সুবিচার পাব কি, বুঝতে পারছি না

স্ত্রীধন যে দিন আনতে গেলাম, তার আগের দিনই জামিন পায় বিশ্বদেব। জিনিস নেওয়ার সময়ে বিশ্বদেব ঠায় দাঁড়িয়েছিল।

Advertisement

সুপ্রীতি বসু (শ্রাবন্তীর মা)

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

শ্রাবন্তী মিত্র

বধূহত্যার মামলায় শেষ পর্যন্ত কী হয় বলুন তো! হরিদেবপুরে কি আমার মেয়ের মতোই মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে? ওখানে শুনলাম, ভাঙচুর হয়েছে। আমরা আইনের পথে ওদের সাজা চাই। তবে সুবিচার পাব কি না, বুঝতে পারছি না। পাড়া-প্রতিবেশীদের অনেকে বলছেন, কিস্যু হবে না। এই কথাটা শুনলেই বুকের ভিতরটা কেমন করে ওঠে। ৫৪ বছর বয়সে সুবিচারের আশায় আদালতে দৌড়োদৌড়ি করছি। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারা মানে যে গোপন জবানবন্দি, মেয়েকে হারিয়ে তা জানতে হল! গত ৯ অগস্ট দমদম ক্যান্টনমেন্টে পশ্চিম রবীন্দ্রনগরে বান্টি (শ্রাবন্তী মিত্রর ডাকনাম) শ্বশুরবাড়ির একতলায় আমার জামাই এবং আমি বসেছিলাম। মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসব বলে গিয়েছিলাম। একতলায় আমাদের ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন হেনস্থা করছিলেন। এরই মধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি বান্টি নেই। তার পরের ঘটনা তো সকলেরই জানা। আমার মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে, এটা বিশ্বাস করি না। ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। আদালতে সেই লড়াই চলছে। বিয়ের ছ’মাসের মধ্যে আমার মেয়ের এমন করুণ পরিণতি হল। কষ্ট করে এমএ পাশ করেছিল। রেজাল্টটা পর্যন্ত আনতে যেতে পারল না। যারা মেয়েকে মেরে ফেলে, তারা এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিয়ে করতে যায় কেন? হরিদেবপুর তো শুধু নয়, আরও তো অনেক ঘ়টনা শুনছি। বান্টির স্বামী বিশ্বদেব মিত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ঠিকই। তবে সে এখন জামিনে মুক্ত। এই মামলায় বড়জা, ভাসুর এবং মেজো জায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল। তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি। বিশ্বদেবের পরে ওঁরাও অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন। চার্জশিট এখনও পেশ হয়নি। শুনেছি, আইও অসুস্থ হওয়ায় ছুটিতে আছেন। তাই চার্জশিট পেশে দেরি হচ্ছে।

Advertisement

স্ত্রীধন যে দিন আনতে গেলাম, তার আগের দিনই জামিন পায় বিশ্বদেব। জিনিস নেওয়ার সময়ে বিশ্বদেব ঠায় দাঁড়িয়েছিল। দেখছিল, তালিকা বহির্ভূত কিছু নিচ্ছি কি না। এ রকম মানুষের সাজা হবে না? বড় মেয়ে শবরী বলছে, ‘কোথায় গেলে ন্যায়বিচার পাব, বুঝতে পারছি না’। ওদের সাজা না হলে শান্তি পাব না। আমার স্বামী (হরিপদ বসু) শিল্পী মানুষ। মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে এক দিনও তুলি হাতে তোলেননি। মা হয়ে মেয়ের দেহ দেখার জন্য লাশঘরে ঢুকতে হয়েছে। চোখের সামনে লাল নাইটি পরা মেয়ের ঝুলন্ত দেহ ভেসে ওঠে। দাঁত খিঁচিয়ে ছিল। ঠোঁট ফুলে গিয়েছিল। মেয়েটার যারা এই হাল করল, তাদের সাজা হবে না? সুবিচার পাব না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন