কলকাতার কড়চা

গরানহাটা থেকে বউবাজার হয়ে চৌরঙ্গি। সরকারি আর্ট স্কুল থেকে আর্ট কলেজ। ঔপনিবেশিক শিল্পশিক্ষা থেকে জাতীয়তাবাদী শিল্পধারার আঁতুড়ঘর। ইউরোপীয় শিল্পভাবনা আর ওরিয়েন্টাল আর্টের বিতর্ক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২০
Share:

শিল্পশিক্ষায় দেড়শো বছর

Advertisement

গরানহাটা থেকে বউবাজার হয়ে চৌরঙ্গি। সরকারি আর্ট স্কুল থেকে আর্ট কলেজ। ঔপনিবেশিক শিল্পশিক্ষা থেকে জাতীয়তাবাদী শিল্পধারার আঁতুড়ঘর। ইউরোপীয় শিল্পভাবনা আর ওরিয়েন্টাল আর্টের বিতর্ক। গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট, কলকাতা-র দেড়শো পেরোনো ইতিহাসে (প্রতিষ্ঠা ১৮৬৪) কত না বাঁক, কত অন্ধকার, কত উত্তরণের উজ্জ্বল দিশা। অন্নদাপ্রসাদ বাগচী (বাঁ দিকে তাঁরই আঁকা একটি দুর্লভ ছবি) থেকে অবন ঠাকুর হয়ে মুকুল দে, অতুল বসু-র শিক্ষকতা, নন্দলাল অসিত হালদার যতীন সেন যামিনীপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায় রাধাচরণ বাগচী (মাঝে তাঁর আঁকা ছবি) জয়নুল আবেদিন অন্নদা মুন্সি হয়ে গণেশ পাইন যোগেন চৌধুরী গণেশ হালুই শক্তি বর্মন শানু লাহিড়ী প্রকাশ কর্মকারের ছাত্রজীবন।

এই ইতিহাসকে সাধারণের সামনে তুলে ধরতে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে কলেজ ও প্রাক্তনীদের যৌথ উদ্যোগে কলেজ ও অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর সব কটি গ্যালারি মিলিয়ে খুব বড় আকারে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। কলেজের সংগ্রহ থেকে সে কালের ছাত্রদের দুর্লভ শিল্পকর্ম মিলিয়ে প্রায় তিনশো শিল্পীর কাজ থাকবে, জানালেন প্রদর্শনী কমিটির আহ্বায়ক শিল্পী অসিত পাল। সংবর্ধিত হবেন চার বিশিষ্ট প্রাক্তনী ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, কার্তিকচন্দ্র পাইন, উমা সিদ্ধান্ত ও রণেনআয়ন দত্ত। বিশেষ ডাকটিকিট, ছবির ক্যাটালগ প্রকাশিত হবে, সহায়তা দেওয়া হবে মডেলদের। ২৯ সেপ্টেম্বর ৫টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, থাকবেন মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়। থাকছে শিল্পবিষয়ে আলোচনা, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

Advertisement

শিল্পকথা

তাঁর লেখার হাতটিও ছিল চমৎকার। যে বিষয়ে কলম ধরেছেন কমল ফুটেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে লিখেছিলেন, ‘তুই তো শুধু চিত্রী নস, তুই কবিও— সেইজন্যে তোর তুলি দিয়ে দুই রসই ঝরে।’ শিল্পী অসিতকুমার হালদার (১৮৯০-১৯৬৪) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের দৌহিত্রীপুত্র। সরকারি আর্ট কলেজে অবনীন্দ্রনাথের ছাত্র। পরে জয়পুর আর্ট স্কুল ও লখনউ আর্ট কলেজে শিক্ষকতা। লন্ডনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টস’-এর প্রথম ভারতীয় ‘ফেলো’। চিত্রকলা ভাস্কর্য বিষয়ক রচনা ছাড়াও গল্প কবিতা গীতিআলেখ্য লোকগাথা স্মৃতিকথা— সর্বত্রই তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। শিল্পকলা নিয়ে তাঁর কিছু রচনা গ্রন্থিত হল পত্রলেখা থেকে, সুশোভন অধিকারীর সম্পাদনায়— শিল্পকথা। প্রকাশ করবেন তাঁর কন্যা অতসী বড়ুয়া (৪৬/২ গড়িয়াহাট রোড, সন্ধে ৬টা)।

গণপতি

‘গণ’ অর্থাৎ সমষ্টি থেকেই ‘গণেশ’ শব্দের উৎপত্তি। তিনি-ই গণপতি বা বিনায়ক। শুভ অনুষ্ঠানের শুরুতে থাকে গণেশ বন্দনা। ভারতীয় সংগ্রহশালায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গণেশ মূর্তি, বিশেষত বসন্ত চৌধুরীর গণেশ-সংগ্রহ। এর থেকে বেছেই ‘গণপতি’ প্রদর্শনী আশুতোষ শতবার্ষিকী হলে। গণেশ চতুর্থীতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এম কে ধাবালিকর। ২৪ তারিখ পর্যন্ত হবে মাটি দিয়ে গণেশ মূর্তি নির্মাণের কর্মশালা। চলবে ২৭ পর্যন্ত, সরকারি ছুটি বাদে রোজ ১১-৪.৩০।

গানের উৎসব

যখন গাইতেন, গানকে তিনি চোখের সামনে ভাসতে দেখতেন। তাঁর উচ্চারণ, স্বরক্ষেপণ, কণ্ঠ রবীন্দ্রগানের আদর্শ হয়ে উঠেছিল। তাঁর ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে ছাত্রী মন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে দুই দিনের সুচিত্রা মিত্র উৎসব। ২৪ সেপ্টেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁধীভবন মঞ্চে বিকেল পাঁচটায় উদ্বোধন। ২৮ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রসদনে মঞ্চায়িত হবে প্রায় তিনশো ছাত্রছাত্রীর সম্মেলক গান ও নৃত্যগীতি অনুষ্ঠান ‘দেশ-আমার’। সহায়তায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ স্টাডিজ সেন্টার ও ‘পূরবী’। অন্য দিকে ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধে ছ’টায় ‘উতল হাওয়া’র নিবেদনে রবীন্দ্রসদনে ‘বিদ্যাপতি থেকে সলিল চৌধুরী’— ৬০০ বছরের বাংলা গানের বেশ কিছু নিদর্শন নিয়ে উল্লাস চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থাপনা। রূপায়ণে স্বপন সোম, সুছন্দা ঘোষ, মহুয়া ও অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

ডোভার লেন

‘দ্য ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স’-এর উদ্যোগে এ বারেও ধ্রুপদী নাচ ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসর বসছে। ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর আইসিসিআর-এর সহযোগিতায় সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে ধ্রুপদী নৃত্যের উৎসব। নবীন প্রতিশ্রুতিমান শিল্পীদের পাশাপাশি কুচিপুড়ি নাচের কিংবদন্তি দম্পতি ডঃ রাজা-রাধা রেড্ডির শিষ্যা ও কৌশল্যা রেড্ডির কন্যা ভাবনা, কত্থকশিল্পী আলপনা বাজপেয়ী ও সম্প্রদায়। থাকবেন সংস্থা আয়োজিত ২০১৫-র মেধাসন্ধান প্রতিযোগিতায় প্রথম প্রীতম দাস (ভরতনাট্যম) ও রুমেলী রায় (কত্থক)। অন্যরা বৈশালি কোলে, শ্রীপর্ণা বসু, অর্পিতা ভেঙ্কটেশ, নিবেদিতা দাঁ (প্রত্যেকেই ওড়িশি) ও মণিপুরি নাচে মিত্রাধেয় সম্প্রদায়। ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর বিড়লা অ্যাকাডেমিতে বাজাবেন বিশিষ্ট সরোদিয়া পার্থ সারথি এবং প্রবীণ বেহালাবাদক চিন্তামণি রথ। সঙ্গতে শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুলমনি সাহু। এ ছাড়াও সংস্থার মেধাসন্ধান প্রতিযোগিতায় প্রথম সুমেধা দে (কণ্ঠসংগীত), সুরেলা নন্দন (রাগপ্রধান), শ্রেয়া চট্টোপাধ্যায় (ঠুংরি), অরুণাভ মুখোপাধ্যায় ও মল্লার গোস্বামী (তবলা)।

চিন্তা চর্চা

বাঙালি রান্না, বাংলা ভাষা একই সঙ্গে শিখেছিলেন অ্যালিস ভার্জিনিয়া অর্নডর্ফ থেকে খাঁটি বাঙালি হয়ে ওঠা লীলা রায়, অন্নদাশঙ্করের সহধর্মিণী, তাঁদের পরিচারিকা সাহেবান বিবির কাছে। পরে তিনিই বাংলা থেকে ইংরাজিতে অনুবাদ করেন সতীনাথ ভাদুড়ীর জাগরী। তাঁর স্মরণে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি-র প্রতি বছরের ‘লীলা রায় স্মারক বক্তৃতা’ এ বার ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় আকাদেমি সভাঘরে, বক্তা বিশিষ্ট ঐতিহাসিক গৌতম ভদ্র। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ শতকের যে বাঙালি মনস্বীরা বৌদ্ধধর্ম দর্শন সংস্কৃতির নানা পাঠ উপস্থাপন করেন, তেমনই একজন মানুষ কমলেশ্বর ভট্টাচার্য। বিদেশে প্রতিষ্ঠা-খ্যাতি থাকলেও স্বদেশে প্রায় অপরিচিত এই মানুষটির অনুবাদ ও চিন্তাচর্চার পরিসর উন্মোচন করবেন অধ্যাপক ভদ্র। সভামুখ্য আকাদেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র। অন্য দিকে সম্প্রতি উদ্বোধন হল শিশু কিশোর আকাদেমির বইবিপণি ‘বইচই’। প্রকাশিত হল ওদের তিনটি নতুন বইও।

মুক্তিকা

দাদু কিশোরকুমারের সঙ্গে মুক্তিকার দেখা হচ্ছে স্বপ্নে। তার পর শুধু ভেসে চলা গানের জগতে। অমিতকুমার এই ভাবেই ভেবেছেন কন্যা মুক্তিকা-র প্রথম গানের অ্যালবাম ‘বাবা মেরে’–র ভিডিয়োটি। অমিত নিজে রয়েছেন, আবার কিশোরকুমারের ভূমিকাতেও তিনি। ৫০ বছর আগে যিনি দূর গগন কি ছাঁও মে ছবিতে অমিতকে এনেছিলেন। সেই ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি। অ্যালবামের ৬টি হিন্দি গান লিখেছেন লীনা চন্দ্রভারকর আর মিউজিক করেছেন কিশোরের ছোট ছেলে সুমিতকুমার, সুর অমিতের। দশ বছরের মুক্তিকা গান গেয়েছেন বাবার সঙ্গে। এটি সমগ্র পরিবারের তরফে কিংবদন্তি শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, মনে করেন অমিতকুমার। ২৫ সেপ্টেম্বর উত্তম মঞ্চে প্রকাশ পাবে অ্যালবামটি। এ দিন অমিতকুমারের সঙ্গে কিশোরকুমারের গানে থাকবেন রূপঙ্কর, প্রিয়া, সুজয়।

সেতুবন্ধন

ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বের সেতুবন্ধনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনবদ্য। বস্টন মিউজিয়মে ভারতীয় সংগ্রহ দিয়ে সূচনা, প্রতাপাদিত্য পাল ১৯৭০ থেকে পঁচিশ বছর ধরে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়মে গড়ে তুলেছেন ভারতীয় ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শিল্পের বিপুল সংগ্রহ। তাঁর গবেষণা ও লেখালেখি এর সঙ্গে হিমালয় অঞ্চলের শিল্প নিয়েও। লিখিত-সম্পাদিত সত্তরটির মতো বইয়ে এবং অজস্র প্রবন্ধে তিনি বিশ্বের কাছে এই শিল্পধারাকে যে ভাবে তুলে ধরেছেন তা বেনজির। সতেরো বছর ধরে সম্পাদনা করেছেন শিল্পপত্রিকা ‘মার্গ’, সাজিয়েছেন ভারতীয় শিল্পের বহু প্রদর্শনী। এই প্রবাসী শিল্পঐতিহাসিক সদ্য সম্মানিত হলেন ‘দোশি ফ্যামিলি ব্রিজবিল্ডার অ্যাওয়ার্ড’-এ, বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনের প্রয়াসকে মর্যাদা দিতেই বার্ষিক এই সম্মানের সূচনা হয় ২০০৫-এ। প্রতিষ্ঠাতা নবীন দোশির কথায়, দুই মেরুকে প্রতাপাদিত্য পাল মধ্যপথে মিলিত করতে পেরেছেন।

নবজাগরণ

উনিশ শতকে রেভারেন্ড প্রতাপ মজুমদার সোচ্চার হয়েছিলেন ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। তাঁর প্রচার ছিল, গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দৈহিক, মানসিক ও নৈতিক চরিত্রের উন্নতি প্রয়োজন। সহায় হলেন রাসবিহারী ঘোষ, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, আরও অনেকে। ১৮৯১ সালের ৩১ অগস্ট টাউন হলে জন্ম নিল ‘দ্য সোসাইটি ফর হায়ার ট্রেনিং ফর ম্যান’, পরে কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট। এই সংগঠন বাঙালির নবজাগরণের অন্যতম স্তম্ভ। সম্প্রতি সাড়ম্বরে পালিত হল ১২৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, পৌরোহিত্য করেন ইনস্টিটিউট-এর সভাপতি, বিচারপতি অসীম রায়।

মাতৃরূপেণ

মহা আড়ম্বরে পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে পরপর দুই দিন পূজা হইয়াছে গণেশ ও বিশ্বকর্মা ঠাকুরের। বিশ্বকর্মাকে এ বার অবশ্য বৎসরের পর বৎসর চলিয়া আসা সতেরো সেপ্টেম্বর দিনটি গণেশজি-র জন্য ছাড়িতে হইয়াছে। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আঠেরোয় ছিল তাঁহার অধিষ্ঠান। মাঝে ভাদ্রের গরমে অতিষ্ঠ শহরবাসীকে স্বস্তি দিতে মাঝারি মাপের বৃষ্টিও হইয়াছে। কুমোরটুলি বা পটুয়াপাড়ার কাছে অবশ্য তাহা স্বস্তির নহে। তথায় কর্মব্যস্ততার শেষ নাই। যদিও এক্ষণে বহু দূর হইতে রঙ-কাপড়-মুকুট-গহনা আনাইতে হয় না। এই দুই পল্লির ভিতরের দোকান হইতে সবই ক্রয় করা যায়— তাহাই বলিতেছেন রঞ্জিত সরকার। তাঁহার মাতৃসাজের দোকান। ‘একটা জিনিস মনে রাখবেন, ভেতরের দোকান বেশির ভাগই গয়না-মুকুট তৈরি করে। আর রাস্তার দিকের দোকান কিনে এনে বিক্রি করে। কাটোয়া থেকে আসে শোলার কাজ। তবে আমার কারখানাতেও শোলার কাজ হয়। মায়ের কাপড় আসে সুরাট-অমৃতসর-মুম্বই-বেনারস থেকে। মা তো সকলেরই। এখন এখানে বলা যায় দিনে-রাত্রে কাজ চলছে।’ দূর হইতে ভাসিয়া আসিতেছে সংগীত— দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী মহিষাসুরমর্দিনী জয় মা দুর্গে।

বিজ্ঞানী

যতদিন বাঁচি তত দিন যেন শুধু কাজ করেই যাই’— কাছের লোকদের এমনই বলতেন তিনি। বিজ্ঞানী অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের (১৯১৭-২০০৬) আন্তর্জাতিক খ্যাতি ভারতীয় বনৌষধি নিয়ে গবেষণার জন্য। গাছের প্রতি এই ভালবাসা তিনি পেয়েছিলেন পিতা ইন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। তিনিই প্রথম মহিলা যিনি কোনও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি এসসি (১৯৪৪) পান এবং ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভানেত্রী হন। ১৯৪০-এ কর্মজীবন শুরু লেডি ব্রেবোর্ন-এ। ১৯৮২-’৯০ ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য। শিক্ষা এবং কর্মসূত্রে পেয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহার মতো বিজ্ঞানীদের। ওঁর প্রচেষ্টায় সল্টলেকে প্রতিষ্ঠা পায় আয়ুর্বেদ গবেষণা কেন্দ্র। আবিষ্কার করেছেন কিছু মূল্যবান ওষুধ। লিখেছেন চার শতাধিক প্রবন্ধ, সম্পাদনা করেছেন ভারতীয় বনৌষধি নিয়ে বই। বিয়ে করেন বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে। প্রায় অর্ধশতাব্দী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পর ১৯৮২-তে খয়রা অধ্যাপক হিসেবে কর্মসমাপ্তি। পেয়েছেন নানা পুরস্কার, পদ্মশ্রী। ছাত্র এবং অনুরাগীরা মিলে তৈরি করেছেন ‘অসীমা চ্যাটার্জি ফাউন্ডেশন’। ওদের উদ্যোগে ২৩ সেপ্টেম্বর গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ হলে বিকেল তিনটেয় ‘দি আর্ট, সায়েন্স অ্যান্ড বিজনেস অফ অর্গানিক কেমিস্ট্রি’ শীর্ষকে প্রথম অসীমা চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দেবেন হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি–র পূর্বতন অধিকর্তা এ ভি রাম রাও। উদ্বোধন করবেন স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ।

মেঘের মেয়ে

মেডিক্যাল কলেজে পড়তে পড়তেই নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া। পরে ডাক্তারির চাকরি ছেড়ে গানের জগতে চলে আসেন পল্লব কীর্তনীয়া। ‘গানের মাধ্যমে নিজের সমাজ-সচেতনতা, রাজনীতিবোধ তুলে ধরতে পেরেছিলাম।’ পল্লবের সঙ্গে অনেকটাই মিল উতলের। কলকাতার ডাক্তারি প্র্যাকটিস ছেড়ে পুরুলিয়ার গ্রামে স্কুল আর হাসপাতাল তৈরিতে ব্যস্ত সে। হবে না-ই বা কেন? উতল যে পল্লবের-ই সৃষ্টি! নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনার মিশেলে উতলকে গড়েছেন পল্লব। তাঁর প্রথম ছবি ‘মেঘের মেয়ে’র অন্যতম চরিত্র উতল! বড় ক্যানভাসের জন্যই পল্লবের সিনেমা তৈরি। সিনেমার কথা ভেবেই গল্প লিখেছেন। দীপান্বিতা কন্যা হাসনুকে প্রতি বছর আমেরিকা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। পুরুলিয়ার পাহাড়-জঙ্গলে হাসনু খুঁজে পায় উতলকে। যে উতল ডাক্তারি পড়ার সময় হয়ে যায় নকশাল। সে দীপান্বিতার প্রেমিকও। আদ্যন্ত প্রেমের কাহিনি হলেও ছবিটি কোথাও টান মারে আজকের রাজনীতির আদর্শহীনতার মূল ধরে। পল্লবের কথায়, ‘আমাদের ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে একটা আদর্শ ছিল। এখন সেটাই অমিল।’ প্রথম পরিচালনা, কিন্তু সচেতন ভাবেই তারকাবিহীন। নকশাল আন্দোলন, রাজনীতি-সমাজনীতির সঙ্গে সাধারণ মানুষ যাতে ছবিটিকে মেলাতে পারেন, তাই এই প্রয়াস। ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেল ছবিটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন