পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে রাজ্যের স্কিন ব্যাঙ্ক

মাস কয়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় জখম এক প্রৌঢ়ের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিয়ে চোখ ও ত্বক প্রতিস্থাপনের জন্য দেহ এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ফি দিনের মতোই রান্না করতে গিয়ে ঘটেছিল বিপত্তি। কয়েক মাস আগে, আগুনে পুড়ে গিয়েছিলেন গড়িয়ার এক প্রৌঢ়া। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল স্থানীয় এক নার্সিংহোমে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে জানানো হয়, তাঁর দেহের পঞ্চান্ন শতাংশ অংশ পুড়ে গিয়েছে। এর পরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা জানান, সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য ত্বক প্রতিস্থাপন জরুরি। কিন্তু হাসপাতালে স্কিন ব্যাঙ্ক থাকলেও, সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় ত্বক প্রতিস্থাপন করা যায়নি। যার জেরে মৃত্যু হয় ওই প্রৌঢ়ার।

Advertisement

মাস কয়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় জখম এক প্রৌঢ়ের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিয়ে চোখ ও ত্বক প্রতিস্থাপনের জন্য দেহ এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতাল চক্ষু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলেও ত্বক সংরক্ষিত করা যায়নি। অভিযোগ, হাসপাতাল জানায়, পর্যাপ্ত কর্মী নেই বলে ত্বক নেওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: পুজোয় চুরি বন্ধে সজাগ হোন

Advertisement

এই ঘটনাগুলি ব্যতিক্রম নয় বলেই জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, স্কিন ব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে কিন্তু কার্যকারিতার দিক থেকে কি সাফল্য পেয়েছে?

পুড়ে যাওয়া রোগীদের সুস্থ করতে ২০১৩ সালে রাজ্যে একমাত্র স্কিন ব্যাঙ্ক তৈরি হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সাড়ে চার বছর কেটে গেলেও পোক্ত হয়নি পরিকাঠামো।
এখনও পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে পরিষেবায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কোনও ব্যক্তির ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়ার পরে তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। ত্বক এবং চোখ তৎক্ষণাৎ প্রতিস্থাপন না করলে সংরক্ষণও করা যায়। এ রাজ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই ‘আই ব্যাঙ্ক’ রয়েছে। যেখানে অঙ্গদাতার চোখ সংরক্ষিত থাকে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহার হয়। একই ভাবে অঙ্গদাতার দেহ থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ত্বক তুলে নিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বিশেষ কিছু রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারে তা সংরক্ষণ করা হয়। পরে প্রয়োজন মতো সেই ত্বক রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করেন প্লাস্টিক সার্জেনরা। অঙ্গদাতার দেহ থেকে ত্বক তোলা এবং তাঁকে সংরক্ষণ করার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী জরুরি। কারণ এই সংরক্ষণের কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএসকেএম হাসপাতালের স্কিন ব্যাঙ্কে এই কর্মীর সঙ্কট চরমে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন যে, এক জন কর্মী ছুটি নিলে কাজ প্রায় থমকে যাচ্ছে। এক জন কর্মীকে টানা ছ’ থেকে আট ঘণ্টার উপরে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু দিনে একাধিক জনে ত্বক পাওয়া গেলেও কর্মীর অভাবে তা নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে দাতা পাওয়া গেলেও পরিকাঠামো পর্যাপ্ত না থাকার জেরে ত্বক সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। যার জেরে বহু অগ্নিদগ্ধ রোগী পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রজ রায়। স্কিন ব্যাঙ্কের সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও পরিকল্পনা করছেন না। ত্বক প্রতিস্থাপনের জন্য সামান্য ২০০ টাকার ব্লেড কেনার টাকা মঞ্জুর করেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ করে পরিকাঠামোগত উন্নতি ঘটিয়ে এই ব্যাঙ্ককে কার্যকর করতে পারলে অসংখ্য রোগী উপকৃত হবেন। কর্তৃপক্ষের এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা জরুরি।’’

যদিও পরিষেবায় সমস্যার অভিযোগ মানতে নারাজ এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিষেবায় কোনও সমস্যা হচ্ছে না। তবে স্কিন ব্যাঙ্কের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নতির কাজ চলছে। স্বাস্থ্য দফতর পুরো বিষয়টি দেখছে।’’

স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘কর্মীর অভাব রয়েছে। সব কিছু দ্রুত করা সম্ভব নয়। পরিকাঠামোগত উন্নতিতে একটু সময় লাগবে। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ স্কিন ব্যাঙ্কের জন্য কর্মীর আবেদন করেছেন। দ্রুত নিয়োগের কাজ শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন