টাকা লুঠতে বাড়ছে সিম জালিয়াতি, কপালে ভাঁজ পুলিশের

সল্টলেকের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছে, মোবাইল ফোনের সিম কার্ড জাল করে ওই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এ বার কাশীপুরের একটি চেক জালিয়াতির ঘটনাতেও সামনে এসেছে একই অভিযোগ। লালবাজারের খবর, বড় অঙ্কের চেক জমা পড়লে বহু সময়েই ব্যাঙ্ক থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৫
Share:

সল্টলেকের ব্যাঙ্ক জালিয়াতির তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছে, মোবাইল ফোনের সিম কার্ড জাল করে ওই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এ বার কাশীপুরের একটি চেক জালিয়াতির ঘটনাতেও সামনে এসেছে একই অভিযোগ।

Advertisement

লালবাজারের খবর, বড় অঙ্কের চেক জমা পড়লে বহু সময়েই ব্যাঙ্ক থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার পরেই চেক ‘ক্লিয়ারিং’-এ যায়। কাশীপুরের ঘটনাটির ক্ষেত্রে পুলিশ জেনেছে, ব্যাঙ্ক থেকে যাচাই করা হলেও সেই বার্তা যাতে জালিয়াতদের হাতেই পৌঁছয়, তার জন্যই সিম জালিয়াতি করা হয়। কিন্তু টেলিকম পরিষেবা সংস্থা সিম বন্ধ করে নতুন সিম চালু করতে দেরি করায় ব্যাঙ্কের ফোন আসল গ্রাহকের কাছেই চলে গিয়েছিল। যার জন্য শেষমেশ টাকা লুটতে পারেনি জালিয়াতেরা। চাঁইরা ফেরার হলেও তিন অভিযুক্ত ধরা পড়েছে।

সিম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা বারবার সামনে আসায় উদ্বিগ্ন পুলিশকর্তারাও। তাঁরা বলছেন, এর পিছনে টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলির গাফিলতি রয়েছে। এই সমস্যা না মেটালে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি আরও বাড়বে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। এ বিষয়ে টেলিকম সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসার কথাও জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি সল্টলেকের এক বাসিন্দাকে টেলিকম পরিষেবা সংস্থার নাম করে ফোন করে দুষ্কৃতীরা। সিম ‘আপগ্রেড’ করার ছুতোয় তারা সেই বাসিন্দাকে দিয়ে তাঁর চালু সিম কার্ড বন্ধ করে নতুন সিম চালু করে নিয়েছিল। ফলে অনলাইনে টাকা লেনদেনের সময়ে ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) জালিয়াতদের হাতে পৌঁছেছিল। ব্যাঙ্কের এসএমএস-ও সে সময় পাননি ওই ব্যক্তি। সিম কার্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ফোন নম্বর এক রেখে নতুন সিমকার্ড চালু করতেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার বার্তা পান। তার পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

কাশীপুরের ক্ষেত্রে ঘটনাটি আলাদা। ধৃতদের জেরা করে কাশীপুর থানার অফিসারেরা জেনেছেন, ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ করে ধনী গ্রাহকদের ব্যক্তিগত এবং অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতাত জালিয়াতেরা। তার পরে চেক জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিম হারিয়ে গিয়েছে এই মর্মে টেলিকম পরিষেবা সংস্থার কল সেন্টারে ফোন করে সিম কার্ডটি বন্ধ করাত। একই নম্বরে নতুন সিম চালু করাত। ফলে ব্যাঙ্ক থেকে চেক দেওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ফোন করা হলে তা জালিয়াতদের কাছেই যেত। বরাহনগরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে এমন জালিয়াতি করতে গিয়েই গৌতম সিংহ, বাবু সিংহ এবং জিতু যাদব নামে তিন জন ধরা পড়ে। পুলিশের দাবি, জিতু এই চক্রের চাঁই। এই কায়দায় আরও জালিয়াতি তারা করেছে বলেও স্বীকার করেছে ধৃতেরা।

প্রশ্ন উঠেছে, হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে সিম কার্ড ‘ব্লক’ করা যায়। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ বলতে হয়। পুলিশে ডায়েরিও করতে হয়। নতুন সিম কার্ড চালু করার সময়ে পুলিশে অভিযোগ করার সেই নথি দেখা হয়। এই জালিয়াতেরা এত কিছু করল কী ভাবে?

লালবাজারের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশের থেকে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টের তথ্য পেয়েছিল জালিয়াতেরা। সেখানে গ্রাহকের ফোন নম্বর, নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা— সবই ছিল। সে সব ব্যক্তিগত তথ্য জানিয়েই সিম ব্লক করেছিল জালিয়াতেরা। এমনকী তদন্তকারীরা জেনেছেন, নতুন সিম কার্ড তোলার ক্ষেত্রে তারা পুলিশের স্ট্যাম্প জাল করে ভুয়ো জেনারেল ডায়েরির নথিও তৈরি করেছিল। রাজ্য সরকারের সাইবার সংক্রান্ত মামলার বিশেষ কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, অনলাইন বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে মোবাইল পরিষেবার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেই সব নির্দেশিকা ঠিক মতো মানা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির পাশাপাশি সাইবার আইনও প্রয়োগ করা যেতে পারে।’’

পুলিশ জানায়, টেলিকম সংস্থাগুলির কিছু গাফিলতিতে যেমন অপরাধীরা সিম জালিয়াতির সুবিধা পাচ্ছে, তেমনই কাশীপুরের ঘটনায় ‘গাফিলতি’-ই বাঁচিয়ে দিয়েছে গ্রাহককে। কী ভাবে? তদন্তকারীরা বলছেন, সাধারণত এমন ঘটলে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সিম ব্লক করা হয়। কিন্তু ওই ক্ষেত্রে কোনও কারণে টেলিকম পরিষেবা সংস্থা দু’ঘণ্টার মধ্যে সিম কার্ড বন্ধ করতে পারেনি। ‘‘সেই গাফিলতিতেই এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন ওই গ্রাহক,’’ মন্তব্য এক পুলিশ অফিসারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন