বছর পার, রাজন্যের মৃত্যু এখনও রহস্যই

দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়েছে। তবে যেখান থেকে লড়াই শুরু হয়েছিল, এখনও সেখানেই আটকে বলে মনে করছেন রুচিরা সরকার। গত বছর নিজের ছেলেকে হারান বাঘা যতীনের বাসিন্দা রুচিরাদেবী। গড়িয়াহাটের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল রাজন্য। ২০১৪ সালের ৮ মে রহস্যজনক ভাবে স্কুলে মৃত্যু হয় ৬ বছরের ওই পড়ুয়ার। সে দিন দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্লাসে না ফেরায় খোঁজ পড়ে ছেলেটির।

Advertisement

সায়নী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০০:২৮
Share:

রাজন্য সরকার।

দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়েছে। তবে যেখান থেকে লড়াই শুরু হয়েছিল, এখনও সেখানেই আটকে বলে মনে করছেন রুচিরা সরকার।
গত বছর নিজের ছেলেকে হারান বাঘা যতীনের বাসিন্দা রুচিরাদেবী। গড়িয়াহাটের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল রাজন্য। ২০১৪ সালের ৮ মে রহস্যজনক ভাবে স্কুলে মৃত্যু হয় ৬ বছরের ওই পড়ুয়ার। সে দিন দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্লাসে না ফেরায় খোঁজ পড়ে ছেলেটির। পরে দেখা যায়, কম্পিউটার রুমে যাওয়ার করিডরে অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছে সে। তড়িঘড়ি স্কুলের মেডিক্যাল রুমে নিয়ে গেলে নার্সরা ‘পাল্স’ পরীক্ষা করে সঙ্গে সঙ্গে রাজন্যকে নার্সিংহোমে ভর্তির নির্দেশ দেন। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

Advertisement

ওই ঘটনায় স্কুলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছিল রাজন্যর পরিবার। তাঁদের মূল অভিযোগ ছিল, দীর্ঘক্ষণ সকলের অলক্ষে পড়ে না থাকলে ছেলেকে এ ভাবে হারাতে হত না। পরে স্কুলের বিরুদ্ধে রাজন্যর মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য লোপাটের অভিযোগের পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগও দায়ের করেছিলেন তাঁরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেন।

রাজন্যর মৃত্যুর পরদিন স্কুলের বাইরে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। রাজন্যর পরিজনদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুলের বাকি অভিভাবকেরাও। এর পরে জীবন পুরনো ছন্দে এগোয়নি রাজন্যর মা-বাবার লড়াই।

Advertisement

কী ভাবে ছেলের মৃত্যু হল, সেই রহস্যের তল খুঁজতে গত এক বছর ধরে এক নাগাড়ে থানা ও লালবাজার ঘুরতে হয়েছে রাজন্যর মা-বাবাকে। তাঁদের অভিযোগ, এখনও ছেলের মৃত্যু রহস্য সংক্রান্ত কোনও তথ্য হাতে পাননি। পুলিশের আশ্বাসেও আর ভরসা রাখতে পারছেন না। রুচিরাদেবী বলেন, ‘‘ছেলের মৃত্যুর পরে এক মুহূর্তও নষ্ট করিনি। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ও ফরেন্সিক রিপোর্ট পাওয়ার জন্য বারবার গড়িয়াহাট থানা ও লালবাজারের চক্কর কেটেছি। এক বছর ধরে শুনে এলাম, ছেলের রিপোর্টগুলি ডাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু রহস্য কাটেনি।’’

একই প্রশ্ন স্কুলের। স্কুলের অছি পরিষদের সদস্য কৃষ্ণ দামানি এ দিন বলেন, ‘‘এমন ভাবে ওইটুকু শিশুর মৃত্যু হল কেন, তা আমরাও জানতে চাই। রাজন্যর রিপোর্টগুলি তাড়াতাড়ি পেতে স্কুলের তরফেও বারবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবুও রিপোর্ট আসেনি। রাজন্যর পরিবার স্কুলের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। রিপোর্ট না আসার জন্য মামলাও ঝুলে রয়েছে।’’

ঘটনার এক বছর পরেও রাজন্যর ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক রিপোর্ট তার পরিবারের হাতে কেন পৌঁছল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের যুক্তি, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এসে গিয়েছে আগেই। তবে ফরেন্সিক রিপোর্ট আসেনি। গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘ফরেন্সিক রিপোর্ট আসেনি। তাই ময়না-তদন্তের রিপোর্ট সম্পূর্ণ নয়।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, সব রিপোর্ট এসে না পৌঁছলে, তদন্তের খাতিরে তা খাপছাড়া ভাবে পরিবারের হাতে দেওয়া হবে না। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘একাধিক বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ফরেন্সিক রিপোর্ট আসেনি। ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে লোক কম থাকায় ওদের কাজও খুব ধীর গতিতে এগোচ্ছে। শুধু এই রিপোর্টই নয়, আরও অনেক তদন্তের রিপোর্ট ওদের দেরির জন্য আটকে রয়েছে।’’ গোয়েন্দাপ্রধান জানান, রাজ্য সরকার এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অরুণকুমার শর্মা বলেন, ‘‘মিডিয়ার সঙ্গে কোনও কথা বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন