Death Sentence in Kolkata

আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন শাস্তি দেওয়া বিচারক জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসির রায় দিলেন! মৃত্যুদণ্ড কী কী যুক্তিতে?

আরজি করে ধর্ষণ এবং হত্যা মামলা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে বিবেচনা করেননি শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিলেন অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। এ বার সেই বিচারকই এক দম্পতিকে খুনের মামলায় অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা দিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ১৫:৪১
Share:

আরজি কর-কাণ্ডে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। সেই বিচারকই দম্পতি খুনের মামলায় দিলেন ফাঁসির সাজা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আরজি করে ধর্ষণ এবং হত্যা মামলা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে বিবেচনা করেননি শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিলেন অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে। এ বার সেই বিচারকই এক দম্পতিকে খুনের মামলায় অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা দিলেন। দম্পতিকে হত্যার অপরাধকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলেও মনে করছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্তের নাম সঞ্জয়। তবে পদবি ভিন্ন। দম্পতিকে হত্যার মামলায় সঞ্জয় সেন ওরফে বাপ্পার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করল সেই একই বিচারকের এজলাস।

Advertisement

দশ বছর আগের ঘটনা। চিৎপুরের এক বৃদ্ধ দম্পতিকে হত্যার অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত সঞ্জয়কে নিজেদের সন্তানের মতো দেখতেন প্রাণগোবিন্দ দাস এবং তাঁর স্ত্রী রেণুকা দাস। উভয়েরই বয়স সত্তরের কোঠায়। বৃদ্ধ দম্পতির কন্যা আমেরিকা নিবাসী। চিৎপুরের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাঁদের দেখাশোনার জন্য পূর্ণিমা নামে এক তরুণী থাকতেন। পূর্ণিমার সঙ্গে সঞ্জয়ের বিয়েও দিয়েছিলেন দম্পতি।

প্রাণগোবিন্দরা বাজার যাওয়া বা বাড়ির বাইরের অন্য কাজকর্মের জন্য সঞ্জয়ের উপরেই অনেকটা নির্ভরশীল ছিলেন। সঞ্জয়কে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সাহায্যও করতেন বৃদ্ধ দম্পতি। যে রিকশা চালিয়ে সঞ্জয়ের উপার্জন হয়, সেই রিকশাটিও কিনে দিয়েছিলেন প্রাণগোবিন্দরাই।

Advertisement

২০১৫ সালের জুলাইয়ে চিৎপুরের ওই ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির দেহ উদ্ধার হয়। দম্পতিকে খুন করে ফ্ল্যাটেই ফেলে রেখে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত। পরের দিন পরিচারিকা পূর্ণিমা ফ্ল্যাটে গিয়ে দম্পতির দেখা পাননি। আরও পরে প্রতিবেশীরা দুর্গন্ধ পেলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। ফ্ল্যাটের দু’টি ঘর থেকে দু’জনের দেহ পাওয়া যায়। বাড়ি থেকে নগদ ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা এবং আলমারি থেকে প্রায় ৫০ ভরি সোনাও উধাও ছিল। পরে তদন্তে উঠে আসে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে সঞ্জয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন সকালে সঞ্জয় রিকশায় চাপিয়ে গৃহকর্তাকে বাড়ি পৌছে দিয়েছিলেন। পরে আবার ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার দু’দিন পরে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে সঞ্জয়ের পৈতৃক বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা অভিযুক্তকে। চিৎপুরের এক পুকুর থেকে উদ্ধার হয় সেই লোহার রড এবং জামা কাপড়। উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া নগদ এবং সোনাও। নন্দীগ্রামে মাটির নীচে পুঁতে রাখা হয়েছিল সেগুলি।

প্রায় দশ বছর ধরে মামলা চলার পরে অবশেষে অভিযুক্ত সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজা দিল শিয়ালদহ আদালত। আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্তকে আমৃত্য়ু কারাদণ্ড দেওয়া সেই বিচারকের এজলাসেই এই মামলা চলছিল। তদন্ত চালাচ্ছিল লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। জোড়া খুনের মামলার তদন্তকারী আধিকারিক জগবন্ধু ঘড়াই এবং সরকারি আইনজীবী সন্দীপ ভট্টাচার্য এই মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি এবং ছবি আদালতে জমা দেন।

এজলাসে যে সব তথ্যপ্রমাণ এবং ছবি জমা পড়েছে, তা দেখে ঘটনার বীভৎসতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিচারক দাস। এই জোড়া খুনের ঘটনাকে একটি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা বলেই মনে করছেন তিনি। আদালতের সাজা ঘোষণার পরে সরকারি আইনজীবী সন্দীপ জানান, ঘটনার বীভৎসতার জন্যই বিচারক মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আইনজীবী বলেন, “মৃত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা উভয়েই অবসরপ্রাপ্ত। অভিযুক্ত ওই দম্পতির কাছে পুত্রবৎ পালিত হয়েছেন। প্রতিদিনও তাঁদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। তাঁরা সঞ্জয়ের উপরেই অনেকাংশে নির্ভরশীল ছিলেন। সেই নির্ভরশীলতার জায়গাকে ভেঙেচুড়ে তছনছ করে দিয়ে নৃশংস ভাবে মারা হয়েছে।”

ঘটনার বীভৎসতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনাও দেন আইনজীবী। লোহার রড দিয়ে প্রাণগোবিন্দের মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। বৃদ্ধার শরীরেও আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সময় চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, প্রাণগোবিন্দের মাথায় আঘাত করার ফলে সেই অংশটি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। বৃদ্ধার মুখেও আঘাতের চিহ্ন ছিল।

অভিযুক্ত সঞ্জয়কে জোড়া খুনের মামলায় ফাঁসির সাজা দেওয়ার পাশাপাশি দম্পতির বাড়িতে ডাকাতির মামলাতেও দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। ওই মামলায় তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক দাস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement