দেড় বছরেও ‘স্বাবলম্বী’ হল না ট্রমা কেয়ার

২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার জন্য রাজ্যের একমাত্র সরকারি ট্রমা কেয়ার সেটি।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

এখনও হামাগুড়ি দিয়েই চলেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘ট্রমা কেয়ার’ পরিষেবা।

বছর দেড়েক বয়স হয়ে গেল! কিন্তু এখনও হামাগুড়ি দিয়েই চলেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘ট্রমা কেয়ার’ পরিষেবা।

Advertisement

২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার জন্য রাজ্যের একমাত্র সরকারি ট্রমা কেয়ার সেটি। ছ’টি অপারেশন থিয়েটার ও পোর্টেবল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি-সহ রয়েছে বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। দেড় বছর আগে কাগজেকলমে পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু এখনও পৃথক ‘ট্রমা কেয়ার টিম’ তৈরি হয়নি সেখানে। অর্থাৎ, বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা চিকিৎসকের আলাদা কোনও দল নেই। যার জেরে ভুগতে হচ্ছে রোগীদের।

২০১১ সাল থেকে আর জি করে ট্রমা কেয়ার তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয়। ২০০টি শয্যা রাখার পরিকল্পনা থাকলেও আর্থিক সঙ্কটের জেরে ২০১৫ সালে প্রাথমিক ভাবে ৫০টি শয্যা নিয়ে ট্রমা কেয়ার পরিষেবা চালু হয়। পরে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ণাঙ্গ ট্রমা কেয়ার পরিষেবা চালু করেন। কিন্তু ২০১৯ সালেও কোনও পৃথক ট্রমা কেয়ার টিম তৈরি করতে পারল না ওই হাসপাতাল।

Advertisement

আর জি কর সূত্রে জানা গিয়েছে, শল্য, স্নায়ু-শল্য, অস্থি ও প্লাস্টিক সার্জারির মতো বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে ওই পরিষেবা চালু হয়। সেই চিকিৎসকেরা নিজেদের বিভাগের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি ট্রমা কেয়ারের কাজও সামলাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রমা কেয়ারের জন্য কয়েক জন পৃথক চিকিৎসক, অন্তত ৫০ জন প্রশিক্ষিত নার্স এবং ৪৫ জন টেকনিশিয়ান প্রয়োজন। যা আর জি করে নেই। তা ছাড়া, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছনো রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বার করে ট্রমা কেয়ারে নিয়ে যাওয়ার জন্যও প্রয়োজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর। তার পরে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো তাঁরাই রোগীদের নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাবেন। অস্ত্রোপচারের পরে যাবতীয় পরিষেবায় নার্সদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পরিকল্পনার পরে আট বছর পেরিয়ে গেলেও আর জি করে ট্রমা কেয়ারের জন্য আলাদা ভাবে নার্স নিয়োগ করা হয়নি।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ট্রমা কেয়ারের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর পাশাপাশি যা প্রয়োজন, তা হল, আলাদা ট্রমা কেয়ার টিম। ‘নিমহ্যান্স’ কিংবা ‘এইমস’-এর মতো বড় হাসপাতালে পৃথক ট্রমা টিম তৈরির পরেই ওই পরিষেবা চালু হয়েছে। কারণ, ট্রমা কেয়ার ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা। সেখানে অন্য বিভাগ থেকে চিকিৎসক এনে কাজ চালানো মুশকিল। কারণ, সরকারি হাসপাতালের যা চাপ, তাতে নিজের বিভাগের কাজ সামলে উঠতেই হিমশিম খেয়ে যান চিকিৎসকেরা।

অস্থি চিকিৎসক রামেন্দু হোমচৌধুরীর প্রশ্ন, রোগীকে ট্রমা কেয়ারে নিয়ে যাওয়ার আগের যে ধাপ, তার পরিকাঠামো এখনও কেন তৈরি হল না? ট্রমা কেয়ার আর জরুরি বিভাগ যে আলাদা, সেই ধারণা কি তৈরি হয়েছে? তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় দেড়শো শয্যা নিয়ে তৈরি দিল্লির এইমস হাসপাতালের ট্রমা বিভাগে রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে লাল, হলুদ, সবুজ ওয়ার্ডে দেওয়া হয়। প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য আলাদা চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের দল রয়েছে। অন্য বিভাগ থেকে ছুটে গিয়ে ট্রমা কেয়ারের রোগী দেখা যায় না। হাসপাতালের ধারাবাহিক চিকিৎসা আর ট্রমা কেয়ার এক নয়।’’ স্নায়ু শল্য চিকিৎসক জে কে প্রুস্তি বলেন, ‘‘ট্রমা কেয়ারের জন্য পৃথক দল থাকাই আদর্শ। নির্দিষ্ট সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনোটাই যথেষ্ট নয়। ঠিকমতো চিকিৎসা শুরু হওয়াটাও জরুরি।’’

আর জি কর সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ সময়েই জুনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে ট্রমা কেয়ারের কাজ চালানো হচ্ছে। কয়েক জন নার্সকে দিন কয়েকের কর্মশালায় পাঠানো হয়েছিল। হাসপাতালের অন্যান্য কাজ সামলানোর পাশাপাশি তাঁরা ট্রমা কেয়ারের রোগীদের দেখভাল করেন।

যে কোনও দুর্ঘটনার পরবর্তী এক ঘণ্টাকে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ওই সময়ের মধ্যে রোগীকে উদ্ধার করে চিকিৎসা শুরু করা গেলে বড় বিপদ এড়ানো যায়। কিন্তু অভিযোগ, দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম বা মেরুদণ্ডে চোট পাওয়া রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে ট্রমা কেয়ারের ভিতরে নিয়ে যাওয়া অথবা তাঁদের সিটি স্ক্যান, এমআরআই করাতে নিয়ে যাওয়া— সবই করছেন রোগীর পরিজনেরা। ট্রমা কেয়ারের রোগীকে নড়চড়া করানোর অভিজ্ঞতা তাঁদের নেই। যার ফলে ভোগান্তি বা়ড়ছে।

পরিষেবা চালু হওয়ার দেড় বছর পরেও কেন পৃথক ব্যবস্থা তৈরি হল না? আর জি কর হাসপাতালের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অধ্যক্ষ শুদ্ধোধন বটব্যালের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন