আবাসনেই বসছে সব্জি বাজার, উদ্যোগী রাজ্য

হাত বাড়ালেই বাজার! প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এ বার আবাসনেও কাঁচা সব্জির বাজার বসাচ্ছে কৃষি বিপণন দফতর। এবং তার জন্য যে ভাবে একের পর এক আবেদনপত্র জমা পড়ছে, তাতে উৎসাহী সরকারও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২১
Share:

হাত বাড়ালেই বাজার!

Advertisement

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এ বার আবাসনেও কাঁচা সব্জির বাজার বসাচ্ছে কৃষি বিপণন দফতর। এবং তার জন্য যে ভাবে একের পর এক আবেদনপত্র জমা পড়ছে, তাতে উৎসাহী সরকারও। রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘বাজারদরের চেয়ে কম দামে জিনিস পেতে আবাসন কমিটিগুলি স্টল বসানোর আবেদন করছে। দাবি বাড়ছে বলেই এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট নীতি তৈরি করছে দফতর।’’

খোলা অর্থনীতিতে এই পথ দেখানোর কৃতিত্ব অবশ্যই দাবি করতে পারে নিউ টাউনের একটি আবাসন। আড়াই মাস হয়ে গেল ওই আবাসনের চৌহদ্দির ভিতরে আস্ত একটা বাজার বসছে। আগে সপ্তাহে চার দিন বসত, আবাসিকদের দাবি মেনে এখন সপ্তাহে ছ’দিনই বাজার সাজাচ্ছেন চাষিরা। আর বাজারহাটের ফাঁকে চলছে প্রাতঃকালীন মজলিস, গল্প-আড্ডা। ওই আবাসনের বাসিন্দা হর্ষ পট্টনায়ক বলেন, ‘‘আড়াই হাজারের মতো ফ্ল্যাটে লোক এসে গিয়েছে। নতুন আবাসন বলে সকলে সকলকে চিনি না। বাজার করতে এসে এখন দেখা হয়, পরিচয় হয়। ভালই লাগছে।’’

Advertisement

সকাল ৭টায় বাজার বসে। বেলা ১১টায় সব শেষ। কৃষি বিপণন দফতর ওই বাজার চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে ভাঙরের যে ‘ফার্মার্স প্রোডিউসার্স কোম্পানি’-র হাতে, তার চেয়ারম্যান মহম্মদ আব্দুল জব্বার খান বলেন, ‘‘কৃষি বিপণন দফতরের অধীন ‘সুফল বাংলা’ আমাদের চেয়াল-টেবিল, ছাতা, সব্জির ক্রেট ও ওজন মাপার যন্ত্র দিয়েছে। সকালে শাকসব্জি সরাসরি খেত থেকে তুলে আবাসনের বাজারে নিয়ে যাই। গোড়ায় ১৫ হাজার টাকার মতো বেচাকেনা হতো। এখন ৩২ হাজারে ঠেকেছে।’’ জব্বার জানাচ্ছেন, পরদিন শাকসব্জির বাজারদর কী হবে, তা আগের দিনই টাঙিয়ে দেওয়া হয়। শুধু নিত্যদিনের বিক্রিই নয়, আবাসিকদের পারিবারিক অনুষ্ঠানেও কাঁচা সব্জি জোগানের বরাত পাচ্ছেন তাঁরা।

এখন বিভিন্ন জেলায় ‘সুফল বাংলা’র যে ৩০টি স্টল বসে, সবগুলোই চালায় ‘ফার্মার্স প্রোডিউসার্স কোম্পানি’। এর মধ্যে ১৯টি ভ্রাম্যমাণ। মন্ত্রী বলছেন, ‘‘মার্চ মাসের মধ্যে ১০০টি স্টল চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি আমরা। দফতরের সচিব জেলাশাসকদের কাছে স্টলের জায়গা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। এখন শুধু বোলপুরের স্টল থেকে ‘হোম ডেলিভারি’ চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে সব স্টলেই ওই ব্যবস্থা রাখা হবে।’’

নিউ টাউনের আবাসনে বাজার চালু হল কী ভাবে? আবাসিকেরা জানাচ্ছেন, বছরখানেক আগেও মাছ, সব্জি, মায় মিষ্টি কিনতেও ছ’কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে যেতে হত। তার পরে ধীরে ধীরে স্থানীয় কিছু লোক আবাসনের পাঁচিলের গা ঘেঁষে বসতে শুরু করে। এতে এলাকা নোংরা হচ্ছিল বলে ওই দোকানিদের আর বসতে দেননি আবাসনের বাসিন্দারা। হর্ষ পট্টনায়ক বলেন, ‘‘এর পরে আমরা সুফল বাংলার ‘প্রোজেক্ট ডিরেক্টর’ গৌতম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবাসনের ভিতরে বাজার বসানোর প্রস্তাব দিই। ওঁরা এখানে এসে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পুজোর ক’দিন আগে বাজার চালু হয়।’’ হর্ষের কথায়, ‘‘এখন কম দামে তাজা সব্জি পাচ্ছি।’’

কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, নিউ টাউনের আরও একটি বড় আবাসনে বাজার বসানোর আবেদন এসেছে। তিলজলার একটি আবাসনের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে সুফল বাংলা-র কর্তাদের। শুধু বেসরকারি আবাসনই নয়, সরকারি আবাসনেও বাজার বসাবে কৃষি বিপণন দফতর। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ১৬টি সরকারি আবাসনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি কলকাতার, বাকিগুলি হাওড়া, বারাসত, কল্যাণী, কৃষ্ণনগর রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন