দমদমে আগুন লেগে পুড়ে গেল ৭টি ঘর

হরিহরনগর কলোনির সঙ্কীর্ণ রাস্তার ধারে একটি জমিতে তিন ভাই অলোক দে, অশোক দে এবং পুলকে দে-র টিনের চালার বাড়ি। পিছনের ফাঁকা জায়গায় আরও পাঁচটি ঘরে মোট ১৩ জন ভাড়াটের বসবাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২১
Share:

অঘটন: হরিহরনগর কলোনিতে আগুন নিভে যাওয়ার পরে। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

কলোনির আগুন নেভাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল আবাসন। শনিবার সকালে দক্ষিণ দমদমের শ্যামনগর এলাকার হরিহরনগর কলোনিতে আগুন লাগে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কলোনি লাগোয়া আবাসনের নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপণ পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে ছাদ থেকে জল না ঢাললে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ত।

Advertisement

হরিহরনগর কলোনির সঙ্কীর্ণ রাস্তার ধারে একটি জমিতে তিন ভাই অলোক দে, অশোক দে এবং পুলকে দে-র টিনের চালার বাড়ি। পিছনের ফাঁকা জায়গায় আরও পাঁচটি ঘরে মোট ১৩ জন ভাড়াটের বসবাস। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়ির পিছনের দিকে কোনও ভাবে আগুন লেগে যায়। তা ছড়িয়ে যাওয়ায় সাতটি ঘর পুড়ে গিয়েছে।

স্থানীয়েরা জানান, এ দিন ঘটনার সময়ে নিজের বাড়িতে অশোক রান্না করছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে পাতিপুকুরে ছিলেন। ছোট ভাই স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে নিউ ব্যারাকপুরে গিয়েছিলেন। ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা ১৩ জন ভাড়াটে প্রতিদিনের মতো সকাল কাজে বেরিয়ে যান। বড় দাদার ঘরে শুধু ছিলেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধা মা আরতি দে এবং অলোকের ১০ বছরের শিশুকন্যা অঙ্কিতা দে। মেজোভাই অশোকের কথায়, ‘‘হঠাৎ জানলার দিকে চোখ যেতে দেখি, প্রচণ্ড ধোঁয়া। বাইরে বেরিয়ে দেখি বাড়ির পিছনের দিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।’’

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দে পরিবারের পাশে মিস্ত্রিদের তিনতলা বাড়ি। ঘিঞ্জি এলাকায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে বিপদ যে বাড়বে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে সকলের আগে বৃদ্ধা এবং তাঁর নাতনিকে ঘর থেকে বার করে আনেন বাসিন্দারা। এর পর উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা মানিক পোদ্দার, রাজু দাস, অসীম মণ্ডল, টুকাই হালদার, বিশ্বজিৎ রায়, রাজু হালদারেরা। এলাকার পুকুর এবং বাড়ি থেকে বালতিতে জল এনে মানিকদের হাতে তুলে দেন পাড়ার মহিলারা। সেই জলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘তিনতলা সমান আগুনের শিখা। নারকেল গাছের পাতা পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। বালতির জলে আগুন নেভাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।’’ এরই মধ্যে গ্যাস সিলিন্ডার ফাটলে আতঙ্কের মাত্রা বাড়ে। যার প্রেক্ষিতে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা।

ঘটনাস্থলের একেবারে গা ঘেঁষেই আবাসনের সীমানা। আতঙ্ক যখন এলাকার মানুষকে গ্রাস করেছে, তখন তড়িঘড়ি নিজেদের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে জল দিতে শুরু করেন আবাসিকেরা। আবাসনের ছাদ থেকে হোস পাইপের সাহায্যে জল ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ততক্ষণে আগুনের মোকাবিলায় মাঠে নেমে পড়েছে দমকলের তিনটি ইঞ্জিনও। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘আবাসন থেকে জল না ঢাললে অশোকের বাড়ি ভস্মীভূত হয়ে যেত। অন্য বাড়িতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল।’’

অগ্নিকাণ্ডে কোনও হতাহতের খবর নেই। কী ভাবে আগুন লাগল, তা নিয়ে মন্তব্যে নারাজ দমকল। অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব খুইয়ে দিশেহারা অলোক এবং পুলকের পরিবার। মুদিখানার কর্মী ভাড়াটে শ্রীকান্ত বর্মা বলেন, ‘‘দীপাবলির জন্য মালিকের কাছে থেকে বেতন আর বোনাস পেয়েছিলাম। আগুনে সব শেষ। আমরা যে ১৩ জন ভাড়াটে থাকি, তাঁদের পরনের জামাকাপড়টুকু ছাড়া আর কিছু নেই।’’ ঘটনাস্থলে গিয়ে আপাতত স্থানীয় একটি স্কুলে ক্ষতিগ্রস্তদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান। পুরসভা খুললে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের বিষয়টিও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন