Russia Ukraine War

Russia-Ukraine War: কফি-বিস্কুট খেয়ে ১৫ ঘণ্টা ককপিটে! ইউক্রেন থেকে পড়ুয়া উদ্ধারে কলকাতার মহাশ্বেতা

রোমাঞ্চ টানে তাঁকে। কিন্তু ভাবেননি জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, যখন রোমাঞ্চ এবং গতির সঙ্গে যুক্ত হবে অন্যের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২ ১৮:০৯
Share:

মহাশ্বেতা চক্রবর্তী।

ফোন এসেছিল ২৭ তারিখ ভোররাতে। তিনি তখন ঘুমচ্ছিলেন। বলা হয়, দু’ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে বেরোতে হবে। গন্তব্য প্রথমে নয়াদিল্লি। তার পর ইস্তানবুল এবং তারও পর পোল্যান্ড। ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্ধারে ভারত সরকারের ‘অপারেশন গঙ্গা’-র জন্য তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ফোনটি এসেছিল মহাশ্বেতা চক্রবর্তীর কাছে। বয়স ২৪। আসল বাড়ি অশোকনগর। পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসা। বর্তমানে থাকেন নিউটাউনে। একটি বেসরকারি সংস্থার বিমানচালক (ফার্স্ট অফিসার)।

মহাশ্বেতার কথায়, ‘‘বাবা-মাকে বলেও বাড়ি থেকে বেরোতে পারিনি। জানতে পেরে মা বলেন, আমি কেন গেলাম। দ্রুত বাড়ি ফেরার কথাও বলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন আমাকে কোন কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এখন আমার কাজে ওঁরাও গর্বিত।’’

Advertisement

কলকাতার অক্সিলিয়াম কনভেন্ট স্কুল থেকে পড়াশোনার পর ইন্দিরা গাঁধী রাষ্ট্রীয় উড়ান অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ পান মহাশ্বেতা। ছোট থেকেই ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। রোমাঞ্চ এবং গতি টানে তাঁকে। কিন্তু ভাবেননি জীবনে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, যখন রোমাঞ্চ এবং গতির সঙ্গে যুক্ত হবে অন্যের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ।

মহাশ্বেতার কথায়, ‘‘আমি যে কত বার গিয়েছি এবং এসেছি, তা গুনে দেখিনি। পড়ুয়াদের নিয়ে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি কিংবা রোমানিয়া থেকে ইন্তানবুল, সেখান থেকে দিল্লি। আবার একই ভাবে পোল্যান্ড উড়ে যাওয়া।’’ মহাশ্বেতা যে ‘এ ৩২১’ এয়ারবাস চালান, তাতে তেল ভরার জন্য ইস্তানবুলে থামতে হয়।

৬ মার্চ ফিরেছেন নিজের শহরে। এই সময়ের মধ্যে মহাশ্বেতার সংস্থা প্রায় সাত হাজার পড়ুয়াকে উদ্ধার করেছে।

সেই উদ্ধারকার্যের স্মৃতি এখনও টাটকা। মহাশ্বেতা বলে চলেন, ‘‘কোনও কোনও দিন ১৫-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেছি কালো কফি এবং বিস্কুট খেয়ে। কখনও কখনও ইন্সট্যান্ট নুডল খেয়ে পেট ভরাতে হত। ঘুমের কোনও সময় ছিল না। ঘুম হত না বলে খেতেও ইচ্ছা করত না।’’

তবে জানালেন, ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের কষ্টের কাছে যেন এটা কিছুই না! বাঙালি এই বিমানচালক (ফার্স্ট অফিসার)-এর কথায়, ‘‘এ এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। পড়ুয়ারা যে রাস্তা দিয়ে ইউক্রেন ছেড়ে এসেছেন, সেখানে কোনও খাবারদাবারের দোকান ছিল না। চার দিকে গুলি ছুটছে। সেই অবস্থায় মাইলের পর মাইল হেঁটে তাঁরা এসেছেন পোল্যান্ড।’’ একটু থেমে সংযোজন, ‘‘বিমানে উঠেও ওঁদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না, যে তাঁরা নিরাপদস্থানে চলে এসেছেন। খাওয়াদাওয়া ঘুম কোনওটাই যেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না ওঁদের কাছে। অনেকে তো বিমানে উঠে জলও খেতে চাইছিলেন না। বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছেন। আমরা নিরাপদ ছিলাম। কিন্তু ইউক্রেনের এয়ারস্পেস এড়ানোর জন্য ওঁদের অনেকটা পথ এসে বিমান ধরতে হয়েছে। ওঁরা সে সময় এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন, যে নিজেকে ঠিক রাখাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।’’

মহাশ্বেতার সংস্থা প্রায় সাত হাজার পড়ুয়াকে উদ্ধার করেছে। 

উড়ানের সময় এমনই এক অভিজ্ঞতা চিরকাল মনে থাকবে মহাশ্বেতার। তাঁর কথায়, ‘‘এক পড়ুয়া বিমানে উঠে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন। বিমানেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি এর পর আমার হাত ধরে ধন্যবাদ জানান। সেই দিনটা আমার কাছে ছিল বিশেষ। তখন আমারও মনে হচ্ছিল বাড়ি যাব।’’

মহাশ্বেতা শেষ যে বিমান নিয়ে পোল্যান্ড থেকে ফেরেন, সেই বিমানে এসেছে দু’টি পোষ্য—একটি বিড়াল ও একটি কুকুর। তাদের জন্য বিমান ছাড়তে দেরি হয়। কলকাতার মেয়ে বললেন, ‘‘প্রথমে রাগ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আগে নিজেরা বাঁচুক। কিন্তু যখন বিড়াল ও কুকুরটা দেখলাম, তখন সব রাগ জল হয়ে গেল। মনে হল, বাড়িতেও তো আমার পোষ্য বাবু-মিমি-হানি-রা আছে।’’

শুধু ‘অপারেশন গঙ্গা’তে সামিল হওয়াই নয়, এর আগে কোভিডের সময় হংকং থেকে বহু বার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ওষুধ এবং টিকা নিয়ে দেশে এসেছেন মহাশ্বেতা। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে এই প্রথম। বললেন, ‘‘মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা। কিন্তু চাই না এমনটা আবার হোক।’’

সত্যিই এমনটা কেউ চায় না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে না পড়লে বাঙালি সাহসিনীর কথাও তো জানা যেত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন