এখনও খোঁজ মিলল না রাজারহাট-নিউ টাউনের জমিহারাদের আন্দোলনের নেতা নীলোৎপল দত্তের। গত ১৬ অগস্ট থেকে নিখোঁজ তিনি। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গতকাল থেকে নীলোৎপলবাবুর আত্মীয়েরা ছাড়াও তাঁর ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু সে রকম কোনও সূত্র এখনও মেলেনি।”
নীলোৎপলবাবুর অন্তর্ধান নিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতিও পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি নিখোঁজ হন ১৬ অগস্ট সন্ধ্যায়। কিন্তু তাঁর বাড়ির লোকজন বাগুইআটি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন ১৮ তারিখ। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, এক জন মানুষ ১৬ তারিখ নিখোঁজ হলে তার দু’দিন পরে কেন পরিজনেরা ডায়েরি করলেন। যদিও নীলোৎপলবাবুর স্ত্রী শ্রাবন্তী দত্ত বলেন, “এর আগেও আমার স্বামী দু’একবার বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে ফিরে আসেন। ভেবেছিলাম, এ বারও তেমনই ফিরে আসবেন। দু’দিন পরেও তিনি না ফেরায় ডায়েরি করি।”
তবে ১৬ অগস্ট নীলুবাবু নিজের প্রেস থেকে বেরিয়ে যেখানেই যান না কেন, নিজের ইচ্ছাতেই গিয়েছেন বলে অনুমান পুলিশের। কারণ পুলিশ জেনেছে, নীলুবাবু প্রেস বন্ধ করে রোজ যে বাড়িতে চাবি দিয়ে যেতেন, ১৬ তারিখ রাতেও সেখানে যান। তবে বাগুইআটির যে টেবিলে বসে তিনি কাজ করতেন, সেখান থেকেই মেলে তাঁর মোবাইল ও টাকার ব্যাগ।
বাম জমানায় যখন নিউ টাউন তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ হচ্ছিল, তখন জমিহারা কৃষকদের একজোট করে আন্দোলন শুরু করেন বছর তেষট্টির নীলোৎপলবাবু। রাজারহাটের জমিহারা চাষিদের নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও তিনিই প্রথম করেন। এলাকাবাসীরা জানান, এ নিয়ে নিউ টাউন এলাকার সিপিএম-এর কিছু নেতা-মন্ত্রীদের চক্ষুশূলও হয়েছিলেন তিনি। তবে আন্দোলন থামাননি ছোটখাটো জেদি ওই মানুষটি।
নিউ টাউন নগরী তৈরি হওয়ার সময়ে কী ভাবে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে, তা নিয়ে তিনি একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেন। ২০১১-য় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও তৃণমূলের নিউ টাউনের জমি নীতি নিয়ে তিনি নানা রকম সমালোচনা শুরু করেন এবং তাদের বিরাগভাজন হন।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত কয়েক মাস ধরে নীলোৎপলবাবু রাজারহাট-নিউ টাউনের এই জমি আন্দোলন থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন। যাদের সঙ্গে জমি আন্দোলন করতেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। নীলোৎপলবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে এর আগে যে সব জায়গায় আত্মগোপন করেছেন, সেখানেও তল্লাশি চালিয়ে তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ। শ্রাবন্তীদেবী বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে খুব গুটিয়ে ছিলেন আমার স্বামী। যাঁদের নিয়ে আন্দোলন করছিলেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছিলেন না। কোনও একটা হতাশা কাজ করছিল মনে হয়। প্রেসটাও ঠিক মতো চালাচ্ছিলেন না। তাই আমিও গত কয়েক মাস ধরে সেখানে গিয়ে বসতাম। যাঁরা ওঁর সঙ্গে এত দিন আন্দোলন করছিলেন তারাও অবশ্য আমার স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছেন। কিন্তু কেউ ওঁর কোনও খোঁজ করেননি।”