লেলিহান: জ্বলছে আর্মেনিয়ান ঘাট এলাকার গুদাম। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
চব্বিশ ঘণ্টা পরেও আগুন জ্বলছে আর্মেনিয়ান ঘাটে। মঙ্গলবার সারা রাতের পরে বুধবার সারা দিন ধরে লড়াই চালিয়েও আগুন পুরোপুরি নেভাতে পারেননি দমকলকর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, যে দুই গুদামে প্রথমে আগুন লেগেছিল, তাতে প্রচুর পরিমাণ অতি দাহ্য বস্তু রয়েছে। তাই নিয়ন্ত্রণে এলেও আগুন পুরোপুরি নিভতে সময় লাগছে। অগ্নিকাণ্ডের জেরে বুধবার সারা দিনই আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ ছিল। চলেনি চক্ররেলও। যার ফলে কাজের দিনে দুর্ভোগ পোহাতে হয় অসংখ্য নিত্যযাত্রীকে। পুলিশ জানিয়েছে, বন্ধ রাখা হয়েছিল মিলেনিয়াম পার্কের একাংশও।
এ দিন বিকেলে মল্লিকঘাট ফুলবাজার সংলগ্ন আর্মেনিয়ান ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গুদাম থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই গঙ্গায় লঞ্চের উপরে তিনটি পাম্প চালিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। বুধবার দুপুরে আনা হয় আরও দু’টি পাম্প। চক্ররেলের লাইন থাকায় মঙ্গলবার রাতে স্ট্র্যান্ড রোডের দিক থেকে দমকলের বড় গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। ফলে জল দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছিল দমকল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকলের ডিজি জগমোহন গঙ্গা থেকে লঞ্চের উপরে পাম্প চালিয়ে আগুন নেভাতে নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার রাতে আর্মেনিয়ান ঘাট লাগোয়া পরপর পাঁচটি গুদাম আগুনের গ্রাসে চলে যায়। সারা রাত জ্বলতে থাকায় আগুনের তাপে গুদামগুলির টিনের ছাউনি ভেঙে পড়ে। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভেঙে পড়া টিনের ছাউনির নীচে গুদামের প্রচুর দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় নাগাড়ে জল ঢেলেও তা ঠিক জায়গায় পৌঁছয়নি।’’
এ দিন হাওড়া স্টেশন-আর্মেনিয়ান ঘাট লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ থাকায় সকালের দিকে হাওড়ায় নামা বহু যাত্রীকে প্রবল হয়রানি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে তাঁরা বাসে বা লঞ্চে পাশের বাবুঘাটে এসে নামেন। মিলেনিয়াম পার্কের একাংশ বন্ধ থাকায় বুধবার অনেকেই সেখানে ঢুকতে পারেননি। আগুনে ওই পার্কের কয়েকটি গাছ ঝলসে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেলিং।
বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর গুদামঘরটি ভস্মীভূত। মেঝেতে থইথই জল। ওই সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের ওই গুদামে বারো ব্যারেল লঞ্চের জ্বালানি ডিজেল মজুত ছিল। আগুনে সব জ্বালানি পু়ড়ে গিয়েছে।’’ এমনিতেই আর্থিক সমস্যায় ভুগছে ওই সমিতি। সংস্থার কর্তাদের দাবি, প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এই আগুনে। সমিতির সম্পাদক অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আর্থিক সমস্যা ছিলই। তবে, আমরা অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। মাত্র পাঁচ টাকার টিকিট বিক্রি করেই ৪০০ জন কর্মীর সংসার চলছিল। আগুনে যা ক্ষতি হল, কী ভাবে তা পূরণ হবে, জানি না।’’ অনুপবাবুর আশঙ্কা, ‘‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আগামী জানুয়ারি মাসে সাগরে আদৌ লঞ্চ পাঠাতে পারব কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছি। তবে অন্যান্য সমস্ত ফেরি পরিষেবাই চালু আছে।’’
বুধবার বিকেলে দমকলের তরফে গুদামের মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং গুদাম ব্যবহারকারী একাধিক সংস্থার বিরুদ্ধে উত্তর বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য কেউ মন্তব্য করতে চাননি। শহরের মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় বুধবার জানান, কলকাতা বন্দর ওই জমি কাদের লিজ দিয়েছে, লিজের শর্ত কী ছিল, সে সব ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে। পুলিশ ও দমকল এ ব্যাপারে যৌথ ভাবে কাজ করবে।