ফের পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।
ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর মাস ঘুরতে চলল। অভিযোগ, কোনও রকম পদক্ষেপ দূরের কথা, অভিযুক্তকে ডেকে জেরা পর্যন্ত করেনি পুলিশ। তারা বলছে, অভিযুক্ত পলাতক। অথচ অভিযোগকারিণীর পরিবারের তরফে দাবি, প্রতিদিন বাড়ি এসে শাসিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত। তার হুমকির মুখে কার্যত গৃহবন্দি অভিযোগকারিণী, ২৬ বছরের তরুণী। এই অভিযোগে মঙ্গলবার দুপুরে সাড়ে তিনশো লোক নিয়ে কড়েয়া থানা ঘেরাও করলেন অভিযোগকারিণী।
অভিযোগকারিণীর স্বামী, কড়েয়ার কাশিয়াবাগান লেনের বাসিন্দা আরমান আহমেদের অভিযোগ, গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। সেই সুযোগে তাঁর বাড়িতে এসে স্ত্রীকে পিস্তল দেখিয়ে, খুনের হুমকি দিয়ে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতিবেশী শেখ আহমেদ। সেই সময় সে কিছু অশ্লীল ছবি তোলে বলেও অভিযোগ। জানাজানি হলে ফল ভাল হবে না— এ রকম হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায় শেখ আহমেদ।
ঘটনার দু’দিন পরে কড়েয়া থানায় এফআইআর দায়ের করেন আরমানের স্ত্রী। ধর্ষণ ও অস্ত্র দেখানো-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয় শেখ আহমেদের বিরুদ্ধে। কিন্তু অভিযোগকারিণীর দাবি, এর পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, অভিযুক্তকে জেরা পর্যন্ত করেনি। উল্টে গোটা এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত শেখ আহমেদ। অভিযোগকারিণীর দাবি, দু’বেলা তাঁর বাড়িতে এসে শাসিয়ে যাচ্ছে শেখ আহমেদ। খুন, অ্যাসিড আক্রমণ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগকারিণীর অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বারবার। তাঁর সন্তানকে অপহরণ করারও ভয় দেখাচ্ছে। আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না তরুণী।
থানায় অভিযোগ দায়ের করার দু’দিন পরেও কোনও তদন্তের অগ্রগতি না-হওয়ায় ৫ জানুয়ারি পুলিশ কমিশনারকে ই-মেল করেন অভিযোগকারিণী। সেই মেলের প্রতিলিপি ফরোয়ার্ড করেন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন)-কেও। ৬ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীকে ই-মেল করেও পুলিশি পদক্ষেপের দাবি জানান অভিযোগকারিণী। ১০ তারিখ কমিশনারের দফতর থেকে তাঁর ই-মেলের জবাব আসে, এই বিষয়টি দেখার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব বিভাগের ডিসি-কে জানানো হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। অভিযোগকারিণীর দাবি, শেখ আহমেদের শাসানি ক্রমেই বাড়তে থাকে এর পরেও। নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। শেখ আহমেদের ভয়ে এখন কার্যত গৃহবন্দি ওই মহিলা।
অভিযোগকারিণীর স্বামী আরমান আহমেদের অভিযোগ, অভিযুক্ত এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী। মাদকদ্রব্যের ব্যবসা রয়েছে তার। আরমানের দাবি, শাসকদলের নেতামন্ত্রী ও পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা রয়েছে শেখ আহমেদের। এই বিষয়টি পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআর-এও উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান আরমান। তা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে দাবি তাঁর।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারিণীর বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধর্ষণের মামলা রুজু হলেও, পরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ওই তরুণী যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে ধর্ষণ নাকি শ্লীলতাহানি— এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। তদন্ত চলছে।
কিন্তু অভিযুক্তকে কোনও রকম জিজ্ঞাসাবাদ করা হল না কেন এখনও পর্যন্ত? পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত শেখ আহমেদ পলাতক। তাঁরা একাধিক বার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে চেয়েও পাননি। অথচ অভিযোগকারিণী এবং তাঁর পরিবারের তরফে স্পষ্ট বলা হচ্ছে, ‘‘আমরা তো রোজ দেখতে পাচ্ছি অভিযুক্তকে। রীতিমতো ঘরে ঢুকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’’ এর পরেও কেন ধরা পড়ছে না অভিযুক্ত, কেনই বা তাকে ‘পলাতক’ বলা হচ্ছে, সে ব্যাপারে কিছু বলতে চায়নি পুলিশ। তবে আরমান জানিয়েছেন, এ দিন দুপুরে ঘণ্টা খানেক থানা ঘেরাওয়ের পর তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তকে ধরার।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসইডি) গৌরব শর্মা সব শুনে জানান, তিনি বিষয়টা খতিয়ে দেখছেন। যদিও এর পর একাধিক বার ফোন করা হলে আর ধরেননি তিনি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।