Coronavirus Lockdown

ছোট ছোট প্রচেষ্টা গড়ছে শিক্ষক-পড়ুয়া বন্ধন

কয়েক জন পড়ুয়ার ইন্টারনেট সংযোগে অর্থ সাহায্য করছেন রাজ্যের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান ও মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৩:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্কুল বন্ধ তিন মাসেরও বেশি। সিলেবাস শেষ করতে তাই বেশির ভাগ স্কুলে অনলাইনেই চলছে পড়াশোনা। যার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু লকডাউনে রুজিরুটিতে টান পড়ায় অনেক অভিভাবকই এই পদ্ধতিতে সন্তানের পড়াশোনা চালাতে ইন্টারনেটের টাকা দিতে পারেননি। এমনকি অনলাইন ক্লাস করতে না পারায় আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কেরলের মালাপ্পুরম জেলায় এক নবম শ্রেণির ছাত্রী পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কায় আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা লকডাউনের শুরুর দিকে সামনে এসেছিল। মোবাইল ফোন খারাপের জন্য ক্লাস করতে না পারায় সম্প্রতি আত্মঘাতী হয়েছে বালির নিশ্চিদার এক দশম শ্রেণির ছাত্রী।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষকেরাও এগিয়ে আসছেন। কয়েক জন পড়ুয়ার ইন্টারনেট সংযোগে অর্থ সাহায্য করছেন রাজ্যের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা। কঠিন সময়ে ছোট ছোট প্রচেষ্টা সমাজের মেরুদণ্ডকে আরও দৃঢ় করবে বলেই আশা সব মহলের।

অনলাইনে ক্লাস করতে পারছিল না হাওড়ার মৌড়িগ্রামের কাছে দুইল্যা পাঁচপাড়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী শেখ মারিয়ম। ছাত্রীর পাশে দাঁড়ান স্কুলেরই রসায়নের শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা ঘোষ। শিক্ষিকা মারিয়মের ফোন রিচার্জ করে দেওয়ায় এখন অনলাইন ক্লাস করতে পেরেছে সে। মারিয়মের বাবা পেশায় দর্জি। মারিয়মের কথায়, “শর্মিষ্ঠাদি, যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটা ভুলতে পারব না। এখন নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করছি।”

Advertisement

শুধু শর্মিষ্ঠা ঘোষ নামে ওই শিক্ষিকাই নন এ ভাবে এগিয়ে আসছেন আরও শিক্ষক-শিক্ষিকা। যেমন, বাংলার শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী বর্ণালী মান্না জানাচ্ছে, গত এক মাস বাড়িতে থাকলেও দিদিমণি তাদের প্রতিদিন ফোন করে জানতে চান, পড়া নিয়ে কোনও সমস্যা আছে কি না।” হাওড়ার পাঁচলা এ এম হাইস্কুলে মোশরেফা, হাবিবারাও পাশে পেয়েছে শিক্ষক এস এম শামসুদ্দিনকে।

বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার ফোন এক মাসের জন্য রিচার্জ করে দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের সালারের একটি স্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক। দশম শ্রেণির যাদব দাসের বাবা প্রান্তিক চাষি। সালার থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে সোনারন্ডি গ্রামের বাসিন্দা যাদব নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করছে। বনবয়ারিবাদ মহারাজা হাইস্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক পার্থপ্রতিম গুহের প্রতি কৃতজ্ঞ ছাত্রের কথায়, ‘‘পার্থপ্রতিম স্যর মোবাইলে টাকা না ভরে দিলে অনলাইন ক্লাসই করতে পারতাম না।’’ ওই স্কুলেরই বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির দূর্বা চট্টোপাধ্যায় ও লিপিকা পাঁজা বলে, “আমাদের সাধারণ ফোন। পাশের বাড়ির বন্ধুর অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে পার্থপ্রতিম স্যরের পাঠানো ভিডিয়ো দেখে

পড়াশোনা করছি।’’

এমন পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি বলে জানাচ্ছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। ‘শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চ’-এর রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “এই সময়ে বহু শিক্ষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাধ্য মতো পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।’’ হাওড়া জেলার স্কুল পরিদর্শক শান্তনু সিংহ বলেন, ‘‘দুইল্যা পাঁচপাড়া

হাইস্কুলের শিক্ষকেরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। সব শিক্ষককে এই মানসিকতায় উদ্ধুদ্ধ হতে হবে।’’ মুর্শিদাবাদের স্কুল পরিদর্শক অমরকুমার শীল বলেন, “দুঃসময়ে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ালে শিক্ষক-পড়ুয়ার বন্ধন আরও মজবুত হবে।’’

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “শিক্ষক সমাজ পড়ুয়াদের পাশে আছে। এর মধ্যে কোনও দ্বিচারিতা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন