লিঙ্গবৈষম্য এড়াতে বিশেষ লোগো

সাধারণ শৌচালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন রেখে সম্প্রতি সংবাদপত্রের শিরোনামে এসেছেন শোভন। পরিচিত হয়েছেন ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ নামে।

Advertisement

দীপাঞ্জন মাহাত

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
Share:

নতুন: সরকারি শৌচাগারের বাইরে লাগানো লোগো। শুক্রবার গোলপার্কে। নিজস্ব চিত্র

শৌচালয়ের বাইরে লাগানো একটি বিশেষ লোগো। পাশে লেখা, ‘আমরা সবাই সমান, কেউ কাউকে যেন না করে অপমান।’ লোগোও বলছে সে কথাই। লোগোর পোশাকি নাম ‘জেন্ডার সার্কেল’। লিঙ্গবৈষম্যের বিরোধিতায় এই বিশেষ লোগোকে হাতিয়ার করে পরিবর্তনের পথ দেখালেন, শহরের কলেজ পড়ুয়া শোভন মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার গোলপার্কের একটি শৌচাগারের বাইরে এই লোগো-সহ বোর্ডটি লাগানো হল।

Advertisement

কিন্তু কী এই ‘জেন্ডার সার্কেল’? বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা শোভন বলেন, ‘‘এই লোগোতে স্ত্রী-পুরুষ-তৃতীয় লিঙ্গ, কাউকেই আলাদা ভাবে দেখানো হবে না। একটি বৃত্তের মধ্যেই থাকবে ওই তিন জনের আদল।’’ শোভনের কথায়, ‘‘আমরা সবাই সমান। এটা বোঝাতেই এই উদ্যোগ।’’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা আ়ট নম্বর বরোর চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর চৈতালিদেবী।

সাধারণ শৌচালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন রেখে সম্প্রতি সংবাদপত্রের শিরোনামে এসেছেন শোভন। পরিচিত হয়েছেন ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ নামে। এ বার তৃতীয় লিঙ্গ এবং রূপান্তকামীদের পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী শোভন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের গোলপার্কে, পুরসভার একটি সাধারণ শৌচালয়ে বসল এই ‘জেন্ডার সার্কেলে’র লোগো।

Advertisement

সাধারণত, সরকারি শৌচালয়গুলির বাইরে পুরুষ এবং মহিলাদের আলাদা দু’টি লোগো থাকে। তাতেই আপত্তি শোভনের। তাঁর কথায়, ‘‘এতে প্রায়ই তৃতীয় লিঙ্গ এবং রূপান্তরকামীরা সমস্যায় পড়েন। এই লিঙ্গবৈষম্য মুছতেই জেন্ডার সার্কেল বিষয়টি মাথায় আসে।’’

কলেজপড়ুয়া শোভন জানালেন, একটি ছোট পত্রিকা চালাতেন তিনি। সেই পত্রিকায় রূপান্তরকামীদের নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখার সময়ে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জেনেছিলেন, শৌচাগার নিয়ে তাঁদের প্রভূত সমস্যার কথা, অপমানের কথা। ‘‘তার পরেই মাথায় এসেছিল এ রকম কিছু করার ভাবনা।’’ শোভনের দাবি, সাধারণ শৌচালয়ে এমন লোগো লাগানোর নজির আর কোথাও নেই। এই প্রসঙ্গে বৈশ্বানরবাবু বলেন, ‘‘ছেলেটি আমাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে। খুবই প্রশংসনীয়। আমার বরোর অন্য ওয়ার্ডেও এটি চালু করার জন্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলব। ছেলেটির কাজকে সমর্থন করব।’’

প্রসঙ্গত, গত বছর শোভন তৃতীয় লিঙ্গ এবং রূপান্তরকামীদের জন্য ‘ত্রিধারা’ বলে একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন। ওই প্রকল্পে ১১২ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার কয়েকটি শৌচালয়ে রূপান্তরকামীদের জন্য একটি আলাদা ঘর বরাদ্দ করা জন্য পদক্ষেপ করেছিলেন। সে সময় ১১২ নম্বর ছাড়াও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের শৌচালয়ের একটি করে ঘরে রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা স্টিকার লাগিয়েছিলেন তিনি।

‘ত্রিধারা’র সঙ্গে ‘জেন্ডার সার্কেলে’র তফাত প্রসঙ্গে শোভন বললেন, ‘‘শৌচালয়ের বাইরেই যদি লোগো লাগানো থাকে, তা হলে রূপান্তরকামীদের যেমন বুঝতে সুবিধা হবে বা তাঁরা হেনস্থা এড়াতে পারবেন, তেমনই লিঙ্গবৈষম্যও দূর করা যাবে।’’ এ ব্যাপারে রাজ্য রূপান্তরকামী উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য রঞ্জিতা সিংহ বলেন, ‘‘যুব সম্প্রদায়ই পারবে সমাজ পরিবর্তন করতে। এক জন পড়ুয়া হয়ে, কোনও আর্থিক সাহায্য ছাড়া শোভন যে কাজ করছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমরা ওঁর পাশে আছি।’’

স্নাতকোত্তরের ছাত্র শোভনও চান সকলে তাঁর পাশে থাকুন। আর পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তবায়িত হোক তাঁর ভাবনাপ্রসূত প্রকল্পগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন