আনন্দের পাঠে ওঁদেরও সামনে নিয়ে আসছে স্কুল

এই ‘দাদা’ আর ‘মাসি’দের যোগ্য সম্মান দিতে তাঁদের নিয়েই এ বার নাটক মঞ্চস্থ করানোর কথা ভাবছে বিভিন্ন স্কুল। শুধু ভাবনাই নয়, এমন কাজ করেও দেখাল কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তন স্কুল।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্কুলের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন ওঁরা। মা-বাবার হাত থেকে শিশুটিকে সযত্নে নিজেদের হাতে নিয়ে নেন। পড়াশোনা ছাড়াও আরও যে অসংখ্য দায়িত্ব থাকে, মন দিয়ে, সময় দিয়ে সে সবই পালন করেন। কিন্তু সে অর্থে তাঁদের কোনও সম্মান জোটে না। স্কুলের যে কোনও কাজে বা অনুষ্ঠানে নানান ফাইফরমাস খাটাই যেন ওঁদের প্রধান কাজ।

Advertisement

কিন্তু দেরিতে হলেও অবহেলিত স্কুলে স্কুলে এই ‘দাদা’ আর ‘মাসি’দের যোগ্য সম্মান দিতে তাঁদের নিয়েই এ বার নাটক মঞ্চস্থ করানোর কথা ভাবছে বিভিন্ন স্কুল। শুধু ভাবনাই নয়, এমন কাজ করেও দেখাল কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তন স্কুল। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে গ্রুপ-ডি কর্মীদের নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।

এই নাটকের পরেই বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আরও কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাঁরাও এ বার থেকে স্কুলের গ্রুপ-ডি কর্মীদের সম্মান ও উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে অবশ্যই সক্রিয় পদক্ষেপ করবেন।

Advertisement

শ্রীশিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতি বছর স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে ওই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা শুধুমাত্র দর্শকই হয়ে থাকেন। আড়ালে থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজনে হাতে হাতে অনেক সাহায্যও করেন তাঁরা। তবু এত দিন মূল অনুষ্ঠানে তাঁদের অংশগ্রহণ নিয়ে আমরা কখনও কিছু ভাবিনি। এটা কিন্তু আমাদেরই চিন্তার ব্যর্থতা।”

তিনি আরও জানান, এ দিকে স্কুলেই পড়ুয়াদের মূল্যবোধ শেখানো হয়। অথচ সেই স্কুলেরই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের এ ভাবে দূরে সরিয়ে রাখার অর্থ পড়ুয়াদের নৈতিক বোধ গঠনেই ধাক্কা দেওয়া। এই ভাবনা থেকেই এ বার প্রথম এই পদক্ষেপ করছে স্কুল। এ কাজে বাড়তি পাওনা ওই কর্মীদের মুখে একরাশ খুশির হাসি, বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল-শুরুতে মেয়েদের ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেদের মধ্যে আড্ডায় মেতেছিলেন একঝাঁক অভিভাবক। অনুষ্ঠানে স্কুলের দাদা বা মাসিদের শামিল করা নিয়ে তাঁরাও একমত। তাঁদের কথায়, স্কুলে প্রতিদিন বাচ্চাদের দেখাশোনা তো করেন ওঁরাই। ছোট ছোট বাচ্চারাও ওঁদের খুব ভরসা করে। এই সম্মানের যোগ্য ওঁরা। আমরাই যদি ওঁদের সম্মান না দেখাই, তবে ছোটরা কী দেখে শিখবে?

হেরিটেজ স্কুল আবার ওঁদের কথা অন্য রকম করে ভাবে। স্কুলের প্রিন্সিপাল সীমা সাপ্রুর মতে, “স্কুল এ ধরনের উদ্যোগ না নিলে পড়ুয়াদের শিক্ষা কখনওই সম্পূর্ণ হবে না। তাই প্রতি বছর একটি বিশেষ দিনকে বেছে নেওয়া হয় আমাদের স্কুলে। সেই পুরো দিনটায় তাঁদের সঙ্গে সময় কাটায় পড়ুয়ারা। এমনকি খেলাধুলাও করে ওঁদের সঙ্গে।” ভালবাসা আর সম্মান কাকে বলে, সেটা বোঝাতেই এই প্রচেষ্টা। এ ভাবেই তো ছোটরা শিখবে মানুষকে সম্মান করতে, ভালবাসতে।― বলছেন কর্তৃপক্ষ।

পড়ুয়াদের সঙ্গে কর্মীদের মিলিয়ে দেওয়ার এমন ভাবনার প্রশংসা করছেন অভিনব ভারতীর প্রিন্সিপাল শ্রাবণী সামন্তও। তিনি জানান, এ ভাবে ওঁদের নিয়ে নাটক বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না তাঁদের স্কুলে। তাঁর কথায়, “ভেবে দেখলাম, এমন কিছু তো আমরাও করতে পারি। বাস্তবিকই এতে এক দিকে ছোট ছোট পড়ুয়াদের মানসিক শিক্ষার ভিত শক্তপোক্ত হবে। আবার অন্য দিকে কাজের ক্ষেত্রে সম্মানিত হয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদেরও কাজের উৎসাহ বাড়বে।” স্কুল তো শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, জীবন সম্পর্কে, মানবিকতার বোধ সম্পর্কে শিক্ষারও উপযুক্ত স্থান। ছাত্রছাত্রীরা যাতে এখান থেকেই জীবনে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার পাঠ শিখতে পারে, সেই লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ খুবই কাজে দেবে বলে ধারণা স্কুল কর্তৃপক্ষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন