গত বছরই পরীক্ষামূলক ভাবে রাজ্যে এক বিদেশি মাছের চাষ শুরু হয়েছিল। এক বছরের মধ্যেই ফলন দেখে খুশি মৎস্য উন্নয়ন নিগম। এ বার ওই মাছ চাষ করে বাণিজ্যিকীকরণে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম।
কী এই বিদেশি মাছ? আমেরিকান রুই বা কমন কার্পের বিভিন্ন প্রজাতির একটি, হাঙ্গেরি কার্প। তারই নব সংস্করণ এটি। যার নাম আমুর। হাঙ্গেরির আমুর নদী এই মাছের উৎসস্থল। মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমেরিকান রুইয়ের মধ্যে পড়ে স্কেল কার্প, মিরর কার্প, লেদার কার্প ও হাঙ্গেরি কার্প। কিন্তু আমেরিকান রুইয়ের সব প্রজাতির সমস্যা হল, খাবারযোগ্য অংশের তুলনায় শুক্রাশয়, ডিম্বাশয়ের অংশ বেশি। ফলে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণ হারিয়েছিল আমেরিকান রুই। তা ছা়ড়া এই মাছ চর্বিবহুল হওয়ায় বাঙালির পাতে ব্রাত্য হয়ে পড়ে। মাছচাষিরা আরও বলছেন, বিক্রির যোগ্য ওজন হওয়ার আগেই পুকুরে ডিম ছেড়ে ফেলত আমেরিকান রুই। ফলে খাবার এবং বাসস্থানেরও অভাব হত। সব মিলিয়ে এই মাছের চাষে ক্ষতি হচ্ছিল।
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাসের দাবি, ‘‘আমেরিকান রুই প্রজাতির হাঙ্গেরি কার্প গোষ্ঠীভুক্ত হলেও ব্যতিক্রমী এই আমুর। গবেষণা চালিয়ে বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞানীরা হাঙ্গেরি কার্পের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। যার ফলে আমুরের পেট হয়েছে চর্বিহীন। ওই মাছ এক বছর বয়সে ডিম ধারণ করে। বাড়েও দ্রুত। হলদিয়ার গুটিকয়েক চাষি সফল হওয়ার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, নিগমের মিষ্টি জলাশয়ে আমুর মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হবে।’’ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বছর কয়েক আগে হাঙ্গেরি থেকে আমুর মাছের ঝাঁক সংগ্রহ করে আনেন বেঙ্গালুরুর প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
গত বছরই রাজ্য মৎস্য দফতর ও হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে বেঙ্গালুরু থেকে আমুর মাছের চারা আনা হয়। হলদিয়ার চার মৎস্যচাষি আমুরের চাষ করেন। দ্রুত বৃদ্ধির হার দেখে এ বার আমুর মাছের বাণিজ্যিক চাষে মন দিতে চায় নিগমও। রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘হলদিয়ায় এক বছরেই একটি আমুর মাছের ওজন হয়েছে প্রায় দু’কেজি। এ বার বাণিজ্যিক ভাবে আমুরের চাষ করব। বেঙ্গালুরুর গবেষণাকেন্দ্র থেকে প্রায় দু’লক্ষ আমুর মাছের চারা এপ্রিলের মধ্যেই বিমানে আনা হবে।’’ মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, কিলো প্রতি ১৫০ টাকা দরে হলদিয়ার বাজারে বিক্রি হয়েছে আমুর। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানান, কলকাতার নলবন, বাইপাসের গোলতলা এবং বর্ধমানের যমুনাদিঘির জলাশয়ে আমুরের চারা ফেলা হবে।