কার্তিক জানা, মেশিনে কব্জির নীচ থেকে হাত কেটে ঝুলছিল। অস্ত্রোপচার করে আর জি কর। এখন সুস্থ। সেখানেই চিকিৎসাধীন।
কাজ করার সময়ে আচমকাই হাত ঢুকে গিয়েছিল রোলিং মেশিনে। তাতে কব্জির নীচ থেকে পিষে গিয়ে কেটে ঝুলছিল তালু-সহ আঙুল। সেই কাটা অংশ জুড়ে ৫৮ বছরের প্রৌঢ়কে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রৌঢ় আঙুল নাড়তে পারছেন। এমনকি, তাতে অনুভূতি ফিরে এসেছে। আঙুলে পালস-অক্সিমিটার লাগিয়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও বোঝা যাচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, শ্যামপুরের বাসিন্দা কার্তিক জানা ডোমজুড়ে একটি কারখানায় কাজ করতেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ হাতের ওই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কার্তিকের পরিজনেরা জানান, স্থানীয় হাসপাতাল ঘুরে পিজিতে গেলেও, সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় আর জি করে। সেখানে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা কার্তিককে পরীক্ষা করে তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে
সিনিয়র রেসিডেন্ট অপূর্বকুমার নায়েক, বিকাশচন্দ্র দে, দীপ্রসত্ত্ব মহাপাত্র-সহ অ্যানাস্থেশিয়ার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) অনিকেত মাহাতো এবং অস্থি শল্য বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত দল প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে কাটা অংশ জোড়া লাগান।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রৌঢ়ের হাতের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি ধমনী, শিরা, স্নায়ু, টেন্ডন (যা পেশিকে হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে) কেটে গিয়েছিল। ভেঙেছিল হাড়ও। অস্ত্রোপচারে ধমনী, শিরা, হাড়— সব কিছু জোড়া লাগানো ও মেরামত করা হয়।
রূপনারায়ণ বলেন, ‘‘এমন কাটা অংশ জোড়ার ক্ষেত্রে প্রথম ছ’ঘণ্টাকে গোল্ডেন আওয়ার বলা হয়। তার থেকেও অনেক দেরিতে ওই প্রৌঢ়ের চিকিৎসা শুরু করে সাফল্য মিলেছে। এ সব ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করতে হয়। মাসখানেক পরে সেই অস্ত্রোপচারে স্নায়ু ও টেন্ডন জোড়া হবে।’’ আর কার্তিক বলছেন, ‘‘হাত জোড়া লাগবে না ভেবে ভেঙে পড়েছিলাম। এখন হাত জুড়ে যাওয়ায় মনে জোর ফিরে পাচ্ছি।’’