বুধবার রাতে ব্রেবোর্ন রোডের সেই জায়গা। মঙ্গলবার এখান থেকেই অপহরণ করা হয় মেয়েটিকে। ছবিটি তুলেছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য।
রাতপরীরা সবে ঘুম পাড়ানি গানের কলি ধরেছিল। ঠিক তখনই যেন কয়েকজন ‘দৈত্য’ টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দিল বারো বছরের মেয়েটার স্বপ্ন।
কলকাতার ফুটপাথে ঘুমিয়ে থাকা কিশোরীর অপহরণ-ধর্ষণ-খুনের পরে কি সতর্ক হয়েছে কলকাতা পুলিশ?
বুধবার রাতের শহরের ছবি কিন্তু বলছে হুঁশ ফেরেনি পুলিশের।
• এজেসি বসু রোড, মৌলালি, রাত ১টা: সারি সারি ঝাঁপ বন্ধ দোকান। সামনে ঘুমিয়ে কয়েক জন। হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়লেন তাঁরা। এ সবই তাঁদের রোজনামচা। শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ক্রসিংয়েও রাতে কোনও পুলিশ চোখে পড়ল না।
• ব্রেবোর্ন রোড, রাত ১-১৫: মঙ্গলবার রাতে ৯ ব্রেবোর্ন রোড থেকেই কিশোরীকে অপহরণ করেছিল কয়েক জন যুবক। বুধবার রাতে সেই ফুটপাথে গিয়ে দেখা গেল শুয়ে আছে আরও একটি পরিবার। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কয়েকটি সারমেয়। দিনের ব্যস্ততম রাস্তায় যেখানে সর্বদাই চোখে পড়ে সাদা উর্দির আনাগোনা, সেখানে ঘুমন্ত রাতের ক্লান্ত হলদে আলোয় চোখে পড়ল না তেমন কোনও প্রহরীকে। ওই ফুটপাথের কয়েক হাত দূরে রয়েছে একটি পুলিশ কিয়স্ক। কিন্তু পুলিশের টলহদারি গাড়ি কিংবা কোনও পুলিশকর্মী চোখে পড়েনি।
• ধর্মতলার মোড়, রাত ২-১৫: রাতে গাড়ির সংখ্যা কম। স্বাভাবিক ভাবেই নেই চেনা ব্যস্ততা। তাই দিনের তুলনায় পুলিশের উপস্থিতিও কম। তবে একেবারে নেই, তা নয়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল যাওয়ার রাস্তায় বা বাবুঘাট থেকে এ জে সি বসু রোডের রাস্তায় চোখে পড়ল রাতের প্রহরীদের। মেট্রো চ্যানেলে দাঁড়িয়ে পুলিশ-ভ্যান। শহিদ মিনারের কাছে চায়ের দোকানে দেখা মিলল চার-পাঁচজন পুলিশকর্মীর।
তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘রাতে ঘুম তাড়াতে আধ ঘণ্টা অন্তর এই গরম পানীয়ের খুব দরকার।’’
• শ্যামবাজার, রাত ২-৩০: হেদুয়া হয়ে বিধান সরণি ধরে শ্যামবাজারের দিকে যেতে চোখে পড়ল বিভিন্ন বয়সের ক্লান্ত শরীর পড়ে রয়েছে। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে একটি বেঞ্চে বসে ঢুলছেন এক পুলিশকর্মী। বি টি রোডের দিক থেকে আসা বড় বড় আট চাকার লরিও যাঁকে নাড়াতে পারছে না।
• টালা ব্রিজ, রাত ২-৪০: বিভিন্ন দিক থেকে লরি যাতাযাত করছে, আর তা সামাল দিতে রয়েছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী।
• সিঁথির মোড়, রাত ২-৪৫: রাতের নিস্তব্ধতার ছন্দকে ভেঙে দিয়ে নিজেও নিমেষে হারিয়ে যাচ্ছে। ডানলপের দিক থেকে আসা লরিগুলি দিনের ব্যস্ত সিঁথির মোড়কে এ ভাবেই রাত জাগায়। কিন্তু সেই রাস্তায় চোখে পড়ল না টহলদারি গা়ড়ি বা কর্তব্যরত পুলিশ।
লালবাজার সূত্রে জানা যায়, রাতে উর্দিধারী প্রহরী দেখলে অপরাধীরা ভয় পাবে। তাই রাতের শহরে পুলিশি নিরাপত্তার উপরে জোর দিয়েছেন পুলিশকর্তারা। লালবাজারের হিসেব বলছে, ৬৫টি টহলদারি গাড়ি, ২২টি পিকেট মিলে সাড়ে তিন হাজার পুলিশকর্মীর রাতের শহরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তব ছবি সে কথা বলছে কি?