উধাও আকাল, শহরের পকেট ভরে গেছে খুচরোয়

কলকাতার বাজারে খুচরোর সমস্যা হঠাৎ ম্যাজিকের মতো হাওয়া! দোকান-বাজারই হোক বা বাস-অটো— খুচরো নিয়ে বিশেষ ঝামেলা আর হচ্ছে না। কেউ কোনও কটু কথা বলছেন না। বিরক্ত হচ্ছেন না। বিশেষ করে, খুচরো না থাকলে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার যে ‘ইতিহাস’ কলকাতার অটোচালকদের রয়েছে, তাঁরাও হাসিমুখে টাকা ভাঙিয়ে খুচরো দিয়ে দিচ্ছেন।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ১৪:৩৪
Share:

কলকাতার বাজারে খুচরোর সমস্যা হঠাৎ ম্যাজিকের মতো হাওয়া!

Advertisement

দোকান-বাজারই হোক বা বাস-অটো— খুচরো নিয়ে বিশেষ ঝামেলা আর হচ্ছে না। কেউ কোনও কটু কথা বলছেন না। বিরক্ত হচ্ছেন না। বিশেষ করে, খুচরো না থাকলে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার যে ‘ইতিহাস’ কলকাতার অটোচালকদের রয়েছে, তাঁরাও হাসিমুখে টাকা ভাঙিয়ে খুচরো দিয়ে দিচ্ছেন। অনেক সময়ে নিজেরাই যাত্রীদের কাছে বড় নোট চেয়ে হাসিমুখে ভাঙিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। যা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরাও।

হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন? ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, নোট বাতিলের পরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক লক্ষ লক্ষ টাকার পাঁচ ও দশ টাকার কয়েন বাজারে ছেড়েছে। ওই সময়ে সাধারণ মানুষের বাড়িতে জমানো কয়েনও বাজারে এসেছে। সেই সব কয়েনই হাতে হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে খুচরোর আকাল হঠাৎ করেই ‘ভ্যানিশ’। হাসি ফুটেছে সবার মুখে।

Advertisement

বাগুইআটির অমল বাগচী প্রতি দিন উল্টোডাঙা থেকে অটোয় বাড়ি ফেরেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন আর খুচরো নিয়ে সমস্যা নেই। দশ টাকার কয়েনই হোক বা নোট, আগে দেখলেই অটোচালকেরা আপত্তি করতেন। এখন দিলেই সঙ্গে সঙ্গে খুচরো পেয়ে যাচ্ছি।’’ গড়িয়াহাটের সুবিমল রায়ের অভিজ্ঞতা এর চেয়েও বিস্ময়কর। অটোচালক তাঁদের কাছ থেকে ১০ ও ২০ টাকার নোট চেয়ে নিয়েছেন। কারণ, খুচরোর চাপে নাকি তাঁর ব্যাগই ছিঁড়ে পড়ার উপক্রম।

অথচ, কিছু দিন আগেও শহরের চিত্রটা ছিল একেবারে উল্টো। খুচরো না দিলে যাত্রীদের হেনস্থা করা, অটো থেকে নামিয়ে দেওয়া, এমনকী খুচরো নিয়ে বচসার জেরে থানা-পুলিশ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক মাসে খুচরোর কারণে অশান্তি ও থানায় অভিযোগ দায়েরের ঘটনা ক’টা ঘটেছে, তা মনে করা শক্ত। কলকাতার বিভিন্ন রুটের অটোচালকেরা নির্দ্বিধায় বলছেন, তাঁদে কাছে খুচরো রয়েছে। তাই তাঁরা দিচ্ছেন। যত দিন থাকবে, তত দিন দিয়ে যাবেন।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তার কথায়, ‘‘মাঝে ১০ টাকার কয়েন কলকাতায় অচল হয়ে গিয়েছিল। কেউ নিচ্ছিলেন না। বিমুদ্রাকরণের পরে ১০ টাকার কয়েন এখন বাজারে সবাই নিচ্ছেন। এমনকী, ১০০ টাকা দাম ১০ টাকার কয়েনে মেটালেও দোকানদারেরা বিশেষ কিছু বলছেন না।’’

মাসখানেক আগেও অটোর যাত্রীরা অভিযোগ করে বলতেন, এক শ্রেণির অটোচালক যাত্রীদের কাছ থেকে খুচরো পয়সা আদায় করে পরে তা বাজারে বাটা দিয়ে দেন। তাঁরাও এখন বেশ বিপদে পড়েছেন। কারণ, খুচরোর আধিক্যে বাটা ব্যবসাতেই এখন মন্দা।

দমদম ক্যান্টনমেন্টের ওষুধ ব্যবসায়ী দীপঙ্কর সেনগুপ্তের কথায়, এখন এমন বহু ক্রেতা তাঁদের দোকানে আসছেন, যাঁরা সাতশো-আটশো টাকার ওষুধ কিনে পুরোটাই খুচরোয় দাম মেটাচ্ছেন। অথচ, কিছু দিন আগেও ছবিটা একেবারে উল্টো ছিল। দীপঙ্করবাবু জানালেন, তাঁর দোকানেই এখন হাজার পাঁচেক টাকার কয়েন জমে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন