‘রাখালের’ বাঁশি শুনবে কলকাতা

নয় নয় করে ২৪টি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন তিনি। মার্কিন মুলুক থেকে সুইৎজারল্যান্ড— বহু দেশ ঘুরে অনুষ্ঠানও করেছেন।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৯
Share:

রঞ্জন জানা। ফাইল চিত্র

কলকাতায় এসে বাঁশি বাজাবেন রঞ্জন। সঙ্গে বাজাবেন কর্নেট, বেহালা, সানাই, সেতার, স্যাক্সোফোন, ক্ল্যারিওনেট, মাউথ অরগ্যান, দোতারা। বাজাবেন ঢাক, ঢোল, করতাল, মাদল, ধামসা, পাখোয়াজ, খোল।

Advertisement

নয় নয় করে ২৪টি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন তিনি। মার্কিন মুলুক থেকে সুইৎজারল্যান্ড— বহু দেশ ঘুরে অনুষ্ঠানও করেছেন। কিন্তু, একসঙ্গে এত যন্ত্র নিয়ে এই প্রথম। সেই অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নিয়েছেন কলকাতাকে। ৪ নভেম্বর রবীন্দ্রসদনে। মঞ্চে একের পর এক বাদ্যযন্ত্রে সুর ও তাল তুলবেন তিনি। সঙ্গী থাকবেন জনা পাঁচেক, সঙ্গত করার জন্য।

রঞ্জন আদতে পশ্চিম মেদিনীপুর শহরের উপান্তে আবাস এলাকার ছোট বাড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা। পুরো নাম রঞ্জন জানা। বয়স ৫০। অভাবের সংসারে শৈশব কেটেছে তাঁর। লোকের গরু চরাতে মাঠে নিয়ে গিয়ে দু’চার পয়সা রোজগার করতেন। এক সময়ে তাই রাখাল বালক হিসেবেই পরিচয় ছিল তাঁর। রঞ্জনের কথায়, ‘‘খিদেয় পেট চেপে বসে থাকতে হতো।’’

Advertisement

রথের মেলায় গুড়ের পাটালি কিনে খাওয়ার জন্য পয়সা দিয়েছিলেন বাবা। তখন বয়স ৮-৯ হবে। তার থেকে কিছুটা সরিয়ে বাঁশি কিনেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘ওই বাঁশি নিয়ে মাঠে মাঠে গরু চরানোর সময়ে বেসুরে বাজিয়ে যেতাম। বাঁশির সুরটাই ভাল লাগত।’’ বাঁশি কেনার বছর দু’য়েক পরে গ্রামেরই যাত্রা দলে মন্দিরা বাজানোর কাজের পাশাপাশি জুটে যায় বাঁশি শেখানোর ওস্তাদও।

রঞ্জনের দাবি, তাঁর বাঁশি শুনে মুগ্ধ শ্রোতাদের তালিকায় রয়েছেন উস্তাদ আমজাদ আলি খান, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও। ২০১৪ সালে বাঁশি শুনে এবং রঞ্জনের আর্থিক অবস্থার কথা জেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরির আশ্বাস দেন। রঞ্জন জানান, তিনি লেখাপড়া করেননি। ফলে, শিক্ষকতা করা হয়নি তাঁর। রঞ্জনের কথায়, ‘‘সরকারের অনুদান দেওয়ার কথাও উঠেছিল। আমি বলেছি, কাজ করে রোজগার করতে চাই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই ২০১৬ সাল থেকে শালবনির একটি সিমেন্ট কারখানায় চাকরি শুরু করেন তিনি। কারখানার অধীনে স্কুলগুলিতে এখন বাঁশি শিখিয়ে বেড়ান রঞ্জন।

ধরা গলায় বলেন, ‘‘আজ একটু অর্থের মুখ দেখছি। যাত্রা দলের কাজ স্থায়ী হয়নি। তার পরে কখনও ধান ঝাড়া-বাছা, কখনও চায়ের দোকানে কাজ করেছি। লোকের জমি-বাড়িতে মজুরিও করেছি।’’ যদিও জীবনের বহু প্রতিকূলতা তাঁর হাত থেকে বাঁশি কেড়ে নিতে পারেনি। মাত্র বছর কয়েক আগে বন্ধুদের উৎসাহে শুরু করেন গানের দল। অনুষ্ঠান করে সামান্য টাকা রোজগার করতে শুরু করেন।

লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন আসরে বাঁশি বাজিয়ে মাতিয়ে দেওয়া রঞ্জন লোকসঙ্গীতের হাত ধরেই ঘুরে বেড়িয়েছেন সাইপ্রাস, সিরিয়া, তুরস্ক, মরিশাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, কোরিয়া, লন্ডন, আমেরিকা, সুইৎজারল্যান্ড। বলেন, ‘‘ওই লন্ডনেই তো উস্তাদ আমজাদ আলি আমার বাঁশি শুনে কাছে ডেকে নিয়ে ছবি তোলেন।’’ সুইৎজারল্যান্ডে গিয়ে এক মাস ধরে বাঁশি, সানাই ও ঢোল বাজানোর তালিমও দিয়ে এসেছেন।

এই সব লোকসঙ্গীতের আসরে গিয়ে পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কাশ্মীরের মতো অন্য প্রদেশের লোকসঙ্গীত শিল্পীদের কাছ থেকে সেখানকার সুরও শিখে নিয়েছেন রঞ্জন। জানিয়েছেন, রবীন্দ্রসদনে দেশের সেই সব বিভিন্ন প্রদেশের লোকসঙ্গীতের সুরই বেজে উঠবে তাঁর বাঁশি, সানাই, ক্ল্যারিওনেটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন