Boral Crematorium

বেওয়ারিশ লাশ সৎকার ফের ধাপাতেই, গড়িয়া কাণ্ডে শো-কজ়

গড়িয়া-কাণ্ড নিয়ে দ্রুত পুর কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু কেউই তাঁকে কিছু বলবেন না বলে ফিরহাদ জানিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০৪:২৬
Share:

শ্মশানের সামনে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

গড়িয়া শ্মশানে মৃতদেহ আঁকশিতে টেনে নিয়ে যাওয়ার ভিডিয়োয় যে কলকাতার পুরপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে তা মানছেন আধিকারিকেরা অনেকেই। কী ভাবে এমন ঘটল, তা জানতে দাবিদারহীন দেহ সৎকারের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থাকে শুক্রবার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে বলে জানালেন পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের প্রধান ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘এখনই কারও উপরে দায় চাপাচ্ছি না। তবে গড়িয়া শ্মশানের ঘটনায় ঠিকাদার সংস্থাটিকে শো-কজ় করা হয়েছে।’’

Advertisement

গড়িয়া-কাণ্ড নিয়ে দ্রুত পুর কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু কেউই তাঁকে কিছু বলবেন না বলে ফিরহাদ জানিয়ে দিয়েছেন।

দাবিদারহীন দেহের সৎকারে রাজ্য বা কলকাতা পুলিশের বিধির সঙ্গে মিলছে না গড়িয়া বোড়াল শ্মশানের ঘটনা। কোনও মৃতদেহ দাবিদারহীন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই তার সৎকার করা যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মর্গ কর্তৃপক্ষকে পুলিশের তরফে জানানো হয়। তার পরে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সাহায্যে সৎকার-পর্ব শুরুর কথা। পুলিশ আইনে নৈতিকতা ও মানবাধিকার অক্ষুণ্ণ রেখে দাবিদারহীন দেহ সৎকারের কথা বলা হয়েছে। গড়িয়া শ্মশানে গলিতপ্রায় দেহ আঁকশি দিয়ে টেনে সরানোর ভিডিয়ো সেই আইনের সম্পূর্ণ বিপরীত ছবিই তুলে ধরেছে।

Advertisement

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

ফিরহাদ শুক্রবার দাবিদারহীন দেহের শেষকৃত্য গড়িয়া শ্মশানে না-করার সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “গড়িয়া শ্মশানে জটিলতার পরে সেখানে দাবিদারহীন দেহ সৎকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছি। আগের মতো ধাপাতেই ওই ধরনের দেহ দাহ করা হবে। কোভিডে মৃতদের দাহকাজও ধাপাতেই চলবে।”

আরও পড়ুন: ‘এত নির্লজ্জ ভাবে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল দেহ!’ ফের তোপ রাজ্যপালের

আরও পড়ুন: দেহ নিয়ে চিঠি নবান্নের, সৎকারে বদলের ভাবনা

কোভিড-পরিস্থিতিতে ধাপায় করোনায় মৃতদের সৎকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই চাপ সামলাতে মে মাসের শেষে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, দাবিদারহীন দেহগুলির শেষকৃত্য গড়িয়া শ্মশানে করা হবে। কিন্তু বুধবার ১৩টি দাবিদারহীন দেহ সৎকারের আগে দুর্গন্ধ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন ওঠে, দেহ টেনে নিয়ে যাওয়া নিয়ে।

দাহকাজের সময়ে শোভনতা বজায় রাখার কথা পুলিশ বিধিতে বলা হয়েছে। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের নিয়ন্ত্রণবিধি ১৯৭৩ সালে সংশোধিত হয়। তাতে কারও দেহ দাবিদারহীন বলে নিশ্চিত হতে অন্তত ৭ দিন সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। মোটামুটি ৭-১০ দিন বাদে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে দাহকাজ সারার কথা। বিশেষ পরিস্থিতিতে মৃতের পরিজনের বিষয়ে জানতে আরও সময় দেওয়া হতে পারে। পুরসভার এক আধিকারিকও জানান, দেহগুলি গাড়িতে ঢাকা অবস্থায় নিয়ে এসে ঠেলাগাড়িতে করে চুল্লির কাছে নিয়ে গিয়ে রাখার কথা। তার অর্থ, আঁকশি দিয়ে দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য স্বাভাবিক রীতি নয়।

বুধবার গড়িয়ার চারটি চুল্লির মধ্যে একটিতে দেহগুলি সৎকারের কথা ছিল। পুর কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য এ দিন জানানো হয়েছে, দেহগুলি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। গড়িয়ায় বিক্ষোভের জেরে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ধাপার শ্মশানে চাপ থাকার দরুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচটির বেশি দেহ সেখানে দাহ করা যায়নি। এ দিন বাকি দেহগুলি ধাপাতেই দাহ করা হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর। ধাপায় একই সঙ্গে কোভিড-রোগীর দেহ ও দাবিদারহীন দেহ সৎকারের ভার সামলাতে পুর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন