বাসের অভাবের সুযোগ নিয়ে শাটল খাটছে ছোট লরি

গত সোমবার থেকে খুলে গিয়েছে বেশির ভাগ অফিস-দোকান-শপিং মল। কিন্তু পর্যাপ্ত গণপরিবহণের অভাবে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, সেই সুযোগেই রমরমিয়ে শাটল গাড়ি হিসেবে ভাড়া খাটছে মালবাহী ছোট লরিগুলি। দূরত্ব-বিধি মেনে চলা তো দূর, তাৎক্ষণিক বিপদ নিয়েও কোনও সতর্কতা নেই সেই সব গাড়িতে। অভিযোগ, সব দেখেও চুপ কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০৬:০৯
Share:

নিরুপায়: মিলছে না পর্যাপ্ত গণপরিবহণ। বাধ্য হয়েই তাই ছোট মালবাহী গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে কর্মস্থলে পৌঁছচ্ছেন বহু মানুষ। ছবি: সুমন বল্লভ

মালবাহী ছোট লরির চালকের পাশে এক জনের আসনে বসেছেন দু’জন। অবস্থা এমন যে গিয়ার নিয়ন্ত্রণেরও জায়গা নেই! পিছনেও গাদাগাদি ভিড়। সিগন্যালে গাড়ির গতি সামান্য কমতেই ডালা ধরে ওঠার চেষ্টায় ঝুলে পড়লেন আরও কয়েক জন। কারও জুতো ডালায় আটকে ছেঁড়ার উপক্রম, কাউকে আবার বুকের কাছে জামা ধরে টেনে তুললেন বাকিরা।

Advertisement

গত সোমবার থেকে খুলে গিয়েছে বেশির ভাগ অফিস-দোকান-শপিং মল। কিন্তু পর্যাপ্ত গণপরিবহণের অভাবে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছতে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, সেই সুযোগেই রমরমিয়ে শাটল গাড়ি হিসেবে ভাড়া খাটছে মালবাহী ছোট লরিগুলি। দূরত্ব-বিধি মেনে চলা তো দূর, তাৎক্ষণিক বিপদ নিয়েও কোনও সতর্কতা নেই সেই সব গাড়িতে। অভিযোগ, সব দেখেও চুপ কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা।

তবে শুধু ছোট লরিই নয়, আনলক-১ পর্বে হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে ওঠা এমনই হাজার হাজার শাটল গাড়ি কালঘাম ছোটাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের। কারণ, বাস-অটো-ট্যাক্সি নিয়ে নানা পরিকল্পনা চললেও শাটল গাড়ির ক্ষেত্রে কী করা হবে, কেউ জানেন না! নিয়মিত স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার, চালক ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখারও কেউ নেই! চড়া ভাড়া হাঁকা ঠেকাতেও নেই কোনও ভাবনা।

Advertisement

পরিবহণ দফতরের দাবি, বিষয়টি পুলিশের দেখার কথা। পুলিশের আবার বক্তব্য, নাকা তল্লাশি চলছে। ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু শাটল গাড়ির চালকদেরই বড় অংশের দাবি, তল্লাশির কড়াকড়ি শুরু হচ্ছে সন্ধ্যার পর থেকে। তার আগে সারা দিন গাড়ি চালালেই তাঁদের পুষিয়ে যায়।

লকডাউনে আড়াই মাসেরও বেশি সময় চাকা বন্ধ ছিল উল্টোডাঙা থানা সংলগ্ন স্ট্যান্ডের ছোট মালবাহী গাড়িগুলির। তবে আমপানের পরে ত্রাণ পৌঁছনো থেকে পড়ে যাওয়া গাছ সরানোর কাজে চলে যায় সেখানকার ৬২টির মধ্যে ৪৮টি ছোট লরি। আর জুনের শুরু থেকে বসে নেই কোনও গাড়িই। স্ট্যান্ডের ইউনিয়নের সভাপতি রবি পাল বললেন, “ছেলেগুলো এত দিন বসে ছিল। এখন শাটলে ভাড়া খাটছে।” কিন্তু শাটলে লরি ভাড়া খাটানো তো বেআইনি? রবির বক্তব্য, “কত কিছুই তো বেআইনি হয়। যাঁরা অফিস যাচ্ছেন, তাঁদের তো উপকার হচ্ছে!”

বারাসতের সুভাষনগরের বাসিন্দা গোপাল সরকার দোকানে দোকানে চানাচুর, ঝুরিভাজা পৌঁছে দেবেন বলে তিন চাকার মালবাহী গাড়ি কিনেছিলেন। সেটিই এখন কয়েক জনকে কলকাতার কর্মস্থলে পৌঁছে দিচ্ছে। ফেরার পথে গাড়িটি যাত্রী তুলছে আরও কয়েক ঘণ্টা। একাধিক ভ্রমণ সংস্থাও এই মুহূর্তে শাটল ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। মুচিবাজারের একটি সংস্থার মালিক বললেন, “কোনও কাজ নেই। গাড়িগুলোর কিছু তো ব্যবস্থা করতে হবে! সাদা নম্বর প্লেটের শাটল গাড়ির এখন খুব কদর। পুলিশও কম ধরে।”

কালীঘাট রোডের সম্রাট ঘোষ আবার বললেন, “গাড়িটা অ্যাপ-ক্যাব হিসেবে চালাতাম। এখন ন’টার পরেই অ্যাপ-ক্যাব বন্ধ। নিজের লোক নিয়ে যাচ্ছি বলে আরও রাত পর্যন্ত শাটল খাটা যায়। তা ছাড়া, পুলিশও এখন সে ভাবে ধরে না।” কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার যদিও বললেন, “শাটল গাড়ি নিয়ে আমরাও ভাবছি। মোড়ে মোড়ে কড়া নাকা তল্লাশি চলছে। ধরা পড়লেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তা হলে তল্লাশির ফাঁক গলে যাত্রী বোঝাই ছোট লরি চলছে কী করে? উত্তর নেই পুলিশ-প্রশাসনের কারও কাছেই।

শাটল গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় সুবিধা হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন উত্তর শহরতলি থেকে মধ্য কলকাতায় চাকরি করতে আসা সুদীপ দাস। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘বাসের জন্য সকাল-বিকাল দেড়-দু’ঘণ্টা

করে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব। বেআইনি কি না, জানি না। কিন্তু শাটল পেয়ে গেলে তাতেই উঠছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন