সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে জখম ৭ পুলিশকর্মী

স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতি বছরই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে রান্নাপুজোকে কেন্দ্র করে কলোনির তিনটি ব্লকের ছেলেদের নিয়ে দু’টি ক্লাবের মধ্যে ফুটবল খেলা হয়। রবিবার দুই মাঠে দু’টি আলাদা খেলা চলছিল। একটি খেলা হচ্ছিল স্থানীয় এক ক্লাবের মাঠে। অপরটি ধূপকাঠি গলির মাঠে। ধূপকাঠি গলির মাঠের খেলাকে কেন্দ্র করেই ওই রাতে গোলমালের সূত্রপাত।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১০
Share:

ঘটনাস্থলে পুলিশি টহল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ালেন পঞ্চসায়র থানা এলাকার শহিদ স্মৃতি কলোনির দুই ব্লকের লোকজন। রবিবার রাতে পুলিশ ওই সংঘর্ষ থামাতে গেলে তাদের লক্ষ্য করেও ইট ও বোতল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় পঞ্চসায়র থানার অফিসার ইন-চার্জ ও সেকেন্ড অফিসার-সহ মোট সাত জন পুলিশকর্মী জখম হন। এই ঘটনায় ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতি বছরই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে রান্নাপুজোকে কেন্দ্র করে কলোনির তিনটি ব্লকের ছেলেদের নিয়ে দু’টি ক্লাবের মধ্যে ফুটবল খেলা হয়। রবিবার দুই মাঠে দু’টি আলাদা খেলা চলছিল। একটি খেলা হচ্ছিল স্থানীয় এক ক্লাবের মাঠে। অপরটি ধূপকাঠি গলির মাঠে। ধূপকাঠি গলির মাঠের খেলাকে কেন্দ্র করেই ওই রাতে গোলমালের সূত্রপাত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই খেলা তিনটি ব্লকের ছেলেদের মধ্যে হয়। সেখানে খেলছিলেন সি ব্লকের এক যুবক। খেলতে গিয়ে কোনও ভাবে তাঁর নাকে চোট লাগে। খবর পেয়ে মাঠে হাজির হন ওই যুবকের কাকা মতি দাস। তিনি সি ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা। অভিযোগ, কেন তাঁর ভাইপোকে মারধর করা হল, তা নিয়ে এ ব্লকের লোকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়ান মতি। তাঁর দাবি, এ ব্লকের মদন হালদার ও রঞ্জিত সাঁপুইয়ের লোকজন তাঁর ভাইপোকে মারধর করেছেন এবং তাঁরাই প্রথমে ইট, লাঠি, বোতল নিয়ে হামলা চালান। পুলিশকেও তাঁরাই আক্রমণ করেন বলে মতির অভিযোগ। মদন ও রঞ্জিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁদের অনুগামীরা দাবি করেছেন, দু’পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট, বোতল, লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। রাত বাড়লে সংঘর্ষ তীব্র আকার নেয়। অভিযোগ, অনেকেই মত্ত অবস্থায় ছিলেন।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাত সাড়ে ১১টা-১২টা নাগাদ শুরু হয় গোলমাল। পরে দুই ব্লকের লোকজন পরস্পরের দিকে ইট-লাঠি-বোতল নিয়ে তেড়ে যান। খবর পেয়ে পঞ্চসায়র থানার অফিসার ইন-চার্জ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। কিন্তু পুলিশ দেখেও দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামেনি। উল্টে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইট, বোতল। শুরু হয় বোমাবাজিও। একটি ভাঙা বোতল অফিসার ইন-চার্জ দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জুতো ফুঁড়ে পায়ে ঢুকে যায়। ইট এসে পড়ে সেকেন্ড অফিসারের পিঠেও। চোট পান আরও পাঁচ পুলিশকর্মী। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের ভ্যান। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে খবর পাঠানো হয় লালবাজারে। আশপাশের কয়েকটি থানা এবং লালবাজার থেকে বিশাল বাহিনী এনে ভোর চারটে নাগাদ মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, শহিদ স্মৃতি কলোনির বি ব্লকের সামনে রাস্তায় আধলা ইট আর বোতলের ভাঙা কাচ পড়ে রয়েছে। ওই ব্লকের বেশ কয়েকটি বাড়ির জানলা লক্ষ্য করেও ইট ছোড়া হয়েছিল। যার ফলে ভেঙে যায় কাচ। অনেকেরই অভিযোগ, গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় যে ভাবে দুই ব্লকের লোকজন তাণ্ডব চালান, তাতে ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলেন অনেকেই।

এ দিন সকালে একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করে অভিযুক্তদের খোঁজে শহিদ স্মৃতি কলোনি জুড়ে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় ন’জনকে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দু’পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে যাওয়াতেই পুলিশকে এ ভাবে মার খেতে হল। এ সব ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন