শহরে আটক ১০০০ কেজি বিস্ফোরক ভর্তি ম্যাটাডর!

পুলিশ সূত্রের খবর, ইন্দ্রজিৎ এবং পদ্মলোচনকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে রবিউল নামে আরও এক জনকে পাকড়াও করেছে এসটিএফ। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, রবিউলই এই বিস্ফোরক পাচারের অন্যতম চাঁই। বাজেয়াপ্ত হওয়া বিস্ফোরক ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০৪:১৫
Share:

বিস্ফোরক বোঝাই ম্যাটাডর থেকে ধৃত দু’জনকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে নিয়ে যাওয়ার পথে। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে খাস কলকাতা শহরে আটক হল হাজার কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ভর্তি ম্যাটাডর!

Advertisement

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে টালা ব্রিজে একটি ম্যাটাডরকে আটক করেন স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) গোয়েন্দারা। সেই গাড়ি থেকে একাধিক বস্তার ভিতরে মোট ১ হাজার কিলোগ্রাম পটাশিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার করা হয়। এই রাসায়নিক বিস্ফোরক তৈরির কাজে লাগে। ওই গাড়ির চালক ইন্দ্রজিৎ ভুঁই এবং খালাসি পদ্মলোচন দে-কে গ্রেফতার করা হয়। দু’জনেরই বাড়ি ওড়িশার বালেশ্বরে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ইন্দ্রজিৎ এবং পদ্মলোচনকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে রবিউল নামে আরও এক জনকে পাকড়াও করেছে এসটিএফ। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, রবিউলই এই বিস্ফোরক পাচারের অন্যতম চাঁই। বাজেয়াপ্ত হওয়া বিস্ফোরক ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

কাল, সোমবার দেশে লোকসভা ভোটের সূচি ঘোষণা হতে পারে। তার আগে শুক্রবার রাতে একসঙ্গে এত পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লালবাজার সূত্রের দাবি, এই বিস্ফোরক উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের একটি জায়গায় পৌঁছনোর কথা ছিল। সেখানে মজুত করার পরে তা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হত। কে কে এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত তারও একটি তালিকা গোয়েন্দারা পেয়েছেন। সেই তালিকা ধরে ইতিমধ্যেই তল্লাশি চলছে।

উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি বিস্ফোরক। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি পুলওয়ামায় বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে সিআরপি-র কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। তার পরে খাস কলকাতায় এত পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ায় অনেকেই এর পিছনে জঙ্গি সংগঠনের সংশ্রবের সম্ভাবনা দেখছেন। যদিও পুলিশ কর্তাদের দাবি, এখনও কোনও জঙ্গি যোগের কথা জানা যায়নি।

আরও পড়ুন: কী ভাবে ঢুকল বিস্ফোরক, মিলছে না সদুত্তর

পুলিশের একটি সূত্র দাবি করছে, এই রাসায়নিকের মূল ক্রেতা বিভিন্ন দুষ্কৃতী দল। সেই সব দুষ্কৃতীরা ছড়িয়ে আছে মূলত উত্তর ২৪ পরগনা এবং লাগোয়া জেলাগুলিতে। তাদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে। ভোটের সময় ব্যবহার করার জন্য বোমা তৈরি করে দুষ্কৃতীরা। আটক করা বিস্ফোরক যে সেই কাজেই লাগানো হত, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশের একাংশ।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বালেশ্বর জেলার রূপসা থেকে এই রাসায়নিক কেনা হয়েছিল। তার পর ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হাওড়া হয়ে সেটি কলকাতায় ঢোকে এবং শ্যামবাজার পেরিয়ে সিঁথির দিকে যাওয়ার পথে গোয়েন্দারা গাড়িটিকে আটকান। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘গোপন সূত্র মারফত এই বিস্ফোরক পাচারের কথা আমরা জেনেছিলাম। আমাদের সন্দেহ, এর আগেও এই পথ দিয়ে বিস্ফোরক গিয়েছে।’’

বস্তুত, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় আমডাঙা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছিল। ফলে ওই জেলা যে এই ধরনের বিস্ফোরক তৈরির আঁতুড়ঘর হয়ে রয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন গোয়েন্দাদের অনেকেই। পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, পটাশিয়াম নাইট্রেট বারুদের অন্যতম উপাদান। বিভিন্ন বাজি কারখানাতেও এর ব্যবহার রয়েছে। প্রশাসনের একটি সূত্রের মতে, বিভিন্ন জেলায় একাধিক অবৈধ বাজি কারখানা রয়েছে। সেখানে দুষ্কৃতীরা বোমাও তৈরি করে। তেমনই কিছু বাজি কারখানায় এগুলি সরবরাহ করা হত কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

এ দিন ধৃত চালক ও খালাসিকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ২৩ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। কৌঁসুলিরা না-থাকায় তেমন কোনও সওয়াল-জবাব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন