প্রতীকী ছবি
কোভিডমুক্ত শংসাপত্র পাওয়ার জন্য গত তিন দিন ধরে প্রিয়জনের দেহ মর্গের হেফাজতে রেখে মানবিকতার অপেক্ষায় দিন গুনছে ভিন্ রাজ্যের একটি পরিবার। মৃত ব্যক্তির যে কোভিড হয়নি, সে বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনও বিমান সংস্থাই তাঁর দেহ নিয়ে যেতে রাজি নয়। এ দিকে, সরকারি হাসপাতালের বক্তব্য, ময়না-তদন্তের পরে ওই ব্যক্তির দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর ময়না-তদন্ত এক বার হয়ে যাওয়ার পরে আর করোনামুক্ত শংসাপত্র দেওয়া সম্ভব নয়। এমন টানাপড়েনের মধ্যে পড়েই অসহায় অবস্থায় রাজ্য প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়েছেন মৃতের ছেলে।
আদতে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের বাসিন্দা অ্যালেন ল্যাজারাস (৫৮) কলকাতা ট্রাম কোম্পানিতে হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। গত মঙ্গলবার সকালে আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। ৫৮ বছরের অসুস্থ অ্যালেনকে তড়িঘড়ি এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর সহকর্মীরা। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, পথেই মৃত্যু হয়েছে প্রৌঢ়ের। হাসপাতাল অ্যালেনকে মৃত ঘোষণা করে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে মাদুরাই থেকে বিমানে কলকাতায় চলে আসেন মৃতের কলেজপড়ুয়া ছেলে ইসাক ল্যাজারাস। সরকারি হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে বাবার দেহ তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরে দেহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁরা সমস্যায় পড়েন।
ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন)-এর নিয়ম অনুযায়ী, বিমানে ওঠার আগে যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ভাবে কোভিডমুক্ত শংসাপত্র দিতে হবে। সেই শংসাপত্র না থাকায় অ্যালেনের পরিজনেরা এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, দেহের ময়না-তদন্ত হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেওয়ার নিয়ম নেই। মৃতের আত্মীয় প্রতীপ যশোবন্ত রায় বলেন, ‘‘নিয়মের গেরোয় বিপদে পড়ে গিয়েছি। কী ভাবে দেহ ফিরিয়ে নিয়ে যাব, বুঝতে পারছি না।’’
এই পরিস্থিতিতে শহরের একটি মর্গে বাবার দেহ রেখেছেন ছেলে ইসাক। প্রতিদিন সে জন্য তিন হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে। হোটেলে থেকে অনুমতি আদায়ের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ইসাক। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, কলকাতায় থাকার খরচ জোগানোর মতো অর্থ তাঁদের নেই। এ ভাবে খুব বেশি দিন টানতে পারবেন না। প্রথম বর্ষের ওই কলেজপড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমাদের টাকাপয়সা ফুরিয়ে আসছে। যে ভাবে হোক, দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই। প্রয়োজনে সড়কপথে যাতে দেহ নিয়ে যেতে পারি, তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।’’
এ প্রসঙ্গে এসএসকেএমের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার রঘুনাথ মিশ্র জানান, ময়না-তদন্তের পরে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেহ মুড়ে তা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই অবস্থায় দেহের লালারস থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা অমূলক। তা ছাড়া, মৃতদেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায় না। তাঁর কথায়, ‘‘বিমান সংস্থা শংসাপত্রের দাবি করতেই পারে। কিন্তু এক বার দেহ হস্তান্তরিত হয়ে গেলে আর করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ নেই। সেটা নিয়ম-বহির্ভূত কাজ হবে।’’