‘সিলভার ডিসকভারার’, জাহাজ ভিড়তেই ‘স্বাগত’ জানাতে এল ধেড়ে ইঁদুর

জাহাজ থেমেছে। যাত্রীর একে একে নামতে শুরু করেছেন। হঠাৎই জেটির পাশে মাল রাখার বড় গুদাম থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো একটি ধেড়ে ইঁদুর। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের মধ্যে তখন রীতিমতো কৌতুক। রাশিয়ার তরুণী ওলগা নেভাস্ত্রফকে ভয় পেতে দেখে অস্ট্রেলিয়ার ম্যালকম বলে উঠলেন, ‘‘ভয় নেই! ও তো আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছে!’’

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৫
Share:

বহুদিন পরে বড় যাত্রী-জাহাজ এল খিদিরপুরে। তা দেখতে উৎসাহী মানুষের ভিড়। শনিবার। ছবি:দেশকল্যাণ চৌধুরী

জাহাজ থেমেছে। যাত্রীর একে একে নামতে শুরু করেছেন। হঠাৎই জেটির পাশে মাল রাখার বড় গুদাম থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো একটি ধেড়ে ইঁদুর। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের মধ্যে তখন রীতিমতো কৌতুক। রাশিয়ার তরুণী ওলগা নেভাস্ত্রফকে ভয় পেতে দেখে অস্ট্রেলিয়ার ম্যালকম বলে উঠলেন, ‘‘ভয় নেই! ও তো আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছে!’’

Advertisement

জানাতে আসবে না-ই বা কেন? দীর্ঘ নয় বছর পরে যে কলকাতা বন্দরে নোঙর করতে চলেছে বিলাসবহুল যাত্রিবাহী জাহাজ! যে-সে জাহাজ নয়। ‘সিলভার ডিসকভারার’ নামের ওই অভিযাত্রী জলযান তামাম বিশ্বের তাবড় বন্দর ছুঁয়ে বেড়ায় সারা দুনিয়ার যাত্রীদের নিয়ে। তাই সাজ-সাজ রবে সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিল বন্দর। তবে সব রকম প্রস্তুতির পরেও এই ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল, এমন জাহাজ নিয়মিত আসার জন্য মোটেও তৈরি নয় কলকাতা বন্দর। পরিকাঠামোর দিক থেকে বেশ পিছিয়ে সে।

শনিবার শেষ বিকেলে কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডকের ন’নম্বর জেটিতে এসে যখন ভিড়ল অতিকায় ক্রুজটি, তখনও প্রাণপণে চলছে ভাঙাচোরা, গর্তে ভর্তি জেটির খুঁতগুলো সবুজ কার্পেটে মুড়ে দেওয়ার কাজ। জাহাজ থামার পর জেটির অসমান মেঝে পর্যন্ত সিঁড়ি নামাতে বেশ বেগই পেতে হল জাহাজকর্মীদের।
এক কর্মী জানালেন, আন্তর্জাতিক যাত্রায় এ রকম নিম্নমানের জেটি পাননি কখনও।

Advertisement

ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু, এই জাহাজের অভিজ্ঞ কর্মী। জানালেন, চার মাস ধরে রয়েছেন জাহাজে। মাদাগাস্কার, মরিশাস, সেশ্যেলস, তানজানিয়া, ওমান হয়ে এই এসেছেন ভারতে, কলকাতায়। এখান থেকে বাংলাদেশ, ইয়াঙ্গন হয়ে ফুকেত পৌঁছলে তাঁর এই দফায় ছুটি মিলবে। জাহাজ থেকে নেমে চার পাশে ভিড় দেখে বললেন, ‘‘জেটিটা অন্য রকম ঠিকই, তবে এত আন্তরিকতা কোথাও পাইনি। স্পেশ্যাল মনে হচ্ছে নিজেদের।’’

আরও পড়ুন: স্বেচ্ছামৃত্যু নয়, জীবনে ফেরার স্বপ্নে বুঁদ যুবক

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ২০০৮ সালে ২৭ ডিসেম্বর শেষ এসেছিল এমন বিলাসবহুল জাহাজ, ‘আইল্যান্ড স্কাই’। সে বারও তড়িঘড়ি সেজেছিল কলকাতা বন্দর। কিন্তু তার পর থেকে ফের অযত্নের গহ্বরে ডুবেছে বন্দরের গৌরব। ‘‘ধুমধাড়াক্কা বিশাল বিশাল মালের বোঝা টেনে নামানোই এত দিন দেখে এসেছে বন্দর, আজ হঠাৎ এমন সুন্দর বিলাসবহুল জাহাজের ততোধিক বিলাসী যাত্রীদের জন্য এই বন্দর তো একটু অসুবিধার কারণ হবেই।’’— বললেন এক বন্দরকর্তা।

কলকাতা বন্দর নিরাপত্তা উপদেষ্টা গৌতম চক্রবর্তী জানালেন, নদীমাতৃক এ শহরে সম্ভাবনা ছিল বন্দরটিকে উন্নত করে দেশ-বিদেশের আরও অনেক জাহাজের আনাগোনার ব্যবস্থা করা। ‘‘দীর্ঘ আট বছর পরে কলকাতা বন্দরে এমন একটি বিলাসবহুল ক্রুজ আসা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বার্তা দেয়। কলকাতা বন্দরের হাত ধরে ক্রুজ ট্যুরিজমকে উন্নত করতে পারলে, তা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতেও জোয়ার আনবে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।’’— বললেন গৌতমবাবু।

রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব এ বিষয়ে বলেন, ‘‘কলকাতা বন্দরের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার বহু দিন ধরেই চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছেন।’’ তিনি জানান, বন্দরের এই শ্রীহীন অবস্থা যেমন এক দিনের অবহেলায় হয়নি, তেমনি রাতারাতি অবস্থা ফিরবেও না। তবে চেষ্টা চলছে।

৯৩ জন যাত্রী এবং ৯৮ জন জাহাজকর্মী নিয়ে শহরে এসেছে এই বিলাসবহুল জাহাজ। দু’টো দিন জিরিয়ে নেবে শহর কলকাতায়। ২৭ তারিখ রাত ন’টায় ফের রওনা দেবে ক্রুজ। গন্তব্য, বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় মোংলা, ইয়াঙ্গন, ফুকেট হয়ে ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি জাপান....অন্তহীন সে যাত্রা। এক অভিজ্ঞ জাহাজকর্মীর কথায়, ‘‘১৯৮৯ সালে জন্মের পর থেকে আর থামেনি ‘সিলভার ডিসকভারার’-এর অভিযান। কোথা থেকে কত জন যাত্রী বুক করেছেন, সেই বুঝে তৈরি হতে থাকে তার আগামী যাত্রাপথ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন