লঞ্চ সদ্য জেটিতে থেমেছে। যাত্রী নামাও শুরু হয়নি। তার মধ্যেই জেটি থেকে লাফিয়ে লঞ্চে উঠে পড়ছেন যাত্রীরা। এ ভাবে উঠতে গিয়ে বেশ কয়েক বার জেটি এবং লঞ্চের মাঝে ফাঁকা জায়গা দিয়ে গঙ্গায় পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কলকাতার বাবুঘাট, ফেয়ারলি বা চাঁদপাল ঘাটের চেনা ছবিটা পাল্টায়নি এতটুকু। এ কথা মানছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারাই। সে কারণে রাজ্যের মোট ৬৮টি জেটির নিরাপত্তা ঢেলে সাজা শুরু হল। পথ নিরাপত্তার পাশাপাশি জলপথ নিরাপত্তার এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে ইতিমধ্যেই দরপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে ৬৯৬টি জায়গায় লঞ্চ এবং ভুটভুটিতে যাত্রীরা নদী পারাপার করেন। তার মধ্যে ৩৭৭টিতে লোহার জেটি রয়েছে। কিন্তু প্রায় প্রতিটিতেই যে যাত্রী নিরাপত্তার যথেষ্ট খামতি রয়েছে, তা মানছেন দফতরের কর্তারাই। এর মধ্যে ২৯টি জেটি রয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সারফেস ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন’ (ডব্লিউবিসিএসটিসি)-এর অধীনে। বাকিগুলি জেলা পরিষদ, পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে রয়েছে। যে সমস্ত জেটি জেলার অধীনে পড়ছে, সেখানে জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে কাজ হবে বলে জানান এক কর্তা। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা।
কী কী ভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে?
এক কর্তা জানান, নদীর পাড় থেকে জেটিতে ওঠার যে সেতু থাকে, তার মুখেই একটি দরজা বসানো হবে। অর্থাৎ, জেটিতে লঞ্চ পৌঁছনো মাত্রই যে ভাবে যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে উপরে ওঠেন, সেটা আটকাতেই এই ব্যবস্থা। লঞ্চ থেকে সমস্ত যাত্রী না নামা পর্যন্ত ওই গেট খোলা হবে না। ফলে কোনও যাত্রীই সেতু পার হয়ে লঞ্চে উঠতে পারবেন না। ফলে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যাবে। এ ছাড়া, সামনে ছাড়া জেটির গোটা অংশেই লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা হবে। বর্তমানে গোটা অংশই খোলা অবস্থায় পড়ে থাকে।
এ তো গেল নিরাপত্তার প্রসঙ্গ। নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা বসানো হবে জে়টি চত্বরে। হাই মাস্ট আলো বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কিন্তু মাত্র ৬৮টি জেটিকেই কী কারণে বেছে নেওয়া হল?
দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যের সমস্ত জেটি ঘাটের উপরে সমীক্ষা চালিয়েছে জেলা প্রশাসন এবং ডব্লিউবিসিএসটিসি। তিনি বলেন, ‘‘যে ৬৮টি ফেরিঘাটে সব থেকে বেশি যাত্রী নদী পারাপার করেন, সেগুলিকেই প্রথম পর্যায়ে বেছে নেওয়া হয়েছে। যেমন, এ ক্ষেত্রে বাবুঘাট, হাওড়া, ফেয়ারলি, চাঁদপাল, আহিরীটোলা ঘাটের কাজ হবে প্রথম পর্যায়েই। সেই কাজ শেষ হলে বাকি ফেরিঘাটের সংস্কার করা হবে।’’
দফতর সূত্রের খবর, নিরাপত্তার মধ্যে আরও একটি পদক্ষেপকে যোগ করার কথা ভাবা হয়েছে। জেলার দিকে অন্ধকার নদী দিয়েই লঞ্চ যাতায়াত করে। সে ক্ষেত্রে লঞ্চের উপরে আলো লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।