পেয়ালাভর্তি ‘ফ্রি কিক’, বোতলরূপী ‘সিজ়ন টিকিট’

রুশদেশের স্নিগ্ধ গ্রীষ্মে ফুটবল-শৈলীর আবেশ কতটা সুস্বাদু সাত্যকি মান্নারও তা চাখা হয়নি। তবে গোর্কি সদনের নতুন কাফে-কাম-রেস্তরাঁয় রুশ মেজাজ আনতে চেষ্টার কসুর করছেন না তরুণ কর্ণধার।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০২:৩২
Share:

সুস্বাদু: শহরে বিশ্বকাপের ভোজ। নিজস্ব চিত্র

গ্যালারির হলুদ-সবুজ ঢেউয়ের মাঝে বসে নেমার-কুটিনহোদের দেখার স্বপ্ন সফল হল না তো এ বার?

Advertisement

ভেঙে পড়বেন না, এ শহরে বিশ্বকাপ-জ্বরেও ব্রাজিলীয় সেঁকা মাংসের উত্তাপ মিশেছে। বিমানবন্দরের কাছে হলিডে ইন হোটেলের ‘আরবান কিচেন অ্যান্ড বার’-এর আয়োজনে ব্রাজিলের বার্বিকিউ ‘চুরাস্কো’র সম্ভার। চিকেন, ল্যাম্ব বা পর্কের রকমারি ছাড়াও ভেটকি-চিংড়ি-স্কুইড-স্যামনযোগে জম্পেশ সি ফুড চুরাস্কো।

রুশদেশের স্নিগ্ধ গ্রীষ্মে ফুটবল-শৈলীর আবেশ কতটা সুস্বাদু সাত্যকি মান্নারও তা চাখা হয়নি। তবে গোর্কি সদনের নতুন কাফে-কাম-রেস্তরাঁয় রুশ মেজাজ আনতে চেষ্টার কসুর করছেন না তরুণ কর্ণধার। ‘‘বাঙালির মস্কো-সেন্ট পিটার্সবার্গ মানে তো শুধুই সাবেক সোভিয়েত জমানার অনুষঙ্গ বা তলস্তয়-দস্তয়েভস্কি নয়! রুশ কেতার মাংস-ভাত স্ত্রগানফ বা গলানো মাখনঠাসা চিকেনের পেটমোটা আলা কিয়েভও মোটেও কম ‘বাঙালি’ নয়,’’ বলছিলেন সাত্যকি। খাদ্যরসিক বাঙালির যাবতীয় রুশ নস্ট্যালজিয়া সাজানো হয়েছে তাঁর ‘মিলি দ্রুগ’ কাফেটিতে।

Advertisement

সাত্যকির স্ত্রী ইরিনা মস্কোর মেয়ে। তাঁর রেসিপিতে রুশদেশের ব্লিনি খেতে খেতে রুশ উপকথার প্যানকেক বা ‘সরুচাকলি-লোভী’ বুড়োবুড়িদের মনে পড়ে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে তাতে নানা ভারতীয় ফিউশনেরও ছোঁয়া। বিফ-পর্ক ছাড়া চিকেন টিক্কা-পনিরগোছের পুরও ব্লিনিতে মিশেছে। কলকাতায় ব্রাজিলীয় ঘরানার বার্বিকিউয়ের উপস্থাপনাটিও মেছো বাঙালির মননকে ছুঁতে চাইছে। ব্রাজিলীয় চুরাস্কো সাধারণত মাংসময় হলেও মেনুতে থাকছে তেলাপিয়ার পুরু ফিলেও। কিন্তু পাঁচতারার হেঁশেলের অভেনেও কাঠকয়লা ভরে চুরাস্কোর মেজাজটা ধরছেন শেফ সুমন চক্রবর্তী। দিল্লির ‘ক্রাউন প্লাজ়া’ হোটেলের ব্রাজিলীয় রেস্তরাঁ ওয়াইল্ড ফায়ারের শেফের কাছে তালিম নিয়েই এ শৈলী রপ্ত করেছে কলকাতা। হাল্কা ‘সি সল্ট’ ও কিছু চেনা হার্বের ছোঁয়াতেই নিরাভরণ ঝলসানো মাংসের নিজস্বতা অটুট।

রাশিয়া বা ব্রাজিলের এই স্বাদস্পর্শটুকু অবশ্য অধিকন্তু। সান্ধ্য ফুটবল-আমোদের সঙ্গে পানভোজনের ফুর্তিটুকুতেই মোক্ষ বাঙালির। অভিজাত পাঁচতারায় অবধি প্রখর রস ককটেলের নাম: মেসিস স্টেপওভার, ফ্রি কিক বা হ্যান্ড অব গড! কোথাও জায়ান্টস্ক্রিনে ম্যাচের সময়ে প্রিয় দলের জার্সি পরে দল বেঁধে গেলে, মুফতে এক ঝুড়ি বিয়ারের ক্যান উপহার। কোয়েস্ট মলের দ্য আইরিশ হাউসে ‘সিজ়ন টিকিটে’— ম্যাচপিছু দু’টো বিয়ার, টাকনা ছাড়াও ছাড়-সহ মেনকোর্স অর্ডারের সুযোগ। হোয়াট্‌সঅ্যাপ কাফের অফারে গোল হলেই সমর্থকদের জন্য নিখরচায় পানীয়ের ‘শট’ অকাতরে বর্ষাবে। খেলাটা যেন রুশদেশে নয়, সেই পানশালা বা রেস্তরাঁয় ঘটে চলেছে।

নোভোটেলের সান্তেতে খেলা দেখার সময়ে বিয়ার বা মদ্যের অফুরান অফার আছে। মোটামুটি সস্তায় যত খুশি ‘ড্রট বিয়ার’, স্কচ বা ভদকার উপহার। ক্যামাক স্ট্রিটের মাঙ্কি বার-এ বিশ্বকাপের বিশেষ মেনুর নামই হাফটাইম। তাতে সুরার উৎকর্ষের সঙ্গে খাবারেও ফুটবল-উন্মাদনার ছোঁয়াচ। তরতিয়া-চিকেন-সালসার মেক্সিকান ওয়েভ, নানা কিসিমের মুচমুচে ফুটবল ফারসানের সঙ্গেই উপাদেয় পর্কবেলির পদে সেরা ফুটবল-শৈলীকে কুর্নিশ, যার নামও রাখা হয়েছে ‘নাম্বার টেন’।

ম্যাচ দেখার এমনই মেজাজ নিউ টাউনের ট্র্যাফিক গ্যাস্ট্রোপাব, সেক্টর ফাইভের ব্যাকস্টেজ বা দ্য ফ্যাক্টরি আউটলেটের মতো অজস্র পাবেই। পার্ক স্ট্রিটে অক্সফোর্ডের বইয়ের দোকানও ভোল পাল্টেছে বিশ্বকাপ উপলক্ষে। আপ্যায়নকারীদের পোশাক, সাজসজ্জা থেকে মেনুময়— জম্পেশ ফুটবল-অনুষঙ্গ। চ্যাপ্টার টু-র মতো কেউ কেউ মনে করছে, বিশ্বকাপের পাতে সাহেবি রান্নাই বেশি খুলবে। সেখানে বিশেষ ল্যাম্ব, হ্যাম, মেছো স্টেক ইত্যাদির আয়োজন। পেটুক বাঙালির ভোজ-বিলাসের নতুন ছুতোর নামও যে বিশ্বকাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন