সুনসান কিসান মান্ডি। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
মুর্শিদাবাদের বুক চিরে গিয়েছে ভাগীরথী নদী। তার পূর্বপাড় বাগড়ি অঞ্চল ও পশ্চিম পাড় হল রাঢ় অঞ্চল। জেলার ধান চাষ যেমন রাঢ়ে বেশি হয়, তেমনি অধিকাংশ চালকল সে দিকেই রয়েছে। ধানের উৎপাদন কম এবং দূরের, এমনই অজুহাতে চালকল মালিকেরা পূর্বপাড়ের দিকে ধান নেওয়ার লরি পাঠাচ্ছেন না।
যার ফলে ভাগীরথীর পূর্বপাড়ের অনেক ব্লকেই ধান কেনার পরিমাণ তুলনায় অনেক কম। গত রবিবার বহরমপুরে রবীন্দ্র সদনে ধান কেনা নিয়ে ডাকা প্রশাসনিক সভায় চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগই তুলে ধরেছিলেন চাষিরা। তাঁরা স্পষ্টই জানান, গাড়ি না পাঠালে ধান পাঠাব কি করে!
সে দিনের বৈঠকে জেলাশাসক পি উলাগানাথন ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘চালকল মালিকদের আশায় বসে থাকলে হবে না। চালকল মালিক, ধান কেনার সাথে যুক্ত সংস্থাগুলিকে ডেকে ধান কেনার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘জেলার বেশ কিছু ব্লক ধান কেনায় পিছিয়ে রয়েছে। চালকল মালিকরা প্রতি দিন ৩০০ কুইন্টালের বেশি ধান নিতে চাইছে না, পর্যাপ্ত লরি পাঠাতে চাইছে না এমন অভিযোগ পেয়েছি।’’ তাঁর দাবি, চালকল মালিকদের বলেছি এ ভাবে ধান নেওয়ার পরিমাণ বেঁধে দেওয়া যাবে না। সময় মত পর্যাপ্ত লরি পাঠাতে হবে। অন্যথায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার জেলা পরিষেদর খাদ্য স্থায়ী সমিতির বৈঠক রয়েছে। সেখানেও এ নিয়ে আলোচনা হবে।
চালকল মালিকদের দাবি, জেলার সিংহভাগ চালকল কান্দি মহকুমায়। সেখান থেকে বহরমপুরের যানজট এড়িয়ে ৮০-৯০ কিলোমিটার দূরে লরি পাঠাতে হচ্ছে। ফলে সমস্যা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ সাহা বলেন, ‘‘অধিকাংশ চালকল কান্দিতে হওয়ায় বেশ সমস্যা হচ্ছে। এত দিন অনেক মান্ডিতে ফড়ে থাকার কারণে নানা সমস্যা হচ্ছিল। রবিবারের বৈঠকের পর অনেকটাই ফড়ে মুক্ত হয়েছে। ফলে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে বসে সব চাষির ধান আমরা কিনব।’’
বেলডাঙা ১ ব্লক অফিসের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ধান কেন্দ্র করা হয়েছে। জেলার মধ্যে এই ব্লক ধান কেনায় সব থেকে পিছিয়ে আছে। সহায়ক মূল্যে মাত্র ৬ শতাংশ ধান কিনতে পেরেছে এই ব্লক।
রবিবারের বৈঠকে পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে বেলডাঙা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ধান কেনার জন্য তৈরি আছি। চাষিরাও ধান দিতে তৈরি। কিন্তু চালকল মালিকরা ঠিকমত ধান নিতে আসছে না। চালকল মালিকরা গাড়ি কম পাঠাচ্ছে, প্রতি দিন ৩০০ কুইন্টালের বেশি ধান নিতে চাইছেনা। ফলে সমস্যা হচ্ছে।’’ হরিহরপাড়া ধান কিনতে পেরেছে মাত্র ৭ শতাংশ। পিছিয়ে থাকার কারণ সেখানে লরি না–পাঠানো।