দুধ, ঘি, সর্ষের তেল, এমনকী বোতল বা জারবন্দি পানীয় জলেও ভেজাল। রেস্তোরাঁর খাবারের প্লেটে পরিবেশন করা হচ্ছে আগের দিনের উচ্ছিষ্ট কিংবা পোকা ধরা মাংস। কিন্তু ভেজাল খাবার ও পানীয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে দেখা যাচ্ছে, এটা একটি বা দু’টি দফতরের কাজ নয়, অনেকগুলি দফতর এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। ভেজালের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর নামতে এ বার তাই একটি নোডাল এজেন্সি গড়তে চলেছে রাজ্য সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রাজ্য পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা (ইবি)-র ডিজি বিজয় কুমারকে এই ব্যাপারে একটি প্রস্তাব তৈরি করতে বলেছেন। ইবি সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে খাদ্যমন্ত্রীকে ওই প্রস্তাব জমা দেওয়া হবে। খাদ্যমন্ত্রী সেটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখাবেন। তাঁর সম্মতি পেলেই ভেজাল রোখার নোডাল এজেন্সি তৈরি হবে।
বৃহস্পতিবার, ১৮ মে খাদ্য ভবনে খাদ্যমন্ত্রী এবং ইবি-র ডিজি-র বৈঠক হয়। সেখানে নোডাল এজেন্সি তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ইবি-কে প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব দেন খাদ্যমন্ত্রী।
জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, ‘‘যাঁরা পচা বা ভেজাল খাবার দেন, তাঁদের ক্ষমার প্রশ্ন নেই। ভেজালের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযানে বিভিন্ন দফতরের সমন্বয় থাকা দরকার। নোডাল এজেন্সির ব্যাপারে ইবি-র প্রস্তাব পেলে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি চাইব।’’ মন্ত্রী জানান, বহু জায়গায় নিম্ন মানের চাল ও গম, পচা আটা, ভেজাল তেল বিক্রি হচ্ছে বলে তাঁর দফতরের হাতে তথ্য আছে, সেই তথ্য এ বার ইবি-কে দেওয়া হবে। এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে খাদ্য দফতরের ইনস্পেকটরেরা আছেন। তবে এক শ্রেণির অসাধু অফিসারদের জন্যে সেটি ঠিক মতো হচ্ছে না বলে স্বীকার করছেন খাদ্যমন্ত্রী।
ইবি-র ডিজি বিজয় কুমার জানান, চাল-তেল-ডাল-গমের গণবন্টন ব্যবস্থা দেখে খাদ্য দফতর। দুধে ভেজাল হলে দায় পড়ে প্রাণিসম্পদ দফতরের উপর। খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁর লাইসেন্স দেয় পুরসভা। খাবারের গুণমান ও সেটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৈরি হয়েছে কি না, তা বিচার করবেন স্বাস্থ্য দফতরের অধীন ফুড সেফটি অফিসারেরা। ভেজাল বা পচা খাবারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করে ইবি। তিনি বলেন, ‘‘এ সব দিক ভেবেই একটি নোডাল এজেন্সি ও তার শীর্ষে এক জন নোডাল অফিসার রাখা দরকার। তা হলে সব দফতরের মধ্যে সমন্বয় রেখে ভেজাল রোখা যাবে।’’
ইবি-র বক্তব্য, সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছেন না, অনেক সময়ে নিজেদের অজান্তেই তাঁরা টাকা খরচ করে বিষ খাচ্ছেন। সম্প্রতি ইবি ভেজালের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে। অধিকাংশ
ক্ষেত্রে চেয়েও পাওয়া যায়নি ফুড সেফটি অফিসারদের।
ভেজালের বিরুদ্ধে অন্য কয়েকটি রাজ্যে নোডাল এজেন্সি বা টাস্ক ফোর্স রয়েছে। সেই আদলে এখানেও প্রতি মাসে নোডাল এজেন্সির সদস্যেরা বৈঠক করবেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন ও নিয়মিত অভিযান করবেন। জনগণ ওই সংস্থার কাছে অভিযোগ জানাবেন, এমনটাই চাইছে রাজ্য।