Arms Smuggling

Arms smuggling: সারা বছর চলে অভিযান, শহরে ‘ঢোকেই না’ অস্ত্র, তবু অবাধে গুলি চলে কলকাতায়!

শহরে একের পর এক ‘শুটআউট’-এর ঘটনা ঘটছে কী করে? কোথা থেকে, কারা নিয়ে আসছে সেই সব অস্ত্র? পুলিশ-প্রশাসনের কাছে কি আগাম কোনও খবরই থাকছে না?

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো কি একেই বলে? পুলিশের দাবি, বেআইনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান নাকি সারা বছরই চলে। উৎসবের মরসুম এলে যার মাত্রা আরও বাড়ে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলার বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা-ই যদি হবে, তা হলে শহরে একের পর এক ‘শুটআউট’-এর ঘটনা ঘটছে কী করে? কোথা থেকে, কারা নিয়ে আসছে সেই সব অস্ত্র? পুলিশ-প্রশাসনের কাছে কি আগাম কোনও খবরই থাকছে না? পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের অনুমান, অস্ত্র আসছে ভিন্ রাজ্য থেকে, চোরাপথে। যদিও কর্তারা তা মানতে নারাজ।

Advertisement

এ শহরে গত কয়েক সপ্তাহে গুলি চালানোর একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। কোথাও মধ্যরাতে প্রকাশ্য রাস্তায় গাড়ি ঘিরে ধরে ব্যবসায়ীকে গুলি করা হয়েছে। কোথাও আবার প্রোমোটিং সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে রাতদুপুরে বাড়িতে ঢুকে গুলি চালিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। যদিও পরে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে তারা। কিন্তু একের পর এক এমন ঘটনায় শহরের নিরাপত্তা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। শহরবাসীর প্রশ্ন, এত অস্ত্র কলকাতায় ঢুকছে কী ভাবে? তা ছাড়া, দুষ্কৃতীরা অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দেদার ঘুরে বেড়ানোর সাহসই বা পাচ্ছে কোথা থেকে? বালিগঞ্জের বাসিন্দা সুশান্ত মণ্ডলের কথায়, ‘‘এ ভাবে চললে তো রাতের শহরে চলাফেরা করাই মুশকিল হয়ে উঠবে!’’ পুলিশকর্মীদের একাংশের ধারণা, বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ঝাড়খণ্ড হয়ে চোরাপথে শহরে আসছে। আবার বিহার থেকে মালদহ, মুর্শিদাবাদ হয়েও তা শহরে আসতে পারে। বেশ কয়েক বার হাতবদলের পরেই শহরে এসে পৌঁছচ্ছে বেআইনি অস্ত্রের সম্ভার। অস্ত্রের কারবারিরা এই চোরাচালানের কাজে মূলত সড়কপথই ব্যবহার করে বলে জানা গিয়েছে।

পুলিশেরই অন্য একটি অংশের আবার ধারণা, এ রাজ্যে অস্ত্র আসছে বিহারের মুঙ্গের থেকে দুমকা হয়ে সড়কপথে। কখনও আবার খানিকটা ঘুরপথে ধানবাদ, আসানসোল হয়েও চলে রাইফেল, পিস্তল, ওয়ান শটার ও কাট্টা বন্দুকের চোরাচালান। কয়েক সপ্তাহ আগে বিহারের বেগুসরাই থেকে কোচবিহার হয়ে এ রাজ্যে অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দিনহাটার এক যুবক। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় বন্দুক ও কার্তুজ।

Advertisement

এ শহরেও কি বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানা আছে? পুলিশকর্মীদের অনেকেরই মতে, শহর বা শহরতলির আশপাশে আস্তানা গেড়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে ‘কারিগর’ আনিয়ে অস্ত্র তৈরি করানোর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। খাস কলকাতায় বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ‘গ্রুপ’ তৈরি করে অস্ত্র কেনাবেচার তথ্যও হাতে এসেছে পুলিশের। বেশ কিছু দিন আগে মানিকতলা থানার পুলিশ এক যুবককে গ্রেফতার করার
পরে ওই ভাবে অস্ত্র বিক্রির কথা জানতে পারে।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানালেন, মুঙ্গের থেকে সারা বছর অস্ত্র আসে না। মূলত কোনও নির্বাচন আসন্ন হলে তখনই দুষ্কৃতীদের মধ্যে অস্ত্র মজুত করার প্রবণতা বেশি মাত্রায় দেখা যায়। নির্বাচন শেষ হলেই সেই সব অস্ত্র অন্যত্র বিক্রি করে দেয় তারা। তা হলে কি উপনির্বাচনের আগে গন্ডগোল পাকাতেই অস্ত্র মজুত করা হচ্ছে শহরে? করোনার ছোঁয়াচ এড়াতে পুলিশি নজরদারিতে যে সাময়িক শিথিলতা এসেছে, সেই সুযোগটাই কি নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা?

লালবাজারের কোনও কর্তাই অবশ্য নজরদারির অভাব বা শহরে অস্ত্র পাচারের কথা মানতে চাননি। বরং গুলি-কাণ্ডের পর শহরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেই দাবি তাঁদের। পুলিশের এমনই এক কর্তা বললেন, ‘‘সারা বছরই নজরদারি চলে। বেআইনি অস্ত্র রুখতে বিশেষ অভিযানও চালানো হয় শহরে। এমনকি, শহরে ঢোকার প্রতিটি মুখে নজরদারি চলে।’’ কিন্তু তার পরেও দুষ্কৃতীদের হাতে অস্ত্র আসছে কী ভাবে? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি কর্তাদের কাছ থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন