গা ছমছমে বাড়ির গেটে তালা, তবু উঁকিঝুঁকি

লাল রঙের বাড়িটা ঘিরে দু’মাস আগের সেই ভিড়টা আর নেই। তবে উৎসাহের চাপা স্রোতটা রয়েই গিয়েছে। তাই দিন কয়েক আগে কেরল থেকে এ শহরে আসা দুই পর্যটককে ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা দেখানোর ফাঁকে ৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার ট্যুরিস্ট গাইড!

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৭
Share:

৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটের সেই বাড়ি। রবিবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।

লাল রঙের বাড়িটা ঘিরে দু’মাস আগের সেই ভিড়টা আর নেই। তবে উৎসাহের চাপা স্রোতটা রয়েই গিয়েছে। তাই দিন কয়েক আগে কেরল থেকে এ শহরে আসা দুই পর্যটককে ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা দেখানোর ফাঁকে ৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার ট্যুরিস্ট গাইড!

Advertisement

১১ জুন ওই বাড়ি থেকে এক মহিলা ও দু’টি কুকুরের কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছিল। যেটা ওই বাড়ির মেয়ে দেবযানী দে-র বলেই জানাচ্ছে পুলিশ। তারা বলছে, গত ডিসেম্বরে দেবযানী মারা যাওয়ার পরে তাঁর অন্ত্যেষ্টি না করে দেহ ছ’মাস ঘরের ভিতরেই রেখে দিয়েছিলেন ভাই পার্থ। ১০ জুন পার্থর বাবা অরবিন্দ দে আত্মহত্যা করার পরেই এই ঘটনা সামনে আসে।

বড় গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢোকার মুখেই একটা বট গাছ ডালপালা-ঝুরি দিয়ে অনেকটা আড়াল করে রেখেছে বা়ড়িটাকে। মোরাম ঢালা রাস্তার দু’ধারে অযত্নে বেড়ে ওঠা ঝোপ। লাল রঙের বাড়িটার ঠিক সামনেই আর একটা গাছ। তার ডাল থেকে লতানে পরগাছা ঝুলছে। ভরদুপুরেও গাছগাছালির ছায়ায় বাড়িটা জুড়ে একটা আলোআঁধারি পরিবেশ। কঙ্কাল কাণ্ড সামনে আসার পরে এমন পরিবেশে দাঁড়িয়ে অনেকে কল্পনার ফানুস ওড়াতেন, কেউ বা নিজস্বী তুলে ফেসবুকে দিতেন। বাড়িজুড়ে হুজুগে ভিড়ের দাপাদাপিতে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত বাড়ির লোকজন গেটে তালা ঝোলান, মোতায়েন করেন নিরাপত্তারক্ষী। বাড়িতে আগন্তুকদের ঢোকার উপরে জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। এমনকী, সর্ব ক্ষণের জন্য পাহারা বসায় কলকাতা পুলিশও।

Advertisement

পুলিশের অনেকেই বলছেন, গাছপালা ঘেরা পুরনো বাড়িটায় একটা গা-ছমছমে ব্যাপার রয়েছে। তাই হয়তো ভিড় জমত। শেষে পরিস্থিতি সামলাতেই পাহারা বসানো হয়। কড়াকড়ি শুরু হতেই ভিড় হাল্কা হতে শুরু করেছিল। তবে মানুষের কৌতূহল একেবারে কমেনি। রবিবার ওই বাড়ির সামনে গিয়ে বোঝা গেল, গাছপালা ঘেরা আলোআঁধারি পরিবেশটা বদলায়নি। আর বোঝা গেল, কৌতূহলীদের ঠেকাতে কতটা কড়া ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোনও একটা কারণে গেটের তালা খোলা ছিল। তাই পাল্লা ঠেলে মোরামের রাস্তায় পা ফেলতেই ছুটে এসে পথ আগলালেন এক বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী এবং এক পুলিশকর্মী। হাজির হলেন আরও দু’জন। নিজেদের বাড়ির বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রীতিমতো শাসাতে লাগলেন তাঁরা। কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাইরে বার করে গাড়ি চেপে চলে গেলেন ওই দু’জন ‘বাসিন্দা’। আর গেটে তালা ঝুলিয়ে দিলেন রক্ষী। অগত্যা গেটের এ পার-ও পারে শুরু হল কথা। সেই কথার ফাঁকেই সুরজিৎ সিংহ নামের ওই রক্ষী জানালেন, কেরল থেকে আসা দুই পর্যটকের কথা। এ-ও বললেন, ‘‘বুঝতে না পেরে চোটপাট করেছিলাম পুরসভার দুই অফিসারের উপরেও।’’

গা-ছমছমে পুরনো বাড়ি ওই বাড়ির অন্দরেও কারও কারও ‘ভীতি’ রয়েছে। এ দিন গেটের বাইরেই আলাপ হল এক যুবকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁর দাদা ওই বাড়িতে বসবাসকারী এক পরিবারে কাজ করেন। যুবকের কথায়, ‘‘সন্ধ্যার পরে লাল বাড়িটার সামনে দিয়ে যেতে কেমন যেন লাগে।’’ দেবযানীদের বাড়িতে তাঁদের ভাড়াটে জায়সবাল পরিবার বাস করে। এমন একটা বাড়িতে থাকা নিয়ে তাঁদের কী অনুভূতি, সেটা অবশ্য জানা যায়নি।

এ দিন বিকেলে ৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটের গেটের বাইরে থেকে উঁকি দিতে দেখা যাচ্ছিল এক মাঝবয়সী ব্যক্তিকে। কী দেখছেন? উত্তর এল, ‘‘কিছু না। তবে বাড়িটা ঘিরে একটা গা-ছমছমে ব্যাপার রয়েছে কিন্তু!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন