যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাসে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে কালো পতাকা দেখালেন পড়ুয়ারা। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।
শুধু কলরবই নয়, দু’দফায় গণভোট করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ পড়ুয়া তাঁর প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দিয়েছেন। সেই রায় উপেক্ষা করে অভিজিৎ চক্রবর্তী এখনও উপাচার্যের পদ আঁকড়ে পড়ে থাকায় শুক্রবার তাঁকে কালো পতাকা দেখালেন এক দল ছাত্রছাত্রী।
তাঁর পদত্যাগ চেয়ে কলা ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৯৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ভোট দিলেও অভিজিৎবাবু সেই গণভোটের রায়ের তোয়াক্কা করেননি। কালো পতাকা দেখানোর আন্দোলনকেও আমল না-দিয়ে তিনি পদ না-ছাড়ার সিদ্ধান্তে অটল আছেন।
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অভিজিৎবাবু গিয়েছিলেন গাঁধী ভবনে। সেই সময়েই কিছু ছাত্রছাত্রী ওই ভবনের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। উপাচার্যের গাড়ি গাঁধী ভবনের কাছে পৌঁছতেই ওই ছাত্রছাত্রীরা কালো পতাকা দেখিয়ে অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবি তুলে স্লোগান দিতে থাকেন। সেই বিক্ষোভের মধ্যেই পথ করে উপাচার্য চলে যান অনুষ্ঠানস্থলে। দেড় ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠান চলাকালীন বিক্ষোভকারীরা গাঁধী ভবনের বাইরেই স্লোগান দিচ্ছিলেন। উপাচার্য বেরিয়ে আসার সময়েও তাঁরা কালো পতাকা নাড়তে নাড়তে বিক্ষোভ দেখান।
তাঁর পদত্যাগ চেয়ে কালো পতাকা দেখানোর ঘটনায় তিনি যে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন, তা জানিয়ে দিতে ভোলেননি অভিজিৎবাবু। এ দিন কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ছিল নিতান্তই কম। অনুষ্ঠানের পরে গাঁধী ভবনের বাইরে সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, “কয়েক জন পড়ুয়া কী বললেন, তাতে কিছু যায়-আসে না। বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক জনের নয়, সকলের।” কলা ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৯৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী তাঁর পদত্যাগ চেয়ে ভোট দেওয়ার পরেও তিনি কি এটাকে সংখ্যালঘিষ্ঠদের আন্দোলন বলে মনে করেন? এই প্রশ্নের জবাব না-দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন যাদবপুরের উপাচার্য।
তবে গণভোটের রায় এবং তাঁর পদত্যাগ চেয়ে ছাত্রছাত্রীদের লাগাতার আন্দোলন যে আগামী মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, তেমন আশঙ্কা করছেন অভিজিৎবাবুও। তাঁর সেই আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে গাঁধী ভবনের এ দিনের অনুষ্ঠানে। ই-গভর্ন্যান্স নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে অশান্ত পরিবেশের প্রসঙ্গ তোলেন অভিজিৎবাবু। তিনি বলেন, “ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। এই পরিবেশের মধ্যে সেই অনুষ্ঠান সফল করতে আপনারা একজোট হয়ে কাজ করুন।” আধিকারিকদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ: অরাজকতাকে প্রশ্রয় দেবেন না। ন্যায়নীতির পক্ষে অবিচল থেকে কাজ করতে হবে।”
অভিজিৎবাবু ন্যায়নীতির প্রসঙ্গ তোলায় আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা হতবাক। “নীতিবোধ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢোকার পরেই উপার্চায পদত্যাগ করতেন। তা তিনি করেননি। এমনকী গণভোটে পড়ুয়াদের মতামত জানার পরেও তিনি পদ আঁকড়ে পড়ে আছেন। তাঁর মুখে নীতির কথা মানায় না,” মন্তব্য এক ছাত্রীর। আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের সমর্থন কতটা, উপাচার্য এ দিন ফের তা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এক ছাত্র বলেন, “হাইকোর্টে রাজ্য সরকার বলেছিল, এটা সংখ্যালঘুদের আন্দোলন। আমরা গণভোটে প্রমাণ করে দিয়েছি, ছাত্রছাত্রীরা কী চান। গণভোটের রায় উপাচার্য অস্বীকার করছেন। তাতে তাঁর সম্মান মোটেই বাড়বে না।” উপাচার্য ইস্তফা না-দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চলবে বলে পড়ুয়ারা জানিয়ে দিয়েছেন।