নিয়মে ছাড় নেই ওঁদের পাম্পে

এর মধ্যেই পেট্রোল পাম্পে ঢুকল একটি অ্যাম্বুল্যান্স। কথা থামিয়ে তৎপরতা শুরু হল মৌটুসি, সালমা, শবনম খাতুনদের। পেট্রোল ভরে দ্রুত ছুটে এলেন সালমা। খুচরো দিতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে রাখা চলে না। পকেট থেকে খুচরো বার করে মৌটুসি বলেন, ‘‘এটাই আমাদের জীবন!’’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০২:০৩
Share:

বৈপরীত্য: হেলমেট ছাড়া সেখানে কোনও মতেই মেলে না পেট্রোল। আলিপুরের মহিলা পরিচালিত পাম্পে।

পৃথিবীর যত নাটক এখানেই হয়!

Advertisement

অন্তত ‘অভিযোগ’ তেমনই। কারণ, শহরের একমাত্র মহিলা পরিচালিত পেট্রোল পাম্পের কর্মীদের ঘোষিত অবস্থান, হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নয়। কেউ অযাচিত আবদার করলে ব্যানার দেখিয়ে দেন মহিলারা। তাতে লেখা, ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’।

সব অনুনয়-বিনয়েও অনড় মহিলাচালিত এই পাম্প। বহু পাম্পেই বিকেলের পরে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া বিধান উপেক্ষা করে চলে হেলমেট ছাড়াও বাইকচালকদের তেল বিক্রি। কিন্তু এখানে তার সুযোগ নেই। শত অনুরোধ উপেক্ষা করেও স্পষ্ট জবাব দিয়ে দেন মহিলারা। তার ফলে কখনও এমনও শুনতে হয় যে, ‘‘পৃথিবীর সব নাটক এখানেই হয়!’’ এতে অবশ্য বিব্রত হন না আলিপুর রোডের
ওই পাম্পের কর্মী মৌটুসি বিবি, জসলিন পিল্লাই, সালমা নাজ, মহুয়া দত্তেরা। বৃহস্পতিবার, নারী দিবসে সেখানে গিয়ে দেখা গেল দৃঢ়তার সঙ্গেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ওঁরা।

Advertisement

কিন্তু এত মানুষের রাগের মুখে কাজ করতে ভয় করে না ওঁদের? সালমার সাফ উত্তর, ‘‘মহিলা হয়ে দিদিমণি রাজ্য চালাচ্ছেন, আমরা পেট্রোল পাম্প চালাতে পারব না কেন?’’ প্রত্যয়ী গলায় তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিয়মের হেরফের হবে না। হেলমেট ছাড়া আর যেখানেই হোক, এখানে পেট্রোল মিলবে না।’’

পাম্পের সুপারভাইজার মৌটুসি জানালেন, ২০০৪ থেকে কাজ করছেন তাঁরা। গত ১৪ বছরে নিয়ম মানতে গিয়ে একাধিক বার হেনস্থারও শিকার হতে হয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘সুখসাম সিংহ ম্যাডাম আমাদের কাজ দিয়েছিলেন। এখানে মোট ২৫ জন মহিলা কাজ করি। যে কোনও সমস্যায় ম্যামই পাশে থাকেন।’’ তিনি জানালেন, এক বার হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হবে না বলায় প্রবল সমস্যায় পড়তে হয় সালমাকে। প্রাথমিক তর্কাতর্কির পরে ক্যালকুলেটর, পেট্রোলের পাউচ নিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন এক যুবক। পরে সকলে মিলে তাঁকে ধরেন সালমারা। যুবক চেঁচাতে শুরু করেন। কয়েক জন মহিলাকে ধাক্কাও মারেন।

অন্য বহু পাম্পেই অবশ্য তেমনটা ঘটে না সব সময়ে। যেমনটা দেখা গেল বৃহস্পতিবার পার্ক স্ট্রিটের একটি পাম্পে।

আর এক বার খুচরোর সমস্যার জন্য অতিরিক্ত আট টাকার পেট্রোল নিতে বলায় চরম অপমানিত হতে হয়েছিল সালমাকে। সালমার কথায়, ‘‘এক স্যার ২০ লিটার পেট্রোল ভরিয়েছিলেন। যার দাম ১,৪৯২ টাকা। বললাম, পুরোপুরি ১৫০০ টাকার ভরে দেব? তিনি চেঁচিয়ে বলেছিলেন, বদতমিজ অউরত। বাত কিঁউ কিয়া হমসে? খুব খারাপ লেগেছিল। তবে অনেকে সৌজন্যবশত নিজে থেকে আমাদের নমস্কারও জানান।’’ সুখসাম বললেন, ‘‘ওঁদের নিয়ে গর্ব হয়। এই পাম্পের ওঁরাই সব।’’

এর মধ্যেই পেট্রোল পাম্পে ঢুকল একটি অ্যাম্বুল্যান্স। কথা থামিয়ে তৎপরতা শুরু হল মৌটুসি, সালমা, শবনম খাতুনদের। পেট্রোল ভরে দ্রুত ছুটে এলেন সালমা। খুচরো দিতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে রাখা চলে না। পকেট থেকে খুচরো বার করে মৌটুসি বলেন, ‘‘এটাই আমাদের জীবন!’’

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও রণজিৎ নন্দী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন