এ যেন চোর পালানোর পরে পুলিশের হুঙ্কার।
শুক্রবার আশুতোষ কলেজের শতবর্ষ উদযাপনে এসে উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কড়া ভাষায় জানালেন, ‘‘বাহুবলে বলীয়ান হয়ে কেউ যদি ভাবেন অনলাইন ভর্তি বানচাল করে দেবেন, কোনও ভাবেই তা সমর্থন করব না।’’
অভিযোগ, এত দিন অনলাইন ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত ক্ষোভ-অশান্তির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি সরকার। অনলাইন ব্যবস্থা যে ঠিক ভাবে পরিচালিত হয়নি তা কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছিলেন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী। সে সব পেরিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি এখন শেষের মুখে। এই সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা বস্তুত ফাঁকা আওয়াজ হয়েই থেকে গেল বলে অনেকের দাবি।
এ দিন শিক্ষামন্ত্রী ‘তেতো কথা’ দিয়েই ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশ্যে ফের হুঁশিয়ারি দেন কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার। গত মাসেই তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘অনলাইন ভর্তি টোট্যাল ফেলিওর’’। পাশাপাশি তাঁর কড়া হুঁশিয়ারি ছিল, ইউনিয়ন নেতারা এ সব বন্ধ না করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। সে সব পার করে এ বছরের মতো ভর্তি শেষ হয়ে গেল, অথচ সমস্যার সমাধানে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আবারও ব্যর্থ হল শিক্ষামন্ত্রক।
কলেজের অধ্যক্ষ দীপককুমার কর অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার ঢালাও প্রশংসা করে বলেন, ‘‘এ বছর অনলাইনে ৬৭ হাজার ফর্ম জমা পড়েছিল। কোনও বিভ্রান্তি ছাড়াই খুব সফল আমরা।’’ অথচ, ভর্তি চলাকালীন কলেজের চিত্র ছিল অন্য রকম। অভিযোগ, কলেজের বাইরে ছাত্র সংসদের ‘দাদা’দের ধরলেই মিলছিল মেধা তালিকায় পাকা জায়গা। অভিযুক্ত ছিল শাসক দলেরই ছাত্র সংগঠনই। মোটা টাকার বিনিময়ে পিছনের দরজা দিয়ে ভর্তি বাড়ায় ক্ষোভ ছড়ায় পড়ুয়াদের মধ্যে।
এ দিন আশুতোষ কলেজের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি সৌগত রায়, সাংসদ সুব্রত বক্সি, অধ্যাপক সুনন্দ সান্যাল, বিধানসভার মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়–সহ বিশিষ্ট প্রাক্তনীরা।
কলেজের স্মৃতিচারণার পরেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘দিকে দিকে ছাত্ররা এখন সমালোচিত। ছাত্র রাজনীতি আমিও করেছি। কিন্তু পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।’’ শিক্ষাক্ষেত্রে অবিরাম ঘটে চলা অরাজকতার নজির টেনে তিনি মন্তব্য করেন,‘‘ছাত্রদের অভাব-অভিযোগ থাকাটাই স্বাভাবিক। তা খতিয়ে দেখতে কর্তৃপক্ষ আছেন। ছাত্র, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারী এবং অভিভাবকদের মধ্যে একটা নিবিড় যোগ থাকতে হবে। ছাত্রদের মধ্যে এখনও ভাল কাজ আছে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে আমাদেরই।’’
গতকালই ‘এডুকেশন হাব’ তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ কলেজের উদ্দেশে সৌজন্য বার্তাও পাঠিয়েছেন তিনি। অথচ রাজ্যে শিক্ষার পরিকাঠামোগত অভাবের নজির রয়েছে খোদ শ্যামাপ্রসাদ কলেজেই। যার পঠনপাঠন হয় আশুতোষ কলেজের ভবনে। দীর্ঘ দিন ধরে কোনও স্থায়ী অধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে এই কলেজ। এ দিন কলেজের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পার্থবাবু বলেন, ‘‘সৌগতকে অনুরোধ করব কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।’’ একগুচ্ছ পাঠ্যক্রম চালু করার পাশাপাশি জোকায় আশুতোষ কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির কথাও এ দিন ঘোষিত হয়।