বৃষ্টি-জনতা টক্করে জমজমাট অষ্টমী

রাত বাড়তেই আচমকা জনস্রোত হামলে পড়ে। তবে পরিস্থিতির রাশ টেনে রেখেছিল পুলিশ। ফলে যানজট তেমন হয়নি। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, হাজরা রোডেও যান চলাচল মোটের উপরে স্বাভাবিক ছিল।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৫
Share:

আলোকময়: বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

এক দফায় জনতার ঢল নামছে তো পরের দফাতেই বৃষ্টির ‘হামলা’।

Advertisement

বৃষ্টি একটু ক্ষান্তি দিল তো দর্শনার্থীরা ফের রাস্তায়, মণ্ডপে। রবিবার প্রকৃতির বদমেজাজের সঙ্গে পুজোপাগল জনতার লুকোচুরির লড়াই চলল এ ভাবেই! মহাষ্টমীর বিকেল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, গভীর রাত— এ ভাবেই জমে উঠল উৎসব কাপের টক্কর।

অষ্টমীর ভরসন্ধ্যায় বেশ হাল্কা মেজাজেই ছিলেন উত্তর কলকাতায় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারটি। ফোন তুলেই বললেন, ‘‘লোকজন আসছে বটে। তবে অষ্টমীর সেই জনজোয়ার নেই।’’ ক’দিন ধরে যে-রাসবিহারী মোড়, যে-চেতলা নাকানিচোবানি খাইয়েছে পুলিশকে, সেখানেও কেমন যেন ভাটার টান!

Advertisement

সকাল থেকে আবহাওয়া ভালই ছিল। অষ্টমী পুজো এবং কুমারী পুজো দেখতে বেলুড় মঠে উপস্থিত হন অসংখ্য ভক্ত। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই আবহাওয়া বদলাতে থাকে। হাওয়া

অফিসের খবর, বাতাসের জলীয় বাষ্প গরম হয়ে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে উঠে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করেছিল। তার জেরে বিকেল থেকেই উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলির একাংশে ঝেঁপে বৃষ্টি হয়। ফলে জেলা ও শহরতলি থেকে ভিড় সন্ধ্যায় শহরে ঢুকতে পারেনি। বৃষ্টি হয় কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তেও। সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি কমতেই ফের ঢল নামতে শুরু করে শহরে। অষ্টমীর রাতে একটু দেরিতে হলেও ছন্দে ফেরে মহানগরী।

অষ্টমীর রাতে ভিড় টানার টক্বরে এগিয়ে ছিল উত্তর কলকাতাই। বাগবাজার সর্বজনীনে শুধু কালো মাথার সারি। প্রিয়াঙ্কা অধিকারী নামে এক তরুণী বলছেন, ‘‘অষ্টমীর রাতে বাগবাজারে না-এলে ঠাকুর দেখাই বৃথা।’’ থিম পুজোর হুজুগেও কলেজ স্কোয়ার, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের মতো পুরনো তারকাদের মণ্ডপে বিরাট লাইন। টালা বারোয়ারি, টালা পার্ক প্রত্যয়, সরকারবাগান সম্মিলিত সঙ্ঘের মণ্ডপেও সারি দিয়ে লোক ঢুকেছে। উল্টোডাঙা স্টেশনে নামা ভিড় তেলেঙ্গাবাগান, করবাগানের মতো মণ্ডপগুলি দেখে হাতিবাগানের পথ ধরেছে। গত কয়েক বছরের মতো এ বারেও চমক দেখিয়েছে চোরবাগান সর্বজনীনের পুজো। মাঝরাতে কেউ কেউ সিমলে পাড়ায় চায়ের দোকানে আড্ডা জমিয়েছেন। রাতভর পায়ে পায়ে সচল ছিল আহিরীটোলা, কুমোরটুলির পুজো মণ্ডপগুলিও।

রাত বাড়তেই আচমকা জনস্রোত হামলে পড়ে। তবে পরিস্থিতির রাশ টেনে রেখেছিল পুলিশ। ফলে যানজট তেমন হয়নি। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড, হাজরা রোডেও যান চলাচল মোটের উপরে স্বাভাবিক ছিল। লালবাজারের খবর, গোড়ার দিকে পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ায় ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডে-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা ওই এলাকার তত্ত্বাবধানে বেশি জোর দেন। উল্টোডাঙা উড়ালপুল খুলে যাওয়ায় উল্টোডাঙা, ভিআইপি রোডের যানজটও সামলে দিয়েছে পুলিশ।

দক্ষিণ কলকাতাতেও মণ্ডপ থেকে মণ্ডপে হামলে পড়েছে জনস্রোত। চেতলা অগ্রণী, হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন, বালিগঞ্জ কালচারালের পাশাপাশি ত্রিধারা, সমাজসেবী, মুদিয়ালি, অবসর, যোধপুর পার্কে ক্রমাগত ভিড়ের ঢেউ। এ-সবের মধ্যে সমুজ্জ্বল ম্যাডক্স স্কোয়ার। শুধু সাবেকি প্রতিমা নয়, বাঙালির চিরায়ত আড্ডাস্থল হিসেবে ম্যাডক্স যে অমলিন, তা ফের প্রমাণ করেছে মহাষ্টমীর রাত। সন্দীপ সাহা নামে এক যুবক বললেন, ‘‘কাজের সূত্রে বাইরে থাকায় বন্ধুদের সঙ্গে তেমন দেখা হয় না। তাই ফি-বছর অষ্টমীর রাতে ম্যাডক্সে জড়ো হবই।’’

দক্ষিণের সাবেকি পুজো হিসেবে পরিচিত একডালিয়া, সিংহি পার্কও ভিড় টেনেছে। সন্তোষপুর লেকপল্লি, অ্যাভিনিউ সাউথ, ত্রিকোণ পার্কে ঘুরপাক খেয়েছে ভিড়। বেহালাতেও গাড়ির তেমন জট ছিল না। তবে দর্শকের ভিড় ছিল। সেই টক্করে এগিয়ে ছিল বেহালা ক্লাব, ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক, বেহালা নূতন সঙ্ঘ। ওই এলাকার ২৯ পল্লি, বুড়োশিবতলা এবং অন্যান্য পুজোতেও ভিড় ছিল যথেষ্ট।

আজ, মহানবমী। উৎসব কাপের ফাইনাল। নবমী নিশিতে শেষ হাসি কে হাসে, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন