পুলিশ কুকুরদের প্রশিক্ষণ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বর্ধমান বিস্ফোরণের প্রেক্ষিতে এ বার নড়েচড়ে বসছে কলকাতা পুলিশের সারমেয় বাহিনীও। লালবাজার সূত্রে খবর, নাশকতা এড়াতে মহানগরের পুলিশ-কুকুরদের ছড়িয়ে দেওয়া হবে নানা প্রান্তে। যাতে কোনও এলাকায় বোমাতঙ্ক হলে তারা চটজলদি সেখানে পৌঁছে যেতে পারে।
কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াড বর্তমানে রয়েছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলেই (পিটিএস)। সেখানে রয়েছে ২৬টি কুকুর। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে একটি কেনেলে আরও ১০টি কুকুর রাখা হয়। তবে প্রয়োজনে পিটিএস থেকেই পুলিশ কুকুরদের কোনও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এই কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়েই নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হয় গোয়েন্দাদের। কী রকম?.
লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, রাজ্যে পালাবদলের পরে কলকাতা পুলিশের এলাকা বেড়েছে। ফলে বন্দর এলাকার নাদিয়াল, উত্তরের সিঁথি কিংবা দক্ষিণ শহরতলির বাঁশদ্রোণীতে বোমাতঙ্ক হলে সেখানে পৌঁছতে যানজটে রীতিমতো নাকাল হতে হয়। বর্ধমান কাণ্ডের পরে লালবাজারের কর্তারা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যার। গোয়েন্দারা বলছেন, কলকাতায় নানা গুরুত্বপূর্ণ বাড়ি কিংবা স্পর্শকাতর এলাকা থাকায় নাশকতার আশঙ্কা ছিলই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টেও উঠে এসেছে। বর্ধমান কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত ও নিহত শাকিল মেটিয়াবুরুজে ডেরা বেঁধেছিল বলেও উঠে এসেছে তদন্তে। “এই পরিস্থিতিতে শহরে জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই ধরনের ডগ স্কোয়াড গড়ার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে,” বলছেন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ।
লালবাজার সূত্রে খবর, ডগ স্কোয়াডের ওসি প্রদীপ পাণ্ডে শীর্ষকর্তাদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। বলা হয়েছে, কলকাতা পুলিশের আটটি এলাকায় আটটি ডগ স্কোয়াড তৈরি হবে। সাধারণত, বিস্ফোরক খোঁজার কাজে ল্যাব্রাডর ও গোল্ডেন রিট্রিভার জাতীয় কুকুরই ব্যবহার করা হয়। পিটিএসে থাকা ওই জাতের কুকুরদেরই বিভিন্ন বিভাগীয় অফিসে পাঠানো হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ডগ স্কোয়াডের জন্য আরও ৩২টি কুকুর কেনা প্রয়োজন। শীর্ষকর্তারা ভাবনাচিন্তাও করছেন। “ওই ৩২টি কুকুরের মধ্যে ল্যাব্রাডর ও গোল্ডেন রিট্রিভারই বেশি। সেগুলিকেও বিভাগীয় ডগ স্কোয়াডে পাঠানো হবে,” বলছেন লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা।
লালবাজার সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে এক-একটি বিভাগের জন্য এক-একটি থানাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানেই ওই বিভাগীয় ডগ স্কোয়াড হবে। কলকাতা পুলিশের একাংশ বলছে, এই কাজের জন্য এমন থানা বেছে নেওয়া উচিত, যেখান থেকে খুব সহজেই ওই এলাকার সব জায়গায় পৌঁছনো যাবে। তা ছাড়া, বিভাগের স্পর্শকাতর এলাকাগুলির কাছাকাছি থানাও বেছে নেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা অফিসারদের মতে, শহরে বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকা রয়েছে। জঙ্গিদের কাছে ওই এলাকাগুলিই প্রাথমিক নিশানা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই এলাকাগুলির থানাতেই এই কুকুর বাহিনীকে রাখা জরুরি। এই কারণেই মধ্য বিভাগের তালতলা থানা, বন্দর বিভাগের গার্ডেনরিচ থানাকে প্রাথমিক ভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। উত্তর বিভাগের জন্য মানিকতলা এলাকায় ডিসি-র অফিসে পুলিশ কুকুরদের রাখার ভাবনাচিন্তা রয়েছে। ওই থানাগুলিতে ডগ স্কোয়াড গড়ে তোলার পর্যাপ্ত জায়গাও রয়েছে বলে লালবাজারের দাবি।
কিন্তু কবে তৈরি হবে এই নতুন ডগ স্কোয়াডগুলি?
পল্লববাবু বলছেন, “লোকাভাব ও পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি কাটিয়ে দ্রুত এই ডগ স্কোয়াড চালু করা হবে।”