গতি: ঘিঞ্জি হলেও এ পাড়া কখনও থেমে থাকে না। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
দিবারাত্রি জেগে থাকা এ পাড়ায় ব্যস্ততার বিরাম নেই। রাস্তায় বসা অস্থায়ী বাজারের অন্তহীন কোলাহল আর যাতায়াতে জেরবার পথচারীর সন্তর্পণে পা ফেলা। এরই মাঝে ঠং ঠং শব্দে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলা টানা রিকশাকে দেখে মনে হয় যেন ‘কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে।’
অতীতের নাপতেহাটা থেকে পাথুরিয়াঘাটার প্রসন্নকুমার ঠাকুর স্ট্রিট হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে উত্থান-পতন, রাজকীয় বিলাস-বৈভব আর অবক্ষয়ের কাহিনি। কিছু বাড়ি ঔপনিবেশিক স্থাপত্য। এখানেই ঠাকুর, মল্লিক প্রভৃতি সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস। আজ বাঙালি হাতে গোনা।
এখানেই রয়েছে মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের প্রাসাদ, টেগোর কাসল আর মল্লিকবাড়ি। মাঝেমধ্যেই এ পাড়ায় ক্যামেরা হাতে অনেকে। পাড়াটা নিয়মিত পরিষ্কার হয় ঠিকই, তবে পরিচ্ছন্ন রাখতে বাসিন্দাদের কোনও উদ্যোগ নেই।
এখন এখানে মূলত অবাঙালিদের বসবাস। জীবনযাত্রায় সহজ-সরল মানুষগুলির মধ্যে আছে আন্তরিকতা। এখনও বিপদ নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পড়েন সকলে। এক বার বাড়ির মিটার বক্সে আগুন লাগায় পাড়ার মানুষই প্রথমে ফোন করে জানান। পরে পাঁচিল টপকে বালির বস্তা ফেলে তাঁরাই আগুন নেভান। তা করতে গিয়ে আমাদের গাড়ির উপরে বালির বস্তা পড়ে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল।
তবু এক-এক সময়ে এ পাড়ার পরিবেশ বড় বিরক্তিকর। পার্কিং-এর সমস্যা এখানে খুব। বেশির ভাগ সময়ে বাড়ির সামনে ম্যাটাডর, ছোট লরি দাঁড়িয়ে থাকায় ঢুকতে বেরোতে খুব অসুবিধা হয়। কারা যেন গাড়ি রেখে উধাও হয়ে যান।
এত বছরেও বদলাল না বৃষ্টিতে পাড়ার জল জমার ছবিটা। এ পাড়ায় আজও রয়েছে এক নিরাপত্তা বলয়। যত রাতেই ফিরি না কেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় না। কাছেই বাজার থাকায় এ পাড়াটা রাতে ঘুমোয় না।
এ পাড়াই দিয়েছে জীবনের অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা। তেমনই পাড়ার মানুষের মধ্যে রয়েছে সহনশীলতা। সকালে পাড়ার রাস্তায় বাজার বসে। সে সময়ে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত এক অভিজ্ঞতাই বটে! তবে সহজ-সরল দোকানিরাও নির্দ্বিধায় পসরা সরিয়ে জায়গা করে দেন গাড়ি যাওয়ার। তেমনই মাঝেমাঝে রাস্তা বন্ধ করে ট্যুর্নামেন্ট কিংবা ছট পুজোও সয়ে নেয় এই পাড়া।
লেখক শিক্ষক ও নৃত্যশিল্পী