মিছিলকারীর সংখ্যাটা মেরেকেটে হাজার দুয়েক। তাতেই কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে গেল মধ্য কলকাতার বড় একটা অংশ। শুধু তাই নয়, উত্তেজিত মিছিলকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও করতে হল পুলিশকে। এক দিকে শহিদ মিনারে সৃশৃঙ্খল সমাবেশ করে যখন বাড়ি ফিরছেন লোকজন, তখন রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে লাঠি-ঢাল নিয়ে ব্যারিকেডে এসইউসি-র ছাত্র ও যুব সংগঠনকে সামলাতে হচ্ছে পুলিশকে।
লালবাজারের একাংশ বলছেন, বৃহস্পতিবার শহিদ মিনারে সমাবেশে অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের সঙ্গে হাতে-হাত মিলিয়ে পথে নেমেছিলেন সংগঠকরা। কিন্তু কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়া মিছিল ছিল সরকার-বিরোধী। তাই প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি সংগঠকেরা। রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হয়েছে। মিছিল আটকালে পুলিশের ব্যারিকে়ড ভেঙেছেন আন্দোলনকারীরা।
এ দিন বেলা একটা থেকেই কলেজ স্কোয়ারে জমায়েত হতে শুরু করেন ডিএসও এবং ডিওয়াইও-র কর্মী-সমর্থকেরা। তার জেরে ওই এলাকায় যান-চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয় পুলিশকে। একেই শহিদ মিনারের সমাবেশের জেরে মধ্য কলকাতার অনেক রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছিল। তার উপরে কলেজ স্কোয়ারের আশপাশে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করায় যানজট তৈরি হচ্ছিল। তার জেরে দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল পড়ুয়া এবং সাধারণ লোকজনকে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা চালু, টেট-সহ বিভিন্ন নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং বেকারদের কাজের দাবিতে বেলা ৩টে নাগাদ কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল শুরু হয়। তার ফলেই যান চলাচল আটকে যায়। নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটে কিছু দূর এগোনোর পরেই দৌড় শুরু করেন মিছিলকারীরা। হিন্দ সিনেমার সামনে পুলিশের প্রথম ব্যারিকেডও ভেঙে এগিয়ে যান তাঁরা। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। মিছিলকারীরা দৌড়নো শুরু করতেই বেগতিক পরিস্থিতি আঁচ করেছিল পুলিশ। ‘আইন হাতে তুলে না নেওয়া’র অনুরোধ করে মাইকে ঘোষণাও শুরু হয়। এর মধ্যেই দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভেঙে যায়। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের সামনেই রাস্তার উপরে বসে পড়েন ডিএসও এবং ডিওয়াইও-র সমর্থকেরা। আন্দোলনকারীরা গ্রেফতার হওয়ার দাবি করতে থাকে।
ঘণ্টা খানেক রাস্তা আটকানোর পরে পুলিশ সব আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করার ঘোষণা করে এবং সঙ্গে সঙ্গে জামিনে ছেড়ে দেওয়াও হয়। এর পরেই অবস্থান তুলে নেন মিছিলকারীরা।
লালবাজারের কর্তারা বলছেন, কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়া মিছিল যে বিশৃঙ্খল হবে, তা আঁচ করেছিলেন তাঁরা। তাই তিনটি ব্যারিকেড করা হয়েছিল। তার মধ্যে তিন নম্বরটি ছিল দেওয়াল ব্যারিকেড। ধাতব পাঁচিল তুলে তার পিছনে রাখা হয়েছিল র্যাফ এবং জলকামান। ছিল বিরাট পুলিশবাহিনীও। যদিও মিছিলকারীরা দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভাঙার পরে আর না এগোনোয় র্যাফ বা জলকামান ব্যবহার করতে হয়নি।
এ দিন হাজি মহম্মদ মহসিন স্কোয়ারে জমায়েত করে মিছিলের ডাক দিয়েছিল অননুমোদিত মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটির সদস্যরাও। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ মিছিলের প্রস্তুতি শুরু হতেই পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে দেয় তাঁদের। ব্যারিকেডে আটকে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ফিরে যান আন্দোলনকারীরা।