সল্টলেক

পরিকল্পনাই সার, রয়ে গিয়েছে হোর্ডিং

বিজ্ঞাপনের দৃশ্যদূষণ রুখে শহরকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল বিধাননগর পুরনিগম। পুরকর্তারা জানিয়েছিলেন, যত্রতত্র নয়, বিজ্ঞাপনের স্থান নির্দিষ্ট করা হবে। নির্দিষ্ট করা হবে তার সংখ্যাও।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৫
Share:

এ ভাবেই দৃশ্যদূষণ। — নিজস্ব চিত্র।

বিজ্ঞাপনের দৃশ্যদূষণ রুখে শহরকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল বিধাননগর পুরনিগম। পুরকর্তারা জানিয়েছিলেন, যত্রতত্র নয়, বিজ্ঞাপনের স্থান নির্দিষ্ট করা হবে। নির্দিষ্ট করা হবে তার সংখ্যাও। বাড়ানো হবে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের চার্জ। তাতে আয়ও বাড়বে পুরসভার।

Advertisement

কিন্তু এত কিছু ঘোষণার পরে কয়েক মাস কেটে গেলেও কাজ এগোয়নি একচুলও। এখন পুরনিগম বলছে, এই কাজ করতে হলে আগে ‘বেআইনি’ হোর্ডিং চিহ্নিত করতে হবে। কিন্তু ‘বেআইনি’ হোর্ডিং সংখ্যায় কত, সেই তথ্য নেই পুরনিগমের কাছে। তা জানতে নানা পদক্ষেপ শুরু করেছে পুরপ্রশাসন। কিন্তু কবে ‘বেআইনি’ হোর্ডিং সরানোর কাজ শুরু হবে, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি প্রশাসনের তরফে।

বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, বিধাননগরের তৃণমূল পরিচালিত বর্তমান পুরনিগম হোর্ডিং নিয়ে যত দাবিই করুক না কেন, গত পুরবোর্ডেও দায়িত্বে ছিল তারাই। বিধাননগর পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে ৫ বছর কোনও নিয়মের ধার ধারেনি তৃণমূল পুরবোর্ড। এখন পদক্ষেপ করলে নিজেরাই সমস্যা পড়বে শাসক দল। তাই ঘোষণা করেও পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারছেন না মেয়র।

Advertisement

সল্টলেকে সৌন্দর্যায়নে গত ৬ বছর ধরেই একাধিক কাজ করেছে পুর-প্রশাসন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রাকৃতিক শোভার জন্য সল্টলেক ছিল স্বতন্ত্র। তার উপরে সৌন্দর্যায়নের জেরে সেই শোভা আরও বেড়েছে। কিন্তু হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্সের দৌরাত্ম্যে নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য। উল্টে এর ফলে বাড়ছে দূষণ।

সল্টলেকের প্রতিটি প্রবেশপথ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মোড়, অফিসপাড়া, আবাসিক এলাকা— সর্বত্র একই ছবি। রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কিংবা বাণিজ্যিক সংস্থা, বিভিন্ন প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ সল্টলেক। ব্যস্ততম মোড় করুণাময়ীতে যে দিকে তাকানো যায়, সে দিকেই বিশাল বিশাল হোর্ডিং। এমনকী বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের আওতার বাইরে নয় বাতিস্তম্ভগুলিও। বাদ পড়েনি রাজনৈতিক দলের অফিসও। শুধু একটি নয়, প্রতিটি আইল্যান্ডেই এক ছবি।

অথচ তার পরেও বিধাননগর পুরনিগমের দাবি, তাদের কাছে বিগত দিনের অনুমতিপ্রাপ্ত হোর্ডিংয়ের কোনও তথ্যই নেই। এ দিকে পুরসভা সূত্রে খবর, গত পাঁচ বছরে সল্টলেকে অনুমোদিত হোর্ডিংয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০০। তাই কেন বর্তমান পুরনিগমের কাছে সেই তথ্য নেই, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। বর্তমান পুর-কর্তাদের সাফ কথা, বিগত দিনের সুনির্দিষ্ট তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তাই ঠিক কত সংখ্যক হোর্ডিং রয়েছে, এ নিয়ে পুরনিগম যেমন সমীক্ষা চালাচ্ছে, তেমনই কাউন্সিলরর ও বিজ্ঞাপনদাতাদের সে বিষয়ে তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। তবে শুধু সল্টলেকই নয়, ভিআইপি রোড থেকে শুরু করে বাগুইআটি, রাজারহাট-নিউ টাউনের বিস্তীর্ণ এলাকা সম্পর্কেও একই অভিযোগ উঠে এসেছে।

হোর্ডিং সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরনিগমের প্রথম পুরবোর্ড। কিন্তু সেই ‘বেআইনি’ হোর্ডিং সরানোর কাজ কিছু দূর এগিয়েই স্থগিত হয়ে যায় কোনও অজানা কারণে। পুরনিগম সূত্রের দাবি, বিভিন্ন স্তর থেকে হোর্ডিং সরানোর সেই কাজে চাপ তৈরি হয়েছিল।

এই ‘চাপের’ কথা স্বীকার না করলেও সমস্যা সম্পর্কে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘যেমন-তেমন সৌন্দর্যায়ন করলেই হয় না। তাই পরিকল্পনামাফিক এগোনো হচ্ছে। এতে কার সমস্যা হবে, তা জানার প্রয়োজন নেই। এটা ঠিক যে কিছু প্রতিবন্ধকতায় সেই কাজ স্থগিত রয়েছে। তবে নিশ্চিত ভাবেই পরিকল্পনা কার্যকর হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন