Health Of The Newborns

জন্মগত সমস্যায় বিপদ এড়াতে সদ্যোজাতের ‘স্ক্রিনিং’-এ জোর

উৎসেচকের (এনজ়াইম) ঘাটতি থাকলে ছেলেদের জন্মের পরেই জন্ডিস হয়। তাতেও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। ওই শিশুদের ওষুধ, ন্যাপথালিনের গন্ধে সমস্যা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৩ ০৫:৪১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

জন্মগত কোনও সমস্যা ভবিষ্যতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে না তো? সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে এমন প্রশ্নের উত্তর যত দ্রুত মিলবে, ততই ভাল বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সেই উত্তরের খোঁজেই উন্নত দেশে শিশুর জন্মের পরেই বিভিন্ন রোগের ‘স্ক্রিনিং’ করা হয়। যদিও এ দেশের সর্বত্র সুসংহত ভাবে সেই ব্যবস্থাপনা নেই। কিন্তু, তা থাকা জরুরি। শুক্রবার সেই বিষয়েই এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ‌’।

Advertisement

হাসপাতালের কার্যকরী অধিকর্তা, শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘শিশুর আগামী দিনগুলি ভাল রাখতে এই স্ক্রিনিং জরুরি। আইসিএইচ-এ জন্মানো শিশুদের এ বার থেকে তা করা হবে।’’ শিশুরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জন্মের পরেই স্ক্রিনিং করা হলে একেবারে প্রথম ধাপেই অনেক রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। তাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফলে, বড় ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। অপূর্ব জানাচ্ছেন, যেমন, শিশুর যদি জন্মগত থাইরয়েড থাকে, তা হলে কিছু দিনের মধ্যে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতি দু’হাজার শিশুর এক জন জন্মগত থাইরয়েডে আক্রান্ত হয়।

আবার উৎসেচকের (এনজ়াইম) ঘাটতি থাকলে ছেলেদের জন্মের পরেই জন্ডিস হয়। তাতেও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। ওই শিশুদের ওষুধ, ন্যাপথালিনের গন্ধে সমস্যা হয়। পাশাপাশি, ৪০ হাজার সদ্যোজাতের মধ্যে এক জন গ্যালাক্টোসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়। ওই সমস্ত শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করতে পারে না। অপূর্ব বলেন, ‘‘স্তন্যপানে এদের ক্ষতি হয়। চোখ, লিভার, কিডনি, ব্রেন খারাপ হতে পারে।’’ আবার দেখা গিয়েছে, ১৫ হাজারে এক জন এবং কিছু সম্প্রদায়ে প্রতি পাঁচ হাজারে এক জন সদ্যোজাত কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লেজ়িয়ায় আক্রান্ত হয়। এর ফলে আচমকাই শিশু শকে গিয়ে মৃত্যু মুখে চলে যায়। ওই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু)-এর ইনচার্জ, চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘‘সদ্যোজাতদের এমন অসুখ তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে ঠিকঠাক চিকিৎসা করে সুস্থ জীবন দেওয়া সম্ভব। আবার কিছু ক্ষেত্রে সার্পোটিভ থেরাপি দিয়ে বহু দিন সুস্থ রাখা যায়।’’

Advertisement

এ দিনের আলোচনাসভায় ওই হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকের পাশাপাশি তিরুভাল্লার বিলিভার্স চার্চ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রির বিভাগীয় প্রধান কান্নন বৈদ্যনাথন উপস্থিত ছিলেন। আইসিএইচ-এর অধ্যক্ষ, চিকিৎসক জয়দেব রায় জানান, ধরা যাক, তিন-চার বছরের একটি শিশুর মাস্কুলার ডিস্ট্রফি ধরা পড়ল। তখন আর কিছু করা সম্ভব নয় ঠিকই। কিন্তু, সেই শিশুর বাবা-মায়ের পরের সন্তান যাতে এমন রোগে আক্রান্ত না হয়, তার জন্য আগাম সতর্কতা নেওয়া সম্ভব। তাঁর কথায়, ‘‘দ্রুত রোগ চিহ্নিত হলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা যায়। কোনও শিশুর যে সব রোগের ক্ষেত্রে সেটাও করা সম্ভব হয় না, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিন্তু আগাম সতর্কতা নেওয়া সম্ভব। তাই বাধ্যতামূলক না হলেও শিশুর বাবা-মাকে সচেতন করে সদ্যোজাতের স্ক্রিনিং প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন