নিয়েই ফি বছর পুরসভা ও রেলের মধ্যে চলে চাপানউতোর। ভোগান্তির সেই ছবি মঙ্গলবার ঘুরে দেখল আনন্দবাজার

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০২:২৬
Share:

হাবুডুবু: এমনই হাল বেলুড় বহু আন্ডারপাসের। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

সাঁতরাগাছি

Advertisement

বৃষ্টি হলেই জল দাঁড়িয়ে থাকবে ঠায় কয়েক দিন। হাঁটু জল ভেঙেই স্টেশনে ঢুকতে-বেরোতে হবে যাত্রীদের। এটাই যেন ভবিতব্য দক্ষিণ পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি স্টেশনের আন্ডারপাসে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে এ বারও সেই চিত্রই ফিরে এল। মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি কমলেও সেই চিত্র বদলায়নি একটুও।

রেল সূত্রে খবর, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির সময়ে আন্ডারপাসটি বানানো হয়েছিল। রেলের জায়গায় আন্ডারপাসটি তৈরি করেছিলেন জাতীয় সড়ক কতৃর্পক্ষ। তবে আন্ডারপাসের বাইরের রাস্তা হাওড়া পুরসভার। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অবস্থানের জন্য আন্ডারপাসটি কার্যত ভাগের মা হয়ে গিয়েছে। কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না। দক্ষিণ পূর্ব রেলের বক্তব্য, আন্ডারপাসটি রেলের নয়, তবুও প্রতি বর্ষায় তাদেরই জমা জল পাম্প বসিয়ে বার করতে হয়। এ বারও তা করা হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘অতি বৃষ্টির জন্য রেলের দু’টি নয়ানজুলি কানায় কানায় পূর্ণ। তাই আন্ডারপাসের জল নামতে দেরি হচ্ছে। তবে কাল থেকেই একটি পাম্প চালানো হচ্ছে। সাঁতরাগাছি স্টেশন সম্প্রসারণের কাজ চলার সময় সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা আছে।’’

Advertisement

সাঁতরাগাছি

বেলুড়

এক হাতে সাইকেল, অন্য হাতে ছেলেকে ধরে রেললাইন পার হচ্ছিলেন চাঁদমারির এক বাসিন্দা। আচমকাই দেখলেন ডাউন লাইনে ছুটে আসছে ট্রেন। কোনও মতে সাইকেল ফেলে ছেলেকে নিয়ে লাফ মেরে বাঁচলেন তিনি। বৃষ্টিতে এমন বিভিন্ন আতঙ্কের ছবিই দেখা যায় বেলুড় স্টেশনে। কারণ, সামান্য বৃষ্টিতেও স্টেশনের আন্ডারপাস ডুবে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার অন্য জায়গা শুকনো হয়ে গেলেও আন্ডারপাসের জল নামে না। অগত্যা রেললাইন টপকেই যাতায়াত চলে। আরও অভিযোগ, রেলের পাম্প ঠিক মতো চলে না। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের দাবি পাম্প করে জল যে পাতকুয়োয় ফেলা হয়, তার থেকে জল বেরিয়ে যাওয়ার নালার মুখটি জমে গিয়েছে। ফলে জল খালে পড়ার বদলে উল্টে আন্ডারপাসেই চলে আসছে। তবে স্থানীয় কাউন্সিলর প্রাণকৃষ্ণ মজুমদারের দাবি, ‘‘রেলের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের জন্যই সমস্যা মিটছে না। বৃষ্টি হলেই জল জমে। তা বের করতে আমাদেরই পাম্প নিয়ে নামতে হয়।’’

নোয়াপাড়া

বৃষ্টি শুরু হলেই ‘জলবন্দি’ হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। এক দিন টানা বৃষ্টিতেই ডুবে যায় আন্ডারপাস। এ বারেও সেই ছবি বদলায়নি। ১৭, ১৮, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে অক্ষয়কুমার মুখার্জি রোডের আন্ডারপাসটির উপরে রয়েছে শিয়ালদহ ডিভিশনের রেল লাইন। পাশ দিয়ে গিয়েছে বাগজোলা খাল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বৃষ্টিতে খাল ভর্তি হলেই আন্ডারপাসও ডুবে যায়। খালের জল না নামা পর্যন্ত ডুবে থাকে। বাসিন্দা ও মেট্রো যাত্রীদের বি টি রোডের দিক থেকে মেট্রো স্টেশনের দিকে যেতে হলে ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইন পেরোতে হয়। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অঞ্জন পাল বলেন, ‘‘রেলকে বারবার বলা হয়েছে বেলঘরিয়া ও দমদমের দিকে লাইন উঁচু করতে হবে। তা হলেই আন্ডারপাসটিও উঁচু করা যাবে। কিন্তু পাঁচ বছর আগে রেলকর্তারা পরিদর্শন করলেও আর কিছু হয়নি।’’

নোয়াপাড়া

বেদিয়াপাড়া এবং দমদম

স্বল্প বৃষ্টিতে হাঁটুজল, ভারি বৃষ্টি হলে বাসের অর্ধেক ডুবে যায়। বেদিয়াপাড়া আন্ডারপাস বলতে এই ছবিটাই দেখতে অভ্যস্ত এলাকাবাসী। দমদম আন্ডারপাসে আবার বৃষ্টির প্রয়োজন পড়ে না। বছরের অন্য মরসুমেও জল জমতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। তবে মঙ্গলবার ওই দু’টি আন্ডারপাসেই জল জমেনি। কারণ, সমস্যা মেটাতে পুরবোর্ড পাম্পিং স্টেশন তৈরি করে সমাধানের চেষ্টা করেছে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আন্ডারপাসের জায়গা রেলের, পুরসভার নয়। তবুও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাম্প বসিয়ে জল বার করে বাগজোলা খালে ফেলা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন