মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শণার্থীদের ঢল, সন্ধ্যা হতেই স্তব্ধ শহর

সোমবার ছিল সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। উৎসবের মরসুম শুরু হলেও সরকারি-বেসরকারি অফিস-সহ বেশ কিছু স্কুল-কলেজও খোলা ছিল। লালবাজার ভেবেছিল, সোমবার দুপুরে তেমন ভিড় হবে না মণ্ডপগুলিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
Share:

থমকে: পঞ্চমীর সন্ধ্যাতেই যানজটে কাবু শহর। সোমবারের ভিআইপি রোড। ছবি: শৌভিক দে

সোমবার সকাল থেকেই যানবাহন এগোচ্ছিল শম্বুক গতিতে। বিকেল হতেই লালবাজারের ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে খবর আসছিল, শ্যামবাজার থেকে শিয়ালদহ, বেহালা থেকে বালিগঞ্জ, গিরিশ পার্ক থেকে ধমর্তলা— মানুষের কালো মাথায় যানশাসন ব্যবস্থা মাথায় উঠেছে। আর সন্ধ্যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যেতেই পুজোর বাকি দিনগুলির জন্য প্রমাদ গুনল লালবাজার।

Advertisement

পুজো-পাগল মানুষ এ দিন যে ভাবে পুলিশি ব্যবস্থাকে গুনে গুনে দশ গোল দিল, তাতে শঙ্কিত লালবাজার। বিশেষ করে, সন্ধ্যার পরে স্তব্ধ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ পুজোয় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি বারই ‘ডিস্টিংশন’ পাওয়া কলকাতা পুলিশ বাহিনীকে বুঝিয়ে দিল, তাদের কৌশল এ বার খাটেনি।

সোমবার ছিল সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। উৎসবের মরসুম শুরু হলেও সরকারি-বেসরকারি অফিস-সহ বেশ কিছু স্কুল-কলেজও খোলা ছিল। লালবাজার ভেবেছিল, সোমবার দুপুরে তেমন ভিড় হবে না মণ্ডপগুলিতে। তাই সন্ধ্যার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পুলিশকর্তারা। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে বেলা দশটার পর থেকেই মানুষ নেমে পড়ল রাস্তায়। এর জন্য পুলিশ কিন্তু প্রস্তুত ছিল না। মহরমের তাজিয়ার জন্য কয়েকটি রাস্তার অংশবিশেষ বন্ধ থাকায় চাপ আরও বাড়ে বলে জানিয়েছেন লালবাজারের এক কর্তা।

Advertisement

গনগনে রোদ উপেক্ষা করেই দর্শনার্থীরা সকাল থেকে ঘুরেছেন এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে। ভিড়টা পাক খেয়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে। পঞ্চমীর সারা দিন ভ্যাপসা গরমে তাঁদের ভুগতে হয়েছে যানজটে। সেই ভোগান্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে পাতালে মেট্রোর অস্বাভাবিক ভিড় এবং অ্যাপ ক্যাবের আকাশছোঁয়া ভাড়া।

পুলিশ সূত্রের ব্যাখ্যা, এ দিন মেট্রো ছিল ভিড়ে ঠাসা। প্রতিটি স্টেশনে মেট্রোর দরজা আটকাতে বেগ পেতে হয়েছে। বিকেল থেকে মেট্রো অনিয়মিত হয়ে পড়ায় পুরো চাপ এসে পড়ে রাস্তায়। পর্যাপ্ত বাস না থাকায় পাঁচ-ছয় গুণ ভাড়া হেঁকেছে অ্যাপ ক্যাব। যেখানে ৭০ টাকা ভাড়া, সেখানে নেওয়া হয়েছে ৩০০ টাকা!

লালবাজার জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে মহরমের তাজিয়ার মহড়া দিতে মিছিল বেরিয়েছিল পার্ক সার্কাসে। ফলে ঘণ্টা দেড়েকের জন্য বন্ধ রাখতে হয় সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের দক্ষিণমুখী রাস্তা। মা উড়ালপুল দিয়ে পার্ক সার্কাসে গাড়ি নামতে না পাড়ায় পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বাধ্য হয়ে কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ওই উড়ালপুলে গাড়ি ওঠা। সে সময়ে ট্যাক্সিতে সল্টলেক থেকে বেহালা পৌঁছতেই লেগে যায় আড়াই ঘণ্টার মতো! দক্ষিণে ওই যখন অবস্থা, তখন বিজন সেতুর কাছে খারাপ হয়ে যায় একটি গাড়ি। তার সঙ্গে যুক্ত হয় গড়িয়াহাট-রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বিভিন্ন মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ঢল। অন্য দিকে, পুজো দেখার ভিড়ে সন্ধ্যার পরে মধ্য ও উত্তর কলকাতার যান ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে।

কলকাতার হাঁসফাঁস যানজটে সমস্যা বাড়িয়েছে শ্রীভূমি, দমদম পার্ক, লেক টাউনের পুজোগুলির জেরে ভিআইপি রোডের যানজট। সার্ভিস রোডে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে নজরদারির অভাব। তাই যে যেমন খুশি গাড়ি রেখে দিয়ে ঠাকুর দেখতে চলে যাচ্ছেন। তার জেরে সল্টলেকের প্রবেশপথগুলিতে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ছে। চাপ পড়ছে কলকাতার উপরে।

অবস্থা সামলাতে বিমানযাত্রীদের ভিআইপি রোডের পরিবর্তে নিউ টাউনের রাস্তা ব্যবহার করার জন্য পুলিশ ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে। কিন্তু যাঁরা কেষ্টপুর, বাগুইআটি এলাকায় থাকেন, তাঁদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা কিন্তু হয়নি। কী ভাবে পুজোর আগামী দিনগুলিতে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তা নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেট রীতিমতো দুশ্চিন্তায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন