জরিমানার জুলুমেই বাস ধর্মঘট, যুক্তি মানছে রাজ্যও

জরিমানা আদায়ের একটি অংশ আসবে নিজেদের উন্নয়নে। সেই তাগিদই জুলুমের চেহারা নিচ্ছে। কলকাতা পুলিশের এই জুলুমের বিরুদ্ধে ডাকা বাস ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে এমনটাই দাবি রাজ্য পরিবহণ কর্তাদের একাংশের। তাঁদের মতে, ‘‘বাসমালিকদের ধর্মঘট তুলে নিতে জোর করতে পারছি না। কারণ, তাঁদের দাবি একেবারে অযৌক্তিক নয়।’’

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০১:০৮
Share:

জরিমানা আদায়ের একটি অংশ আসবে নিজেদের উন্নয়নে। সেই তাগিদই জুলুমের চেহারা নিচ্ছে। কলকাতা পুলিশের এই জুলুমের বিরুদ্ধে ডাকা বাস ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে এমনটাই দাবি রাজ্য পরিবহণ কর্তাদের একাংশের। তাঁদের মতে, ‘‘বাসমালিকদের ধর্মঘট তুলে নিতে জোর করতে পারছি না। কারণ, তাঁদের দাবি একেবারে অযৌক্তিক নয়।’’ যদিও তা উড়িয়ে দিচ্ছেন পুলিশকর্তারা।

Advertisement

জরিমানার এই বিষয়টি উঠে এসেছে বাসমালিকদের সঙ্গে সরকারের আলোচনাতেও। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাসমালিকদের দাবি যে অনেকটাই সঙ্গত, তা মুখ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে। এ নিয়ে যে সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে, তা-ও বোঝানো হয়েছে তাঁদের।’’ বাসমালিক সংগঠনগুলি সূত্রে খবর, আজ, সোমবার তাঁরা ফের আলোচনায় বসছেন। সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ করায় সংগঠনগুলির একাংশ ধর্মঘট আপাতত স্থগিত রাখার পক্ষে সওয়াল করবেন। এক বাসমালিক নেতার কথায়, ‘‘সরকার আমাদের দাবির সঙ্গে অনেকটাই সহমত। সমাধানের চেষ্টাও করছে। আপাতত তাই ধর্মঘটের রাস্তা থেকে সরে আসার কথা ভাবছি।’’

রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, বাম আমল থেকেই জরিমানার একটি অংশ কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের উন্নয়নে ব্যবহারের রীতি রয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘এর নির্দিষ্ট মাত্রা বেঁধে দেওয়া নেই। তবে জরিমানা বাবদ ট্রাফিক পুলিশের আয়ের একটি অংশ তাদেরই উন্নয়নে যায়। সেই ‘ট্রাফিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’-এর টাকা কী ভাবে খরচ হবে, তা ঠিক করতে একটি কমিটিও আছে। কখনও যার মাথায় থাকেন পুলিশ কমিশনার। কখনও যুগ্ম বা অতিরিক্ত কমিশনারের কেউ।’’

Advertisement

পরিবহণ কর্তাদের যুক্তি, এই তহবিলের কারণেই অতিরিক্ত জরিমানা আদায়ে ট্রাফিক পুলিশের বাড়তি তাগিদ দেখা যায়। এক কর্তার কথায়, ‘‘টাকা বেশি তুললে আখেরে লাভ তাদেরই। বহু ক্ষেত্রে ট্রাফিক সার্জেন্টদের কোটা বেঁধে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।’’

পরিবহণ কর্তাদের যুক্তিতে সায় দিয়ে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘অনেক সময়ে সেলসম্যানকে উৎসাহভাতা দেওয়া হয়। বিক্রিও বাড়ে। কিন্তু যেখানে জরিমানার প্রশ্ন, সেখানে এই নিয়মে জরিমানা আদায়ে মিথ্যে কেস দেওয়ার প্রবণতা হতেই পারে। পুলিশের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা স্বভাবতই বেশি।’’

এক বাসমালিকের অভিযোগ, ‘‘প্রতিটি বাসেই মাসিক গড়ে ১০-১৫ হাজার টাকার কেস দেয় পুলিশ। এর একটা বড় অংশের ক্ষেত্রে বাড়িতে চিঠি যায়। অনেক সময়েই দেখা যায়, একই বাসের উপরে একটি মোড়ে একাধিক বার কেস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে ওই মোড়ে যাতায়াত করা বাসটির পক্ষে প্রায় অসম্ভব।’’

তবে সরকারি কর্তা ও বাসমালিকদের অভিযোগ মানতে নারাজ কলকাতা পুলিশ। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানিয়ে দিচ্ছেন, কোটা বেঁধে দেওয়া বা জোর করে ‘কেস’ দেওয়ার কোনও রীতি নেই। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। কিন্তু জোর করে জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয় না। তবে শহরে যান চলাচল শৃঙ্খলিত করতে হলে জরিমানা তো করতেই হবে।’’ এ ধরনের ভুলভ্রান্তি এড়াতে সব মোড়েই সিসি-ক্যামেরা রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন