sex racket

বিউটি সালোঁর আড়ালে মধুচক্র শহর জুড়ে, রাতভর পুলিশি তল্লাশিতে গ্রেফতার ৩০

পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া তরুণীরা দরিদ্র পরিবারের। সামান্য বেতনের পরিবর্তে তাঁদের এই কাজ করতে হত। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য কাজের টোপ দিয়ে তাঁদের আনা হয়েছে। তারপর বাধ্য করা হয়েছে দেহব্যবসায় নামতে। সামান্য বেতনের পাশাপাশি জুটত অভিজাত এলাকার মধুচক্রে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া বখশিস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৯:৪৭
Share:

প্রতীকী চিত্র।

রবিবার রাতভর তল্লাশি চালিয়ে শহরের চার জায়গায় বিউটি সালোঁ এবং স্পা-এর আড়ালে মধুচক্রের সন্ধান পেল কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সালোঁ-মালিক, দালাল-সহ মোট ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে সব যৌনকর্মীকে।

Advertisement

যাদবপুর থানার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি বহুতলের তিন তলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মধুচক্রের মালিক-সহ মোট আট অভিযুক্তকে। উদ্ধার করা হয়েছে সাতজন যৌনকর্মীকে।

ভবানীপুরের ভগবান মহাবীর সরণির ‘সুইট অ্যান্ড শাওয়ার’ ফ্যামিলি সালোঁ অ্যান্ড স্পা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে যৌনকর্মীদের। এখানে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন মধুচক্রের ম্যানেজার, দু’জন দালাল এবং ন’জন গ্রাহক।

Advertisement

গ্রেফতার মধুচক্রের সঙ্গে জড়িত মোট ৩০ জন অভিযুক্ত। নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণ কলকাতার আর একটি মধুচক্র থেকে এর মালিক, ম্যানেজারের পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জন গ্রাহককেও। গড়িয়াহাট থানার রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ওই ঠিকানা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছ’জন যৌনকর্মীকে।

এর পাশাপাশি, অভিযান চালানো হয় মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট থানা এলাকাতেও। ১-এ মির্জা গালিব স্ট্রিট ঠিকানায় আছে ‘গাইজ অ্যান্ড ডলস বিউটি পার্লার’। গোয়েন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই এই পার্লারের আড়ালে রমরমিয়ে চলছিল মধুচক্র। অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় এর ম্যানেজার, দু’জন দালাল এবং তিন গ্রাহককে। উদ্ধার করা হয়েছে ছ’জন তরুণীকে।

আরও পড়ুন: মত্ত ক্রেতাকে নিরাপত্তা দিয়ে ওঁরাই যেন দুর্গা

পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া তরুণীরা দরিদ্র পরিবারের। সামান্য বেতনের পরিবর্তে তাঁদের এই কাজ করতে হত। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য কাজের টোপ দিয়ে তাঁদের আনা হয়েছে। তারপর বাধ্য করা হয়েছে দেহব্যবসায় নামতে। সামান্য বেতনের পাশাপাশি জুটত অভিজাত এলাকার মধুচক্রে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া বখশিস।

প্রসঙ্গত গত সপ্তাহেই উড়ো ফোনের সূত্র ধরে আলিপুরে একটি মধুচক্রের হদিশ পায় পুলিশ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে মহিলা কমিশনের সদস্যরা অভিযানে গেলে আলিপুর রোডের একটি বহুতলের একতলায় ‘প্রাভাদা থাই স্পা’ থেকে হাতেনাতে ধরা পড়েন এক গ্রাহক।

আরও পড়ুন: খেজুরের প্যাকেটে কোটি টাকার চরস

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, এখানেও কাজের টোপ দিয়ে ডাকা হয়েছিল এক তরুণীকে। কিন্তু পৌঁছনোর পর তাকে জানানো হয়, দেহ ব্যবসায় নামতে হবে। কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে মহিলা কমিশনে ফোন করে গোটা ঘটনা জানান ওই তরুণী। আর সেই সূত্র ধরেই স্পা-এর অন্তরালে মধুচক্রের রূপ প্রকাশ পায়।

তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে খবর, প্রথমে ভয়ে ওই তরুণীরা দেহ ব্যবসার কথা অস্বীকার করছিলেন। কিন্তু ঘরের আবহ থেকে শুরু করে তরুণীদের পোশাক কোনওটাই স্পা-এর সঙ্গে মিলছিল না। এর পর আলাদা আলাদা করে ওই তরুণীদের জিজ্ঞাসা শুরু করেন মহিলা কমিশনের সদস্যরা। তখনই সত্যিটা স্বীকার করেন তাঁরা।

গোয়েন্দাদের দাবি, দরিদ্র পরিবারের অসহায় মেয়েদের নিশানা করেই পার্লার, স্পা বা সালোঁর আড়ালে এই ধরনের মধুচক্রের ব্যবসা চালাচ্ছেন নারী পাচারকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন