দিন কয়েক আগে প্রবল গরমে হাওড়া থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে উঠেছিলেন কোন্নগরের বাসিন্দা রামতনু বসু। কিন্তু হাওড়া সেতুর মাঝামাঝি এসেই সেই বাস বিগড়ে যায়। একই ভাবে দিন কয়েক আগে হাওড়া থেকে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এসি-৫২ বাসে ওঠার কিছু ক্ষণের মধ্যেই যাত্রীরা দেখেন, বাসের বাতানুকূল যন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে না। গরমে অস্বস্তি বোধ করতে থাকায় যাত্রীরা বিষয়টি কন্ডাক্টরকে জানান। কন্ডাক্টর তাঁদের জানান, তাঁর কিছু করার নেই। কারণ, বাসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডিপোয় জানিয়ে কোনও ফল হয়নি।দেখা যায়, ওই বাসটিতে বাতানুকূল যন্ত্রের খামতি পূরণ করতে জানলার পাশে যাত্রীদের বসার আসনের উপরে ছোট মাপের বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো রয়েছে। কিন্তু সেই পাখাও বিকল। কয়েকটি পাখা আবার ভাঙা। অগত্যা গরম সহ্য করেই ভিড়ের মধ্যে যাতায়াত করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এসি বাসের নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এসি ১২, এসি ৫২, এসি ৫৪, এসি ২৪ এবং এসি ৩৭-এর মতো বহু রুটেই বাতানুকূল শ্রেণির কিছু বাসের হাল বেশ খারাপ।
বছর কয়েক আগে অতিরিক্ত আয়ের রাস্তা খুলতে সরকারি বাসে স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সেই মতো শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন রুটে বাতানুকূল বাস চালু করে রাজ্য পরিবহণ নিগম। অভিযোগ, বাতানুকূল বাস চালিয়ে নিগমের আয় বাড়লেও যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ার বদলে কমেছে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের জানা গিয়েছে, বাতানুকূল শ্রেণিতে ভলভো ছাড়াও সাধারণ এসি বাস রয়েছে। ভলভো বাসগুলির বেশির ভাগই বিমানবন্দর থেকে যাওয়া-আসা করে। ওই বাসে সমস্যা তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু নিচু মেঝের সাধারণ এসি বাসগুলির রক্ষণাবেক্ষণ কিছুটা জটিল হওয়ায় সব সময়ে মেরামতির উপযুক্ত কর্মীও মেলে না। ফলে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই অনেক সময়ে ডিপো থেকে বাস রাস্তায় নামাতে হয় বলে অভিযোগ।
দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না হওয়ায় বেশ কিছু এসি বাসের মেরামতির খরচ ২০-২৫ লক্ষ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে বলেও খবর। ফলে ওই বাসগুলিকে চিরতরে বসিয়ে দেওয়া হবে, না কি রক্ষণাবেক্ষণের বিপুল খরচের দায় নেওয়া হবে, তা নিয়ে পরিবহণ দফতরও সংশয়ে বলে খবর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রাজ্য পরিবহণ নিগমের এক আধিকারিক বলেন, “কোনও বাসে সমস্যা থাকলে মেরামতি ছাড়া ওই বাস ডিপো থেকে বার করা উচিত নয়। যাত্রীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সারা দিন রাজ্য পরিবহণ নিগমের যত বাস চলে, তার মাত্র ২০ শতাংশের মতো এসি বা বাতানুকূল শ্রেণির। কিন্তু ওই সংখ্যক বাস চালিয়েই নিগমের সারা দিনের আয়ের প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ টাকা উঠে আসে।
ফলে বাড়তি ভাড়া দিয়েও স্বাচ্ছন্দ্য না মেলায় স্বভাবতই যাত্রীদের মধ্যে পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।