পাথুরিয়াঘাটার আতঙ্ক ফিরিয়ে ভাঙল বাড়ির সিঁড়ি

এ বারের ঘটনাস্থল কলকাতা পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫এ, বিপ্লবী পুলিন দাস স্ট্রিট। ভাগ্যক্রমে আর একটি পাথুরিয়াঘাটা-কাণ্ড হওয়ার থেকে রক্ষা পেয়েছে কলকাতা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪২
Share:

ভগ্নদশা: পুলিন দাস স্ট্রিটের বিপজ্জনক বাড়িটির এই সিঁড়িই ভেঙে পড়ে রবিবার। নিজস্ব চিত্র

ঘটনার পরম্পরা মোটামুটি একই। দুপুরে বিপজ্জনক বাড়ির কিছু কিছু অংশ খসে পড়তে থাকায় বাসিন্দারা দ্বারস্থ হয়েছিলেন পুলিশের। অভিযোগ, তেমন ভাবে পুলিশের সাড়া না পেয়ে তাঁরা ফিরে আসেন। আর তার পরেই সওয়া এক ঘণ্টার ব্যবধানে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দোতলা বাড়ির সিঁড়ি। সেই অবস্থায় শিশু-সহ জনা কুড়ি বাসিন্দা আটকে পড়েন উপরের তলায়। পরে দমকল ও পুরকর্মীরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। এ বারের ঘটনাস্থল কলকাতা পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৫এ, বিপ্লবী পুলিন দাস স্ট্রিট। ভাগ্যক্রমে আর একটি পাথুরিয়াঘাটা-কাণ্ড হওয়ার থেকে রক্ষা পেয়েছে কলকাতা!

Advertisement

কারণ, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের যে বাড়ি ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, সেখানেও একই রকম পরিস্থিতি হয়েছিল। সে ক্ষেত্রেও বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়তে দেখে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু প্রশাসনের তরফে সে ভাবে কোনও সাহায্য আসেনি। কাউন্সিলর ঘুরে যাওয়ার পরেই ভেঙে পড়ে সেই বাড়ি। মৃত্যু হয় দু’জনের।

পুলিন দাস স্ট্রিটে এ দিনের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাড়িতে মালিকেরা থাকেন না। দোতলা এবং একতলা মিলিয়ে ওই বাড়িতে ভাড়াটের সংখ্যা ৩০-৪০। বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে পড়ছে বলে এ দিন দুপুরে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় জানাতে যান ভাড়াটেদের অনেকে। তবে পুলিশের তরফে কোনও সাহায্যই পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। পঙ্কজ দাস নামে এক ভাড়াটে বলেন, ‘‘বাড়ির কিছু অংশ ভাঙছে দেখে দুপুর আড়াইটে নাগাদ থানায় যাই। কিন্তু পুলিশ কিছুই করল না। আমরা ফিরে আসার পরে পৌনে ৪টে নাগাদ বাড়ির সিঁড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে।’’ উপরে আটকে পড়েন চার শিশু-সহ ২২ জন। আতঙ্কিত অবস্থায় চিৎকার করতে থাকেন তাঁরা। খবর যায় থানায়। দমকল এবং পুরকর্মীরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।

Advertisement

শেষমেশ বাড়ির পিছন দিক দিয়ে বাসিন্দাদের নামিয়ে আনে দমকল। তাঁদের স্থানীয় একটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ সে ভাবে হতাহত না হলেও এ দিন বড় বিপদ ঘটতে পারত বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। যদিও পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) দেবাশিস সরকার বলেন, ‘‘পুলিশ সব সময়ে সক্রিয় থাকে।’’

আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার তরফেও দাবি করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়িতে ভাড়াটে-বাড়িওয়ালা বিবাদ চলছে। পুলিশ দু’পক্ষকে নিয়ে অনেক বার আলোচনা করেছে। তবু বাড়ি সংস্কার করেনি কোনও পক্ষই। থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা তো আর সংস্কার করে দিতে পারি না। এ কাজ পুরসভার।’’ স্থানীয় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাধনা বসুও বলেন, ‘‘বাড়িটিতে বিপজ্জনক বোর্ড লাগিয়েছিলাম আমরা। দ্রুত সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভাড়াটে ও মালিকেরা প্রস্তাব না মানলে আমরা কী করতে পারি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন