তদন্ত: বিক্রমের সেই গাড়ি। ফাইল চিত্র
হঠাৎ ঝরে যাওয়া তরুণী মেয়ের শোকে এখনও গুটিয়ে রয়েছেন তাঁরা। তবে মেয়ের ছোট্ট প্রাণবন্ত জীবনের স্মৃতি জিইয়ে রাখতে চান সোনিকা সিংহ চৌহানের মা-বাবা।
রাতের শহরে পথ দুর্ঘটনার শিকার সোনিকার মৃত্যু নিয়ে এখন কাটাছেঁড়া করার মানসিক অবস্থা নেই চৌহান দম্পতির। সুবিচার চাইলেও সরাসরি কারও দিকে আঙুল তুলতে চান না। তবে বেসামাল চালকের গতিই যে মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে, তা নিয়ে তাঁরা ঘনিষ্ঠ মহলে আক্ষেপ করেছেন। মেয়ের পরিণতি সমাজের কাছে সতর্কতার বার্তা বয়ে আনলে আপত্তি নেই চৌহানদের। শোকের ধাক্কায় এখনও সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি তাঁরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পে সোনিকার স্মৃতি কোনও ভাবে ব্যবহার করা হলে তাঁদের ভাল লাগবে বলেই ঘনিষ্ঠ মহলে জানান কন্যাহারা মা-বাবা।
বেপরোয়া গাড়ি চালানো বা হেলমেটবিহীন সফরের মতো দুঃসাহস রুখতে বছরখানেক ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য। স্কুলে-ক্লাবে চলছে প্রচার। নেটে থিম সং প্রচার করে, পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহে নামজাদা লোকজনকে সামনে রেখে নানা ভাবে প্রকল্পে সচেতনতার কাজ হচ্ছে। চালকেরা সতর্ক হচ্ছেন বলেও রাজ্য পুলিশের ডিজি দাবি দাবি করেছেন। সোনিকার মর্মান্তিক পরিণতিও এই ভাবনার গতে ঢুকে পড়তে পারে বলে পুলিশ-প্রশাসনের কারও কারও অভিমত। সোনিকার জীবন থেমে যাওয়া, পেশাগত ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনার অপমৃত্যু— স্টিয়ারিংধারী বেপরোয়াদের চোখ খুলতে সহায়ক হতে পারে বলে তাঁরাও মনে করেন। সোনিকার ছবি দেখলেই অনেকে হয়তো সতর্ক হয়ে গাড়ি চালানোর কথা ভাববেন।
এ বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছে না লালবাজারের কর্তারা। তাঁদের মত, এখনই কিছু বলার সময় হয়নি। কারণ, সোনিকার অপমৃত্যুর তদন্ত নিয়ে ব্যস্ততা। তদন্ত যত ক্ষণ না শেষ হচ্ছে, তত ক্ষণ পথ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতায় সোনিকার ছবি বা দৃষ্টান্ত তুলে ধরে কী করা যায়, তা ঠিক করা সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছে প্রশাসনের একটি অংশ। যদিও মর্মান্তিক এই মৃত্যু যুব সমাজকে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর বিপদ বোঝাতে সহায়ক হবে— এটা অনেকেই মনে করেন। সোনিকার মা-বাবাও চান, এই দুর্ঘটনা নিয়ে জল্পনা ফিকে হলে ও তাঁরা নিজেরা খানিকটা ধাতস্থ হলে মেয়ের স্মৃতিতে যুব সমাজের কাজে লাগে, এমন কিছু করবেন। তবে আপাতত নিজেদের অন্তরঙ্গ মহলের বাইরে বেরিয়ে এ বিষয়ে কাউকে সরাসরি কিছু জানাতে চান না তাঁরা।