আদালত চায়, তবু আদিগঙ্গার মলিনত্ব ঘোচানো যাবে কি

ছবিটা কি সত্যিই বদলাবে? জাতীয় আদালতের নির্দেশের পরে আদিগঙ্গা নিয়ে এমনই কৌতূহল পরিবেশকর্মীদের। এত দিন শুধু তার নামের সঙ্গেই গঙ্গা জুড়ে ছিল।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:০৬
Share:

আদিগঙ্গা এখন। ফাইল চিত্র

ছবিটা কি সত্যিই বদলাবে? জাতীয় আদালতের নির্দেশের পরে আদিগঙ্গা নিয়ে এমনই কৌতূহল পরিবেশকর্মীদের।

Advertisement

এত দিন শুধু তার নামের সঙ্গেই গঙ্গা জুড়ে ছিল। কিন্তু ছিটেফোঁটাও কদর জুটত না। বরং নদীর চেহারা ছেড়ে তার হাল হয়েছে শহরের নিকাশি নালার মতো! এ বার আদালতের নির্দেশে গঙ্গার সঙ্গে জুড়ে গেল ভাগীরথী-হুগলির প্রাচীন শাখা। সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আদিগঙ্গাকে জাতীয় গঙ্গা সাফাই প্রকল্পের (ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা) আওতায় আনতে হবে। সংস্কার করতে হবে তার পুরো শরীরের।

কলকাতার হেস্টিংসের কাছে আদিগঙ্গা ও গঙ্গার সঙ্গমস্থল। ভাটার সময় ওই এলাকা দিয়ে গেলে পচা গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। পরিবেশবিদদের অনেকেই জানাচ্ছেন, আদিগঙ্গার জল এসে গঙ্গায় পড়ার ফলে তার জলও দূষিত হচ্ছে। শুধু গঙ্গা সাফ করে দূষণ ঠেকানো যাবে না। আদিগঙ্গা তো শহরের নিকাশি নালা। তাকে সংস্কার না করলে সেই নোংরা জল তো গঙ্গায় মিশবেই! রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইনি অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘গঙ্গা দূষণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের গঠিত কমিটি আগেও এমন প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তাতে তখন কান দেওয়া হয়নি।’’ এ দিনের নির্দেশের পরেও তাই পরিবেশকর্মীদের অনেকেই সন্দিহান, আদিগঙ্গা সংস্কারের পথ এর ফলে কতটা মসৃণ হবে তা নিয়ে। তাঁরা বলছেন, আগেও বহু বার এমন নানা বিষয়ে আদালত নির্দেশ দিলেও কাজের কাজ তেমন হয়নি। যদিও জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

জাতীয় গঙ্গা সাফাই প্রকল্পটি আদতে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। কিন্তু প্রতি রাজ্যেই তার একটি করে শাখা রয়েছে। এ রাজ্যে সেই শাখার অধিকর্তা নগরোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব সুতনুপ্রসাদ কর। প্রকল্পের রাজ্য শাখা আদালতে আগেই জানিয়েছিল, আদিগঙ্গার একটি অংশকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, একাংশ নয়, পুরো আদিগঙ্গাকেই এর আওতায় আনা উচিত। এ ব্যাপারে রাজ্য শাখার কাছে হলফনামাও তলব করা হয়েছে। নির্দেশে আদিগঙ্গার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্যের উল্লেখও করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ে পরিবেশকর্মীরা অবশ্য প্রথম থেকেই সরব। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে গুরুত্ব না মেলায় এর সংস্কারও সে ভাবে হয়নি। বরং খাটা পায়খানা, বেআইনি বস্তি, খাটাল-খামারের বর্জ্য, জঞ্জাল ফেলে বিষিয়ে গিয়েছে আদিগঙ্গার জল। জাতীয় পরিবেশ আদালতে কালীঘাট মন্দির চত্বর নিয়ে একটি মামলায় আদিগঙ্গার দূষণের কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তী কালে আদিগঙ্গাই সেই মামলার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে।

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ যে সত্যি, তার প্রমাণ মিলেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টেও। আদালতের নির্দেশে জল পরীক্ষা করে পর্ষদের কৌঁসুলি অর্পিতা চৌধুরী হলফনামা পেশ করে জানিয়েছিলেন, আদিগঙ্গার জলে অক্সিজেনের মাত্রা কার্যত শূন্য। পরিবেশবিদদের ব্যাখ্যা, জলে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্য হওয়ার অর্থ তাতে কোনও জীবের বেঁচে থাকা সম্ভব নয় বললেই চলে। ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়ার মাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বহু গুণ বেশি। এই মামলায় আদালত-বান্ধব হিসেবে নিযুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের পরিদর্শন-রিপোর্টেও দূষণের কথা উঠে এসেছিল। সুভাষবাবু এর আগে কয়েক জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে আদিগঙ্গার উপরে সমীক্ষা
করেছিলেন। সেই রিপোর্টও জমা দিতে বলেছে আদালত।

আদিগঙ্গার মামলায় আগেই খাটাল-শুয়োরের খামার উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল খাটা পায়খানা সরিয়ে পাকা শৌচাগার তৈরি করতেও। পাকা শৌচাগার আগেই তৈরি করা হয়েছিল। তার পরে কলকাতা পুরসভা হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, খাটাল-খামার উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের ‘ক্যাটল’ শাখা এ বিষয়ে নজর রাখছে। ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে, ফের যাতে খাটাল এবং খামার ফিরে না আসে সে জন্য আদিগঙ্গার কাছাকাছি থাকা থানাগুলিকেও নজরদারি চালাতে হবে। আগামী ৯ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি। এই নির্দেশ পালন করা নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে সে দিন রিপোর্ট দিতেও বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন